উৎকর্ষের সন্ধানে: বাংলাদেশ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটার ১০টি ব্যবহার নিয়ে মানবিক রাষ্ট্রের ধারণা
এখনই সময়
The best time to plant a tree was 20 years ago. The second best time is NOW.
– Chinese proverb
প্রিন্ট কপি + (অনলাইন) পিডিএফ
হার্ডকপি পাওয়া যাচ্ছে ১. দারাজ, ২. রকমারি এবং ৩. নীলক্ষেতে।
সফটকপি পাওয়া যাচ্ছে পিডিএফ কপি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাংলায় সব বই
কোথায় যেতে চাই আমরা?
কয়েক হাজার বছরে মানব সভ্যতা এগিয়েছে অনেক। উৎকর্ষতা, অপটিমাইজেশন এবং দক্ষতা হচ্ছে এই শতকের মূল মন্ত্র। সেটার প্রয়োজনে এসে যোগ দিয়েছে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'। মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তার সাথে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্র না থাকলে পরবর্তী শতকে যাওয়া দুস্কর। সবার জন্য যুতসই শিক্ষা1, প্রযুক্তির সাথে মানবিক রাষ্ট্রের ধারণা, নতুন ড্রাগ ডিসকভারি, দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি, আরবান প্ল্যানিং, মাস ট্রানজিট সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, ড্যাসবোর্ডের সাহায্যে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা - ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো অনেকটাই যৌথ উদ্যোগ ডেটার সাহায্যে, এ মুহুর্তে। বিশেষ করে মানুষকে "এনাবল" করতে - তার স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে। তার জীবদ্দশায়। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনায় এসব কিছুই করা সম্ভব অল্প সময়ে। সেখানে আমরা পড়ে আছি অনেক পেছনে। অন্য দেশগুলো থেকে।
আগে যেই জিনিস করতে লাগতো কয়েক যুগ, সেটা এখন লাগছে কয়েক বছর। এই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কথাই ধরুন। আমাদের দেশে একটা পাসপোর্ট, কিংবা একটা ক্লিয়ারেন্স, নামজারী, দলিল ইত্যাদি বানাতে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস লাগলেও আমরা চেষ্টা করলে হাতের নাগালের প্রযুক্তি সেটাকে ডেলিভারি দিতে পারে কয়েক ঘন্টায়। সরকারি/বেসরকারি সার্ভিস ঘন্টায় নামিয়ে আনতে পারলে মানুষের এক জীবনেই অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রতিটা মানুষ অনেকগুলো স্বপ্ন নিয়ে জন্মায়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে একটা মানুষকে "এনাবল" করা সম্ভব, তার স্বপ্নের কাছে যেতে।
মানুষের আকাঙ্খার সেই মাসলো'র ত্বত্তের প্রাথমিক/মাধ্যমিক চাহিদা মেটাতে প্রযুক্তি রয়েছে আমাদের হাতের নাগালে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবহার ঠিকমতো করা গেলে এক জীবনেই অনেক কিছু করতে পারবে মানুষ। সেই 'দক্ষতা' এবং উৎকর্ষের সন্ধানে আপনাদের সাথে করে নেমেছি এই বইটাতে। একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন - মানুষের প্রাথমিক চাহিদা মিটে গেলে সেই একই মানুষ অনেক কাজ ফেরৎ দিতে পারেন মানব কল্যানে।
এখন আমরা হয়তোবা বাঁচি ৭০-৮০ বছর। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটা মানুষকে "এনাবল" করতে পারলে - আমরা দেশ হিসেবে যেতে পারতাম আরো দুরে। এখন বেসিক সার্ভিস ডেলিভারি (যেমন - নিজ এলাকায় বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি, পেনশন, জন্মনিবন্ধন ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেলিভারি) জায়গাগুলোতে সময় বাঁচিয়ে দিতে পারলে সেই মানুষটা তার স্বপ্নের কাজে সময় দিতে পারতো আরো বেশি। একটা মামলার রায় পেতে যতো দিন হারিয়ে যায় একটা মানুষের জীবন থেকে, সেই সময়টা নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেবে বর্তমান প্রযুক্তি। 'প্রযুক্তির সাথে মানুষের ক্ষমতায়ন' কাজের আউটপুট পেতে হলে প্রযুক্তির সেই দক্ষতা এবং উৎকর্ষের ধারণাতে যুক্ত হতে হবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। পাল্টাতে হবে আমাদের 'মাইন্ডসেট'।
সংজ্ঞা: egalitarian
believing in or based on the principle that all people are equal and deserve equal rights and opportunities.
যেমন -- "a fairer, more egalitarian society".
-- Dictionary
টেকনোলজিক্যাল জাস্টিস’ অর্থাৎ ‘প্রযুক্তিগত ন্যায়বিচার’
ইদানিংকালে ‘টেকনোলজিক্যাল জাস্টিস’ অর্থাৎ ‘প্রযুক্তিগত ন্যায়বিচার’ ধারনাটা চলছে বিশ্ব জুড়ে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিকভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে এবং সেই সাথে এই ধারনাটা আরও সমতাবাদী সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। একটা দেশে সবাই সবধরনের নাগরিক সুবিধা (ইগালিটারিয়ান ধারণা = পৃথিবীর সবাই সমান, তাই তাদের সুবিধাও সমান) পেলে অন্য দেশগুলোর নাগরিকদের কী হবে? বিশেষ করে, এখন প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক ‘অসাধারণ’ উন্নয়ন সব ধরনের সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করছে। তবে, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সুবিধাগুলো বিশ্বব্যাপী ‘অসমভাবে’ বিতরণ করা হয়েছে বললে ভুল হবে - কারণ, এখন যে কেউই সেই উদ্ভাবনাগুলোকে ব্যবহার করতে পারে এই ওপেনসোর্সের যুগে। বরং, এই প্রযুক্তিগুলোকে ঠিকমতো ব্যবহার না করায় - আমাদের সমাজে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিঘ্ন সৃষ্টি করছে যা আমাদের ভেতরের বৈষম্যকে আরও প্রশস্ত করছে।
এই বইয়ে, আমাদের বিশ্বব্যাপী সমাজে (আমরা এখন গ্লোবাল সিটিজেন 3), বিশেষত - দারিদ্র্য কমাতে ও টেকসই অগ্রগতির জন্য সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটা নতুন দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখাবো আমরা। উন্নত দেশগুলোর সব উদ্ভাবনার পেছনে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের 'বুদ্ধিমান' ডেটা ড্রিভেন সফটওয়্যার (প্রযুক্তি), যেগুলোর সবকিছুই 'ইন্টার-কানেক্টেড'। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। এধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়ে আছে আমাদের কাছে। এর পাশাপাশি, আমাদের সমাজের মধ্যে ‘প্রযুক্তিগত ন্যায়বিচার’ অর্থাৎ ‘টেকনোলজিক্যাল জাস্টিস’ ধারণাটা গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, মানুষের নতুন মাইন্ডসেট ঘিরে, ডেটা শেয়ারিংয়ের উৎকর্ষে। এই ধারনাটা আমি পেয়েছি ‘জি -২০’ দেশগুলোর পলিসি এজেন্ডা থেকে। তারা এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটা নীতি ও পদক্ষেপের প্রস্তাব দেয় যাতে 'জি-২০' দেশগুলো প্রযুক্তির এই অবদানকে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে রেখে সেটার একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারে। এই ধারনা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। কারণ, আমাদের সেই প্রযুক্তি আছে হাতের নাগালে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হাতের নাগালের প্রযুক্তি
প্রযুক্তির এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ধরনের ধারণা পাচ্ছিলাম গত এক দশক ধরে। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জিনিসটা যখন 'রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট' ধাপ পেরিয়ে চলে এসেছে 'গুরুতর' ব্যবহারিক পর্যায়ে তখন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' থেকে সুবিধা না নিতে পারলে আবারও পিছিয়ে পড়বো আমরা। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সফটওয়্যারের পেছনের প্রযুক্তি যেমন 'ডিপ লার্নিং', পাশাপাশি আমাদের হাতে এত বেশি ডাটা এসেছে সেটা থেকে প্রজ্ঞা না নিতে পারা অদক্ষতার মধ্যে পড়ে যায়। 'এনলাইটেন্ড' অর্থনীতিগুলোতে অদক্ষতা এখন শাস্তির পর্যায়ে পড়ে। আমাদের নীতিমালাও আছে তৈরি, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ।
এদিকে অনেক দেশ এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের কাছে ডাটা আছে, তারাই অনেককিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের অগোচরে। সেদিক থেকে আমরা কতদুরে সেটা নিয়েই আলাপ করবো একটা পর্যায়ে। বাংলাদেশের এতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে সার্ভিস ডেলিভারিতে ডাটা 'ড্রিভেন' হওয়া ছাড়া গতি নেই আমাদের। এতো অল্প জায়গায় এতো জনবলকে তাদের আকাঙ্খার দাম দিতে চাইলে কাজের প্রসেস অপটিমাইজেশন দরকার আগে শুরুতে।
ডাটা = 'স্ট্রাটেজিক' অ্যাসেট
ডাটাকে 'ডিক্লেয়ার' করতে হবে জাতীয় পর্যায়ে - 'স্ট্রাটেজিক' অ্যাসেট হিসেবে। পাবলিক ডাটাকে ওপেন "এপিআই", অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস দিয়ে যুক্ত করতে দিতে হবে সংস্থাগুলোর মধ্যে। 'প্রাইভেসী' ডাটার জন্য আছে আলাদা সমাধান। কারণ এই ডাটাই দেবে আমাদের মুক্তি। ব্যক্তিগত ডাটাকে সম্পূর্নভাবে উন্মুক্ত না করেই ব্যবহার করা যায় আমাদের সব ডাটা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারের জন্য আমাদের প্রথম ২ বছর (২০২২-২০২৩) দরকার পড়বে সরকারি বেসরকারি ডাটাসেটগুলোকে সংযুক্ত করতে। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে, সেগুলোর সমাধান আছে সামনে।
যে ১০টি জিনিস পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশকে (২০২২-২০২৪)
১০টা বিষয়
-
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, তিন বছরের টাইমলাইন (২০২২-২০২৪)
-
‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন
-
একীভূত সনাক্তকরণ ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশে 'আইডেন্টিফিকেশন'
-
দেশের নীতিনির্ধারণী ড্যাশবোর্ড
-
সরকারি সার্ভিসগুলোকে সহজীকরন
-
'সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী'র সুবিধা বন্টন ব্যবস্থাপনা
-
রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির বন্টন ব্যবস্থাপনা, 'ঋণাত্বক আয়কর’, এবং 'সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ধারণা
-
বুদ্ধিমান আয়কর পদ্ধতির ভবিষ্যত এবং অর্থ মন্ত্রনালয়ের 'পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট'
-
নীতিমালা তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
-
অভিযোজিত শিক্ষা ব্যবস্থা
১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতা
বাংলাদেশ একটা বিশাল ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের ওপর বসে আছে যেখানে জনসংখ্যা শুমারি বলছে ৬৬ শতাংশ জনবল কর্মক্ষম থাকবে ২০২০ থেকে। হিসেব বলছে জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ ১৫ বছরেরও কম এবং মাত্র ৮ শতাংশের বয়স ৬০ এর ওপরে। বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতিটিকে দেশের উন্নয়নের জন্য একটি ভাল সুযোগ হিসাবে দেখছেন এবং এর পাশাপাশি সরকারকে এই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর জন্য বলে আসছেন। এই 'উইন্ডো'টা হারানো উচিত হবে না আমাদের। এই সুযোগটা সেরকম থাকবেনা ১০-১৫ বছর 4 পরে।
একটা মানুষকে 'এনাবল' করতে হবে তার স্বপ্নের কাছে যেতে
বুঝতেই পারছেন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ/তরুনীরা 'অসম্ভব' সম্ভাবনাময়। আমার হাতের ডাটা সেটাই বলছে। এই গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। তবে এই অংশে বেকারত্ব বাড়ছে। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের অনেকেই দেশ ত্যাগ করছেন উন্নত এবং নিরাপদ জীবনের আশায়। তবে, তারা যাতে দেশে ফেরে - সেই নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে দরকার ডাটা'র ব্যবহার। নতুন কাজ তৈরিতে দরকার শিক্ষার কিছু পরিবর্তন, যেটা নিয়ে বিস্তর আলাপ করবো সামনে। ব্যাপারটা এরকম যে, রাষ্ট্র এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে - যাতে জনগণ তার জীবনের সব চাওয়ার কাছাকাছি যেতে পারে। সেটার জন্য সেই মানুষটাকে 'এনাবল' করতে যা করা প্রয়োজন সেটা করবে রাষ্ট্র।
দক্ষতা এবং অটোমেশন
The first rule of any technology used in a business is that automation applied to an efficient operation will magnify the efficiency. The second is that automation applied to an inefficient operation will magnify the inefficiency.
-- Bill Gates
এতো বিশাল জনগনের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষাকে মেটাতে বর্তমান প্রশাসনিক প্রসেসে জটিলতা বেড়েই চলেছে। এতো বড় জনগোষ্ঠীকে 'সরকারি সার্ভিস ডেলিভারি' মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে অটোমেশনের বিকল্প নেই। অটোমেশনের শুরুটা হবে একটা 'ইউনিফাইড সনাক্তকরণ' পদ্ধতিতে, যার অনেকটাই ঠিক হয়ে আসছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে। জমি/সম্পত্তি কেনাবেচা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স/ব্যবসা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রের এই পরিচয়পত্র কিছুটা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সার্ভিস ডেলিভারি অনেকটাই ঠিক হয়ে আসছে একটা সিস্টেম তৈরি হবার কারণে। যখন প্রতিটা নাগরিককে ঠিকমতো সনাক্ত করা যাবে তখন তাদের সব ধরনের সার্ভিস নিশ্চিত করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সময়ের প্রোডাক্টিভিটির কথা চিন্তা করে সার্ভিস ডেলিভারিতে সময় অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সরকারি সার্ভিস ডেলিভারি ঠিকমতো দেবার জন্য মানুষের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়তা নিতে হবে। যেই সার্ভিস ডেলিভারিতে আজ ১/২ মাস লাগছে - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সেই সার্ভিস ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব কয়েক ঘন্টায়। তবে, পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় অর্থাৎ ফুল অটোমেশনে মাইগ্রেট করার আগে মানুষ এবং যন্ত্রের সহযোগিতায় সেই ব্যাপারটিকে কয়েকদিনে নামানো সম্ভব - যখন বর্তমান সরকারি সেবা সহজিকরণ পদ্ধতিতে যাব। অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সাথে মিলালে এত বড় বিশাল জনসংখ্যাকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য মানুষের সঙ্গে যন্ত্রকে সংযুক্ত করতে হবে। যখন পদ্ধতিগুলো পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় চলে যাবে তখন অনেক কাজ ছাঁটাই হয়ে যাবে। এই অবস্থায় ছাঁটাইকৃত জনগণকে সেই দক্ষতার বিপরীতে ‘ডিউ- ডিলিজেন্স’ করে যত টাকা বেঁচে যাবে, সেই টাকা দিয়ে ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ পদ্ধতি চালু করা সম্ভব।
জনগনের আকাংখাকে ঠিকমতো 'ডেলিভারি' অথবা 'এনাবলার' হিসেবে সরকারকে কাজ করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন পুরানো মানসিকতার পরিবর্তন। শুধুমাত্র মুখে 'সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ' ব্যাপারটা সত্যিকারের ইমপ্লিমেন্টেশন আসবে এই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে। যেখানে 'ডিজিটাল সিগনেচার' প্রযুক্তির আইন থাকলেও সেটার ব্যবহার করতে পারা যায়নি 'কোভিড-১৯' মহামারীর সময়। ইলেকট্রনিক ট্রানজাকশনে সেকেন্ডে কোটি টাকা ট্রান্সফার করা গেলেও আমরা বৃদ্ধভাতা/পেনশনের কয়েকটা টাকা পাঠানোর জন্য মুখ লুকিয়েছি কাগজের ১২ স্তরের নথিতে। মানবিক দিক থেকেও দেখিনি প্রযুক্তিকে।
অথচ পাঠাও, বিকাশ, ভিসা, নগদের মতো ডিজিটাল টাকা ট্রান্সফারে আমরা বিশ্বাস করিনি। বর্তমানে পেনশনের সমস্যাটা আপডেট হয়েছে ইদানিং সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে। প্রযুক্তি সমস্যা নয়, সমস্যা মাইন্ডসেটে। সমস্যা দক্ষতায়। অফিসগুলোতে জনবলের সমস্যার কথা বলা হয় সার্ভিস ডেলিভারিতে। বরং চাহিদার তুলনায় জনবল বেশি, এবং এনালগ প্রসেস থেকে ডিজিটাল প্রসেসে ঠিকমতো মাইগ্রেট করতে না পারায় জটিলতা বেড়েই চলেছে। জনবলের বাহুল্য বাড়িয়েছে 'বায়াস', প্রসেসকে ধর্তব্যে আনিনি।
স্থানীয় সরকারের সাথে জনগনের যোগাযোগ মানে ইন্টারঅ্যাকশন হচ্ছে কাজ ঠিকমতো ডেলিভারি হবার চাবিকাঠি। মজার কথা হচ্ছে অন্যান্য দেশের সরকারের 'রিচ' বাড়াতে কমিয়ে এনেছে সরকারি অফিস। জনগণকে নিয়ে এসেছে মোবাইল অথবা ইন্টারনেটের সরকারি পোর্টালে। সবাইকে দিয়েছে একটা ইউনিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি যার মাধ্যমে সেই মানুষটা বলতে পারেন এই মানুষটা উনি নিজেই। জনগণ তাদের বিভিন্ন চাহিদা জানায় সিস্টেমকে। বাংলাদেশের এতো মানুষকে সার্ভিস দিতে গেলে লাগবে সঠিকভাবে ডিজাইন করা অটোমেশন। আর সেকারণে প্রয়োজন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা', এবং এখনই। সেটা নাহলে আমাদেরকে নির্ভর করতে হবে অন্য দেশের তৈরি 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'র সফটওয়্যারে।
'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' মানে মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে 'তথাকথিত' মুখোমুখি যুদ্ধ নয়, বরং এটা সমাজের একটা সক্ষমতা তৈরি করে দেবে যেখানে প্রাচুর্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসবে সবার মধ্যে। মানুষের নিরাপত্তা, সুশাসন, সুস্বাস্থ্য এবং প্রাণোচ্ছল সমাজ তৈরির পেছনে এর অবদান শুরু হয়ে গেছে এই দশকে। সরাসরি বললে, স্থানীয় উৎপাদন এবং সেটার সাপ্লাই চেইন অর্থাৎ সরবরাহকে বাজারের অনুকূলে এনে এটিকে ব্যয়-প্রতিযোগিতামূলক (খরচ কমিয়ে) লেভেলে নিয়ে এসে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' সিস্টেমগুলো আমাদের আরো নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করে দেবে। মানুষের কায়িক/মানসিক পরিশ্রম চলে যাবে যন্ত্রের কাছে। এর পাশাপাশি দেশগুলোর বৃহত্তর জাতীয় সুরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, মহামারী এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং কার্যকর 'রেজিলিয়েন্স' মানে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে দেবে।
এই বই থেকে কী আশা করছি?
-
নীতিনির্ধারকদের জন্য সহজ ভাষায় 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' এবং ডাটার ধারণা, কেন প্রয়োজন, বিশেষ করে বাংলাদেশে? কিভাবে 'ইমপ্লিমেন্ট' করা সম্ভব? সেটার একটা প্রাথমিক ধারণা।
-
একটা তিন বছরের ব্লু-প্রিন্ট (২০২১-২০২৩), যা অনুসরণ করলে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সার্ভিস ডেলিভারির কাতারে আনা সম্ভব। আর এই ব্যাপারটার জন্য ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি আছে ইতিমধ্যেই, দরকার প্রয়োজনীয় 'ইন্টিগ্রেশন'।
-
বাংলাদেশের মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এতো মানুষকে সেবা দিতে চাইলে সার্ভিস লেভেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ 'অটোমেশন' ছাড়া গতি নেই। একেকটা সেবায় মাস চলে গেলে জনগণকে 'এনাবল' করা কষ্টকর। জনগণ অর্থাৎ সেবাগ্রহিতাদের সময় কমিয়ে আনতে পারলে তাদের জীবনকালে অনেককিছুই করতে পারবেন তারা। সময় এখন বড় মাইলস্টোন, জীবনে অনেককিছু করতে চাইলে।
-
দেশের জনগণ তার বাসায় বসে সরকারি/বেসরকারি সার্ভিসগুলোর ডেলিভারি পাবেন ই-সার্ভিসের ভিত্তিতে। সেটার ভিত্তি হচ্ছে একটা 'একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি' এবং ডিজিটাল সিগনেচার (নেটওয়ার্কে আমি যে আমি সেটা প্রমান করার জন্য)। সেটার আলাপ করা হয়েছে বিশদভাবে, ভেতরে। 'এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস' অথবা 'ডাটাহাব' নিয়ে কাজ করার আলোকে প্রতিটা সরকারি এবং বেসরকারি সার্ভিস কোম্পানিগুলোকে এক ছাতার নিয়ে আসার ধারণা আসবে এখানে।
-
সরকারি সার্ভিসগুলোকে সহজীকরনে প্রসেস-ফ্লো সংকোচন, সয়ংক্রিয়ভাবে পারমিট, লাইসেন্স, অনাপত্তি পত্র প্রদানে ডাটার ব্যবহার। মানুষকে এই ধরনের 'সিদ্ধান্তের লুপ' থেকে বের করে আনার কর্মপন্থা।
-
একটা 'পার্সোনালাইজড' শিক্ষা পদ্ধতি প্ল্যাটফর্ম, অর্থাৎ 'অ্যাডাপটিভ লার্নিং' মানে অভিযোজিত শেখার প্রযুক্তি এবং কারিগরী শিক্ষা এবং ২১ শতকের দক্ষতার জন্য তৈরি করতে ডাটার ব্যবহার।
-
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নীতিমালা তৈরিতে ডাটার ব্যবহার - জনগণবান্ধব নীতিমালা তৈরিতে কিভাবে যুক্ত করবো জনগণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে?
-
ডাটাভিত্তিক ড্যাসবোর্ড, নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের গ্রহণ করার জন্য সাহায্যকারী 'পুরো দেশের একীভূত ড্যাশবোর্ড' তৈরিতে আগাম ধারণার প্রশাসন। পাশাপাশি সব ধরনের প্ল্যানিং, যেমন 'আরবান', গৃহায়ন প্ল্যানিং ইত্যাদির জন্য ড্যাশবোর্ড তৈরিতে ডাটা পাবো কোথায়? নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকা মানুষদের ঠিকমতো 'ভিজ্যুয়ালাইজেশন' দেয়া গেলে সম্ভব অনেককিছুই।
-
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা বন্টন ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুবিধা প্রদান। মানুষের স্পর্শ ছাড়াই ব্যাপারটা করা সম্ভব, তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন কমিটি। 'ঋণাত্বক আয়কর’, এবং সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ব্যাপারে কার্যকরী ধারণা।
-
অর্থনীতির জীবনীশক্তি কর ব্যবস্থাপনাকে ডাটা নির্ভর না করলে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত পৃথিবীর অনুপাতে সেই অনেক কমই থাকবে। কর বিভাগের সংস্কারের জন্য ডাটার ব্যবহার জরুরি। আয়কর ব্যবস্থাপনা হচ্ছে যেকোন দেশের 'লাইফলাইন' অর্থাৎ জীবনীশক্তি। অর্থ মন্ত্রনালয়ের 'পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট' এর জটিল ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দেয়া যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর।
-
উদীয়মান অর্থনীতিতে শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং কৃষি ভর্তুকি কিভাবে কোন খাতে এবং কোন নীতিমালায় যাচ্ছে সেই ভর্তুকির বন্টন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করার ব্যাপারে ডাটা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। ভর্তুকির বন্টন ব্যবস্থার অটোমেশন এবং কতো ভর্তুকির অনুপাতে কতো অর্জন তার পাবলিক ড্যাসবোর্ড তৈরি।
-
‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন, ডাটার ভবিষ্যৎ দেখার বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যবহার করে প্রশাসন জনগনের চাহিদা বুঝতে পারবে সমস্যা হবার আগেই। সেই প্রযুক্তিতে প্রতিদিন কতো সমস্যার সমাধান হচ্ছে সেটা আসবে পাবলিক ড্যাসবোর্ডে।
একীভূত আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট, 'ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার' - ব্লকচেইন
জাতিসংঘের 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য' অর্থাৎ 'সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল' ১৬.৯ বলছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে নিখরচায় জন্ম নিবন্ধকরণসহ বিশ্বের সকল নাগরিকের জন্য 'আইনী পরিচয়' দিতে হবে। তাদের ভাষ্যমতে, ব্যক্তিগত সনাক্তকরণের অ্যাক্সেস সর্বজনীন হতে হবে। রাষ্ট্রের এই সুবিধা দেবার ব্যাপারে কোন বৈষম্য করা যাবে না। ব্যক্তিগত সনাক্তকরণ অর্থ হচ্ছে সবাই সমাজে অন্তর্ভুক্ত, কেউ পেছনে পড়ে নেই - তাদের সবাইকে একই সুবিধা দেয়া হবে। এদিকে আমরা এগিয়ে আছি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিতে জনগনের 'সনাক্তকরণ' একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
প্রতিটা মানুষের একটা নিজস্ব স্বত্তা, সবাই যে আলাদা, তাদের আলাদা পরিচয় আছে সেটার বড় পরিমাপ হচ্ছে এধরনের সনাক্তকরণ পদ্ধতি। একটা হিসেবে দেখা গেছে, নাগরিকরা তাদের পরিচয় প্রমাণ করতে পারলে, দেশের জনগণ ক্ষমতায়িত হয় এবং তাদের জীবনে উন্নতি আসে। আইডি একটি বৈধ অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা কাজ এবং সমাজের বিভিন্ন পরিষেবাতে আরও ভাল 'অ্যাক্সেস' দিতে সক্ষম করে। নাগরিকরা যখন তাদেরকে সিস্টেমে সনাক্ত করাতে পারেন, সরকার তখন তাদের নীতিনির্ধারনী এবং উন্নয়নের অগ্রগতি পরিমাপ করতে একটা দক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং আসল 'কানেক্টেড' ডেটা তৈরি করতে পারে।
জনগনের 'সনাক্তকরণ' অর্থাৎ প্রতিটা নাগরিকের জন্য 'আইনী পরিচয়' ব্যাপারটি মানব বিকাশে জড়িত - বিশেষত: দারিদ্র্য হ্রাস, সবাইকে শিক্ষানীতির ভেতরে আনা, সবার জন্য স্বাস্থ্য এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সবাইকে একই ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা (বিশেষ ভাতা, ভর্তুকি, পেনশন, বিদেশ যাবার পাসপোর্ট, জননিরাপত্তা, ভোট দেবার অধিকার, ব্যবসার লাইসেন্স - ইত্যাদি) দেবার ক্ষেত্রে বিশাল ভুমিকা রাখছে। ব্যাপারটা শুধুমাত্র সরকারি সেবায় নয়, এই সনাক্তকরণ সুবিধা না থাকলে নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, অনেক সময় অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। কারণ তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ঋণ নেয়া, চাকরি পাওয়া, মোবাইল ফোন অথবা ইন্টারনেট সাবস্ক্রিপশন করতে গিয়ে সনাক্তকরণ পদ্ধতি না দেখাতে পারলে সেটার সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আগের সব ধারণাগুলোকে এক জায়গায় এনে - জনগণের দোরগোড়ায় সার্ভিস পৌঁছাতে গেলে সবচেয়ে প্রথমে যে জিনিসটি প্রয়োজন - জনগণের একটি একীভূত পরিচয় নিবন্ধন সার্ভিস অর্থাৎ ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। জনগণ সঠিকভাবে সরকারি অথবা বেসরকারি সার্ভিসগুলো ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা এর পাশাপাশি তার নিরাপত্তা, তার নিজস্ব তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা সরকারের একটা বড় দায়িত্ব। সেখানে আমরা বাংলাদেশের ৫টি ডাটাসেট ব্যবহার করে তৈরি করার প্রস্তাবনা থাকবে ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার তৈরিতে - যা আসলে ব্লকচেইন ভিত্তিক একটা একীভূত আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট।
সনাক্তকরণ পদ্ধতি কিভাবে এলো?
In 1793, French mathematician and philosopher Nicolas de Condorcet laid the foundations of "social mathematics." He studied the relationship between the individual and the collective to formalize the foundations of the democratic system.
He chose the mathematical term "Identity" to represent the algebraic concept of equality among citizens in terms of their legal rights and obligations: one nation and multiple individuals who, by "identically" accepting the rules of the community, attain the status of citizens.
আমাদের সনাক্তকরণ সিস্টেম অনেকগুলো এবং সবগুলো আলাদা করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে একটা ফাউন্ডেশন সিস্টেম লাগবে সবকিছুকে একীভূত করতে। আমার মতামত হচ্ছে - আমাদের অনেকগুলো সনাক্তকরণ পদ্ধতি থাকলেও সেটার একটা ফাউন্ডেশন আসতে পারে 'জাতীয় পরিচয়পত্র' থেকে। তবে সেটা আসতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ব্যানারে। সেই আলাপগুলো করেছি ভেতরে।
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অর্থাৎ ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’
একটা দেশের বয়স যখন বাড়তে থাকে তখন সেই দেশটা আস্তে আস্তে জনকল্যাণমুখী কাজে মনোযোগ দেয়। এক কথায় বলতে গেলে দেশটা তখন মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত হবার জন্য যেটা দরকার সে ধরনের কৌশলপত্র তৈরি এবং সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করে। কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রে দরিদ্র জনসাধারণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদান রাষ্ট্রের একটি আবশ্যকীয় কর্মসূচি। ১৯৭২ সালে যখন আমাদের সংবিধানের কার্যকারিতা শুরু হয়, তখনই ১৫–এর ঘ এ সামাজিক নিরাপত্তার (সোশ্যাল সিকিউরিটি) সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটাকে বাজেটের সাথে মেলালে সেটা ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ হয়। এই টাকা সুবিধাভোগীদের কাছে কিভাবে পৌঁছাবে? এই বিশাল মহাযজ্ঞ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। দরকার 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'র।
ভর্তুকি, 'ঋণাত্বক আয়কর’, এবং সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের টাকাটা কিভাবে পাবেন ভোক্তা?
ভোক্তাকে সরাসরি ভর্তুকি প্রদানের ধারণাটা নতুন নয়। উদাহরণ হিসেবে বলছি, যিনি বিদ্যুতের বিল ভর্তুকি পাবেন, তাকে শনাক্ত করে ভর্তুকি পৌঁছানোটা একটা বড় সমস্যা ছিল আগে। তবে এ ধরনের সমস্যাগুলোকে মিটিয়ে আসছে উন্নতদেশগুলো বহু বছর ধরে। বিদ্যুৎ জেনারেশনে অর্থাৎ উৎপাদনে ভর্তুকি না দিয়ে যারা সত্যিকারের ভর্তুকি পাবার যোগ্য তাদেরকে ঠিকমতো সনাক্ত করে ভর্তুকির প্রাপ্য টাকাটা তাদের একাউন্টে পৌছে দেওয়া একটা দক্ষ পদ্ধতি। ভর্তুকি বন্টন নীতিমালা এবং তার ব্যবস্থাপনা তৈরি সম্ভব ডাটার সাহায্যে। সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ব্যাপারটা আসবে এর সাথেই। সেটা মেটানো সম্ভব একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি দিয়ে। এর পাশাপাশি, 'ঋণাত্বক আয়কর’ ব্যাপারটা শুরু করা যেতে পারে, যার ফলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের নিচের উপার্জনকারীরা কর পরিশোধের পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে জীবন নির্বাহ করার জন্য পরিপূরক খরচ পাবেন।
২১ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থা, অ্যাবিলিটি গ্রুপিং এবং ‘পার্সোনালাইজড’ শিক্ষা
আমি 'প্রযুক্তি কী করতে পারছে' এবং 'বর্তমান স্কুলিং সিস্টেম'কে মুখোমুখি দাড়া করাতে চাচ্ছি না। বরং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। একটা হাইব্রিড মডেল, যেখানে শিক্ষকের টুল হিসেবে কাজ করবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ঐতিহাসিকভাবে নতুন প্রযুক্তি নেবার ব্যাপারে অনেক ধীরগতি সম্পন্ন - সেখানে উদ্ভাবনা আনতে হবে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো, ব্যানবেইস এর ‘এস্টাবলিশমেন্ট অফ ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (IEIMS) প্রকল্প দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি করার ব্যাপারে সফটওয়্যার এর কাজ চলছে।
‘অ্যাবিলিটি গ্রুপিং’ এর পেছনে যে কারণ রয়েছে; কিছু কিছু শিক্ষার্থী অনেক দ্রুত শিখতে পারে - সেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বেশি সহযোগিতা না পেলে সেই লেভেলে আসতে পারে না। একই ক্লাসে যখন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদার কথা প্রয়োজনে আসে, সে কারণে অনেক স্কুল এক ধরনের ট্র্যাকিং পদ্ধতি চালু করে - যার মাধ্যমে বিষয় ধরে আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের গ্রুপিং করা যায়। এর পাশাপাশি 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' ব্যবহার করে সবার জন্য আলাদাভাবে ‘পার্সোনালাইজড’ শিক্ষা দেয়া সম্ভব সবাইকে 'ট্র্যাকিং' করে। সবাই সব বিষয়ে ভালো করবে না, আর সেজন্যই কে কোথায় ভালো সেটা বের করতে হবে স্কুলের শুরুতে।
‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন
ডাটার ভবিষ্যৎ দেখার বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যবহার করে প্রশাসন এক ধরনের ‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন তৈরি করতে পারে। মানুষ কালকে অর্থাৎ সামনের মাসগুলোতে যেই সমস্যাগুলোতে পড়তে পারেন সেটা যদি আগেভাগে সমাধান করা যায় তাহলে কেমন হয়? সেই প্রশাসনকে মানুষ ভালো না বেসে যাবে কোথায়? ডাটাকে ঠিকভাবে অ্যানালাইসিস অর্থাৎ নিরীক্ষণ করলে সামনে কি ঘটতে পারে সেটা নিয়ে কাজ করছে অনেক দেশের প্রশাসন।
সামনের ঘটনাকে আগে থেকে দেখা
এই বিষয়টা নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা চালু আছে, তবে ২০০৬ সালে গড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'ইন্টেলিজেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস অ্যাকটিভিটি'র (আইআরপা) কাজগুলো অবিশ্বাস্য ধরনের 'ফিউচার-প্রুফ'। মনে আছে 'ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ এজেন্সী (ডারপা) এর কথা - যারা ইন্টারনেট বানিয়েছিল? একে 'আইআরপা'কে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা অধিদপ্তরের সাথে করে। তাদের একটা প্রোগ্রাম, 'সেইজ' - 'সিনারজিস্টিক অ্যান্টিসিপেশন অফ জিওপলিটিকাল ইভেন্টস' এর কাজ হচ্ছে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোকে আগে থেকে প্রেডিক্ট করা যাতে সেটাকে ঘটার আগেই আটকাতে পারে। যেমন, ৯/১১ এর মতো ঘটনা।
ব্যাপারটাকে ঠিকমতো বুঝতে - অনেকগুলো কম্পিটিশন হয়েছে বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলোর সাথে। সেটাকে তারা বলছে 'হাইব্রিড ফোরকাস্টিং কম্পিটিশন'। এই ফোরকাস্টিংয়ে মানুষও কাজ করবে সঙ্গে। সেধরনের কাজ সম্ভব এখানেও। একটা লঞ্চ দুর্ঘটনা অথবা বন্যাকে এড়ানো গেলে অনেক অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আমরা কমাতে পারি। অথবা রিখটার ৬ স্কেলে কয়টা ভূমিকম্প হতে পারে সামনের মাসে? এটাকে 'বেস্ট ইফোর্ট' হিসেবে বলতে পারি, চেষ্টা করতে শুরু করা। তবে সময়ের সাথে সাথে এই মডেলগুলো আরো 'অ্যাক্যুরেসি' পাবে।
মহামারী এবং প্রযুক্তির ব্যবহার
এটা ঠিক যে এই মহামারী আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে দেশীয় রিসোর্সের ব্যবহার ‘অপটিমাইজেশনের’ ব্যাপারে। যখন মহামারী বাড়াছিল তখন জনগণ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার এবং স্থানীয় সরকারের কাছে কিছু বুনিয়াদী মানে ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন তুলেছিল। আমাদের কাছে কি প্রয়োজনীয় হসপিটালের বেড আছে? দরকারি মেডিকেল সাপ্লাই এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় জনবল এই মহামারীকে সাপোর্ট দিতে পারবে কিনা? যেহেতু আমাদের দেশ খাদ্যশস্যের ব্যাপারে কিছু দেশের উপর নির্ভরশীল - সেকারণে প্রশ্ন থাকতে পারে - আমাদের খাদ্যশস্য ফুরিয়ে যাবে কিনা?
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো (ধরুন, পোশাক শিল্প) জিজ্ঞাসা করছিল তারা তাদের কর্মচারীদের চাকরিতে রাখতে পারবে কিনা? সরকার এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে কিনা? এধরনের হাজারো প্রশ্নের মধ্যে সরকারকে নিজেকে চালানোর মত যথেষ্ট রিসোর্স - যেমন পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন চালু রাখা, ট্রেন সার্ভিস, পোস্টাল সার্ভিস চালু রাখার পাশাপাশি খাদ্যশস্যের সাপ্লাই চেইন ঠিকমত কাজ করছে কিনা তার ওপর নজরদারি রাখা, বর্জ্য ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে স্কুলগুলো কখন খোলা ঠিক হবে সেগুলো নিয়ে সুচারুভাবে কাজ করতে গেলে শুরুতেই দরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কোভিড-১৯ এর সময় প্রতিটা সরকারের দক্ষতার একটা পরীক্ষা দেখেছি বিভিন্ন সেক্টরে। আমাদের দেশে অনেক সেক্টরে ঠিক সেরকম 'পারফর্ম' না করতে পারলেও ডাটার ক্ষমতা দেখেছি নিজের চোখে। সরকারি/বেসরকারি অনেক সংস্থার ডাটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম ডাটার 'ইন্টিগ্রিটি'র কতোটা দরকার। গার্বেজ ইন, গার্বেজ আউট। আমাদের সিস্টেম ধরে ডাটার ভুল ঠিক করে আগানো কষ্টকর। এই সময়ে অল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পদ দিয়েই কাজ ডেলিভারি করতে হয়েছে আমাদের। আমাদের মতো দেশে 'কন্টাক্ট ট্রেসিং'/হাসপাতালের 'অকুপ্যান্সি' অ্যাপ্লিকেশন কতোটুকু কাজ করবে সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে, সেটা একটা হিমবাহের অগ্রভাগ মাত্র। এই সময়টাতে ডাটার কথা বলার ধরণ দেখে আমি অবাক হয়েছি বটে!
বুদ্ধিমান আয়কর পদ্ধতির ভবিষ্যত এবং অর্থ মন্ত্রনালয়ের 'পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট'
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে সময়ের সাথে। পেছনের কিছু ডাটা দেখি। আমাদের ২০০১-২০১০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৬% থেকে বেড়ে ২০১১-২০১৯ সালে এসে দাড়ায় ৬.৯%, যা আশেপাশের অনেক দেশের থেকে ভালো। এর মধ্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ২০১১-২০১৯ সময়কালে বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধিতে দারিদ্র্যতা ৪৮.৯% থেকে কমিয়ে ২০.৫% এ দাড়ায়। এর পাশাপাশি চরম দারিদ্র্য ৩৪.৩% থেকে কমেছে ১০.৫ শতাংশে। তবে যেটা বোঝা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত এবং দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রয়োজন দেশের ভেতর থেকে। দেশের এই সীমিত আয় (বিশেষত: প্রত্যক্ষ কর থেকে) নিজেদের অবকাঠামো তৈরি এবং সামাজিক খাতের জন্য যৎপরনাস্তি অর্থাৎ 'যারপরনাই' অপর্যাপ্ত। আপনি জেনে অবাক হবেন, আমাদের যতো টাকা কর আদায় হয় যা জিডিপির ৯% এর চেয়ে কম (আয়করের ২%), যা বিশ্বের সর্বনিম্নতমের মধ্যে একটি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে ‘এপিআই’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি তাদের ডাটার উপর নির্ভরতা। তবে, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের ওপর ‘স্ট্রেনদেনিং দা পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি’র উপর ডকুমেন্টগুলো পড়তে গিয়ে এই সার্ভিস ডেলিভারী নিয়ে অনেক ধারণা হয়েছে। কাজের ঝামেলা এড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের অর্থের হিসেবের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাতে পারে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে (ক) আর্থিক অপরাধ রোধ [মানি লন্ডারিং ইত্যাদি] ও দুর্নীতির পূর্বাভাস (খ) সরকারি কেনাকাটায় টাকা সাশ্রয় (গ) সরকারী ব্যয় হ্রাস করার সুযোগগুলো চিহ্নিত করে নীতিনির্ধারকদের জানানো এবং (ঘ) পাবলিক সেক্টরের অডিট অর্থাৎ নিরীক্ষণের জন্য অসঙ্গতিগুলি সনাক্ত করা এখন সময়ের ব্যাপার।
সরকারি কেনাকাটা
AI has the potential to not only streamline procurement processes, but to transform them – saving time and money.
-- How AI can help governments manage their money better, Ernst & Young Global Limited
এ অবস্থায় আমাদের দরকার একটি দক্ষ, মানুষের মতো বুদ্ধিমান, 'প্রসেস ড্রিভেন' এবং স্বচ্ছ 'পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট' এবং কর ব্যবস্থা - যা সামগ্রিক প্রশাসনের জবাবদিহিতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সংস্থান অর্থাৎ 'রিসোর্স মোবিলাইজেশন' সহায়তা করতে পারবে। এখানে সরকারের 'পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট' এবং আয়কর সংস্থার কাজ নিয়ে আলোচনা করবো।
নীতিমালা তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রশাসনের পক্ষে একটা নীতিমালা তৈরি করা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্তমানে যে ধরনের নীতিমালা গুলো তৈরি করা হচ্ছে সেখানে টাটা থেকে ইনপুট না নিলে সে ধরনের নীতিমালাটি শুরু থেকেই সমস্যায় পড়তে পারে। সেকারণে বহুল প্রচলিত নীতিমালা তৈরির যে ধরনের ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে যেমন পলিসি সাইকেল সেগুলো পুরোটাই ডাটা নির্ভর। একটা নীতিমালা তৈরি করার পরে সেটা বাস্তবে ঠিকমতো কাজ করবে কিনা, এই ধরনের সিমুলেশন করার জন্য প্রয়োজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমার ৭ বছরের অভিজ্ঞতায় টেলিযোগাযোগ বাজার নিয়ে কাজ করার সময় দরকারি নীতিমালা, বিধি, এবং পরিচালন সংক্রান্ত নির্দেশনা তৈরি করতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ, গ্রাহকস্বার্থ এবং পুরো বাংলাদশ টেলিযোগাযোগ বাজারে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সমতল ভূমি বজায় রাখার জন্য ডাটার ক্ষমতা দেখেছি। সরকার যেখানে একাধারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার 'নিয়ন্ত্রক' এবং ব্যবহারকারী, সেখানে এর জন্য একটা 'বাস্তব' নীতিমালা জরুরি।
কেন মানুষ বুদ্ধিমান যন্ত্র চায়?
শত বছর ধরে ইন্টেলিজেন্ট মেশিনের খোঁজে মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা দেখছি অনেক কিছু। আয়রনম্যানের জার্ভিস, টার্মিনেটর, নাইট রাইডারের ‘কিট’ পার্সোনালিটিগুলোর প্রতি আমাদের ব্যাকুলতা অথবা উৎসুক ভাব একটা পাওয়ারফুল আইডিয়া। যন্ত্র মানুষের মতো চিন্তা করতে পারছে কি পারছে না অথবা চিন্তা করতে পারার মতো যন্ত্র তৈরি হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটা থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে মানুষ হাল ছাড়ছে না এই আইডিয়া থেকে।
'স্পেশালাইজড' কাজে যন্ত্র সেরা
সামনে বড় বড় সমস্যা সমাধানে যেমন রোগ নিরাময়ে, ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, গ্যালাক্সি জয়ে আমাদের পাশে দরকার ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমগুলো। মানুষের দরকার নিজের প্রয়োজনে। চিন্তা করুন, পুরো পৃথিবীর বিজনেস ট্রানজাকশনগুলোর বেশির ভাগ চলছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। গত বছরের আলিএক্সপ্রেসের ১১:১১ ফেস্টিভ্যালে প্রথম ৬৮ সেকেন্ডে বিক্রি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। পরের হিসাব ইতিহাস। এর মানে হচ্ছে, এত ক্রেডিট কার্ড ডেটা প্রসেসিং করে ‘ফ্রড ডিটেকশন’ সম্ভব নয় হাজারো মানুষের পক্ষে। সাহায্য নিতে হবে ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমের।
বাংলাদেশ প্রস্তাবনা, কোথায় যাবো আমরা?
পুরো বই ধরে নতুন এক প্রযুক্তিকে কিভাবে আমাদের দেশের সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সব সার্ভিস ডেলিভারিকে দক্ষতার সাথে ইন্টিগ্রেশন করা যায় সেগুলো নিয়ে আলাপ করবো। এভাবে সামনের ২০ বছরের ডেভেলপমেন্ট কাজ ডেলিভারি করা যাবে সামনের ৩ (২০২২-২০২৪) বছরে। বইয়ের পৃষ্ঠার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে শুধুমাত্র ১. বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ২. ডাটা নির্ভর শিক্ষা, ৩. ডাটা থেকে নীতিমালা তৈরি ৪. যুতসই সনাক্তকরণ সিস্টেম, ৫. দেশের নীতিনির্ধারণী ড্যাশবোর্ড, ৬. আগাম ধারণার প্রশাসন, ৭. সরকারি সার্ভিসগুলোকে সহজীকরন, ৮. ভর্তুকির বন্টন ব্যবস্থা, ৯. জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ করবো ভেতরে। সাইডলাইন হিসেবে সরকারের এজেন্সী স্পেসিফিক ড্যাসবোর্ড, ডাটা দিয়ে ‘আরবান’ প্ল্যানিং এবং টাকা খরচের ড্যাসবোর্ড নিয়ে আসবো কিছু কিছু অংশে। ‘কী আশা করছি এই বই থেকে’ সেই অংশে ‘এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস’ অথবা ‘ডাটাহাব’ নিয়ে সংস্থাগুলোর ভেতরে আন্তসংযোগের কাজ করার ‘ইউনিফিকেশন’ করার জন্য দরকার প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশীপ। ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ একটা দরকারি কম্পোনেন্ট হবে ‘ভবিষ্যত’ প্রেডিকশনে। নীতিমালা তৈরিতে আসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আগামী সংস্করণে আসবো আমার প্রিয় দুটো বিষয় নিয়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে (ক) বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থার সংস্কার, মানবিক বিচার-ব্যবস্থা এবং (খ) বাংলাদেশের স্বাস্থ্য (সবার জন্য স্বাস্থ্য) ব্যবস্থাপনা যুক্ত হবে ভবিষ্যত সংস্করণে।
খেয়াল করুন
এই বইয়ে ব্যবহৃত সব তথ্য পাবলিক ডোমেইন থেকে নেয়া। কোন স্পর্শকাতর তথ্য নেই এখানে। নিজে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমান সিস্টেমের সমালোচনা না করে কিভাবে ডাটা থেকে ইনপুট নিয়ে একটা একীভূত সিস্টেম তৈরি করা যায় সেটার আলাপ করছি এখানে। এখানে সরকার অর্থাৎ পৃথিবীর সামগ্রিক সরকারগুলোর সমস্যা নিয়েই আলাপ করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ এসেছে একেকটা সিস্টেম ধরে।
সময়সীমা: ২০১৯-২০২১।
'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' নিয়ে বাংলায় এ পর্যন্ত যা কাজ করেছি সেটার একটা বুকমার্ক সাইট পাবেন এখানে যা আসলে https://aiwithr.github.io/। এর পাশাপাশি, হাজারো প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে। বইটার ব্যাপারে মতামত জানাতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপ (+8801713095767) নম্বরে।
-
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের মধ্যে 'গুনগত শিক্ষা' এবং 'শালীন কাজ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি'র সাথে শিক্ষা যোগসুত্র হিসেবে কাজ করছে। তাই শিক্ষা এই বইয়ে প্রাধান্য পেয়েছে। এর পাশাপাশি 'বৈষম্য হ্রাস' এবং 'বিচারের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান' এর জন্য শিক্ষা, বিচারিক ব্যবস্থা অতি প্রয়োজনীয় অংশ। ↩
-
উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ইন্টারনেটে মানুষের মুখ দিয়ে সার্চ করলে সাদা চামড়ার মুখ বেশি আসে। কারণ এই ডাটা দিয়েই ট্রেনিং হয়েছে বেশি। কালো চামড়ার মানুষের চেহারা দিলে সেটা ঠিকমতো ক্যাটেগরিতে ফেলতে পারে না। ফলে মেশিনের বায়াস হবার সম্ভাবনা থাকে, একটা গোষ্ঠির ডাটা কম থাকাতে। এ ধরনের 'বায়াস' সামনে আলাপ করবো। ↩
-
পৃথিবীর অনেক দেশেই একীভূত সনাক্তকরণ সিস্টেম দেখে মনে হয়েছে যে ডিজিটাল সিগনেচার অংশকে কানেক্ট না করলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। ↩
-
আমার কাছে প্রচুর ডাটা থাকলেও সেটাকে ব্যবহার করছি না, গদ্যের যাতে ছন্দপতন না হয়। ↩
-
গ্লোবালাইজেশনের ইফেক্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সেভাবে, আমাদের দেশে কিছু ঘটলে সেটা নিয়ে অন্য দেশের মানুষ কথা বলছেন। ↩