অটোমেশন, বুদ্ধিমান সফটওয়্যার = কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
সবাই সফটওয়্যার কোম্পানি
Software is also eating much of the value chain of industries that are widely viewed as primarily existing in the physical world.
-- Marc Andreessen
সফটওয়্যার ইজ ইটিং দ্য ওয়ার্ল্ড
২০১১ সালের কথা। কথাটা বলেছিলেন নেটস্কেপের কো-ফাউন্ডার এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মার্ক অ্যান্ড্রিসেন। "সফটওয়্যার ইজ ইটিং দ্য ওয়ার্ল্ড।" কারণ উনি বুঝেছিলেন একসময় সবকিছুই গিলে ফেলবে সফটওয়্যার। আর তাই উনি ইনভেস্টমেন্ট করেছিলেন পৃথিবীর সব বড় বড় "সফটওয়্যার" কোম্পানিগুলোতে। উনি ধারণা করছিলেন একটা বিরাট "শিফট" হবে হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি থেকে "সফটওয়্যারে"। উনি দেখছিলেন "আইবিএম" নয়, বরং সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে মাইক্রোসফট চালাচ্ছিলো পৃথিবী। ওই প্রজ্ঞার কারণে উনার একান্ত ব্যক্তিগত নেট আয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার।
আমি নিজের সরকারি এবং আন্তর্জাতিক অনেকগুলো প্রজেক্টে দেখছি সফটওয়্যারের কারুকাজ। আজকে হার্ডওয়্যারের দাম সবাই জানে, কিন্তু সফটওয়্যারের দামই "ডিকটেট" করে প্রজেক্টের পুরো দাম। সার্ভিস সেক্টরে কোন প্রজেক্ট ২ হাজার কোটি টাকা হলে সেটার ১৫শো কোটি টাকা সফটওয়্যারে গেলে অবাক হবো না আমি। সেটাই মেধাস্বত্ব। সফটওয়্যারের দামের কাছে হার্ডওয়্যারের দাম কিছু নয়। এখন কেউ হার্ডওয়্যার কেনে না, কেনে সল্যুশন।
আর বুদ্ধিমান দেশগুলো কেনে ক্লাউড সার্ভিস। হার্ডওয়্যার কেনার চিন্তাও আনে না মাথায়। কে ম্যানেজ করবে ওই হার্ডওয়্যার - দিনের পর দিন? প্রজ্ঞাসম্পন্ন সরকারগুলো ডাটাসেন্টার ম্যানেজমেন্ট ছেড়ে দিয়েছে প্রাইভেট সেক্টরের কাছে। সরকারের দরকার ডাটা থেকে প্রজ্ঞা, দেশ চালাতে - সেটা পেলে ছোট করে নিয়ে আসা যায় সরকারকে।
সবাই এখন সফটওয়্যার কোম্পানি
আসলেই তাই। পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি এবং সরকারি সার্ভিসগুলো চলে গিয়েছে সফটওয়্যারে। সার্ভিস আর প্রোডাক্ট হয়ে গেছে ইন্টারনেটভিত্তিক। সনাতন ব্যাংকিং এর অনেকাংশ গিলে ফেলেছে "বিকাশ"। অবাক হবেন না, বিকাশ কিন্তু একটা উঁচুদরের সফটওয়্যার কোম্পানি। "পেপ্যাল" খেয়ে ফেলেছে পৃথিবীর কেনাকাটার মধ্যস্বত্বভোগীদের। ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানিগুলোকে খেয়ে ফেলবে "পাঠাও" আর "উবার"। বহু আগেই ট্রাভেল এজেন্টদের খেয়ে ফেলেছে এক্সপেডিয়া, বুকিং.কম আর প্রাইসলাইন নামের সফটওয়্যার কোম্পানি। সফটওয়্যার কোম্পানি "এয়ারবিএনবি" মারাত্মকভাবে কোপ মেরেছে হোটেল ব্যবসায়। নেটফ্লিক্স খেয়ে ফেলছে সিনেমা ব্যবসা। দোকানপাট খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে অ্যামাজন। শোরুম, ইনভেন্টরি খরচকে নামিয়ে কম দামে (ইকোনমি অফ স্কেলে) জিনিসপত্র দিতে পারছে ইভ্য়ালি, আলিবাবা। রেস্টুরেন্টের হিস্যা নিয়ে নিচ্ছে ফুডপান্ডা, হাংগ্রী-নাকি। ঠিক ধরেছেন। সফটওয়্যার কোম্পানি এরা। ফেইসবুক মেসেন্জার আর উইচ্যাটের মতো একীভূত সার্ভিস আবার খেয়ে ফেলতে চাচ্ছে বাকিদের। কী হবে সামনে?
২০১৮ সালে অ্যাপলের অ্যাপ-স্টোর আয় করেছিলো ৪০ বিলিয়ন ডলার, এর জন্মের ১০ বছরের মধ্যে। মোবাইলের এই ছোট্ট ছোট্ট অ্যাপ, তাতেই কী অবস্থা! অনেকগুলো ফ্রী, বাকিগুলো শুরু মাত্র ৯৯ সেন্ট, সেখান থেকে এই আয়, ভাবা যায়? হোয়াটসঅ্যাপ সফটওয়্যারকে কিনতে ফেসবুককে খরচ করতে হয়েছিল বাংলাদেশের প্রায় বাজেটের সমান ওই সময়ে। অথচ, সেই সময়ে কোম্পানিটা চালাচ্ছিল মাত্র ৩০ জন জনবল দিয়ে। এর মানে হচ্ছে সফটওয়্যার ইজ টেকিং ওভার। এতো হাজার মানুষ প্রয়োজন নেই সরকারি এবং বেসরকারি অফিসগুলো চালাতে। তাহলে এই কাজগুলো যাবে কোথায়? মানুষ যতো না 'গায়েগতরে' খাটাখাটির চাকরি হারাবে তার থেকে বেশি চাকরি জেনারেট করবে এই অটোমেশন, ক্রিয়েটিভ অংশে। ক্রিটিকাল থিঙ্কিং, কমিউনিকেশন, সোশ্যাল স্কিল, প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে নতুন কাজে মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না এমুহুর্তে।
সফটওয়্যার এবং ব্যবস্থাপনা
Where we once managed software in the same way we ran our businesses, now we need to manage our businesses in the same way we manage our software.
-- Jeff Gothelf and Josh Seiden, Sense and Respond
সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরে প্রচুর কেনাকাটায় একটা বড় অংশ থাকে সফটওয়্যারে। সেখানে আমরা সফটওয়্যার না বুঝলে বাংলাদেশকে কিনতে হবে সফটওয়্যার বাইরে থেকে। চড়া মূল্যে। আমি সেটা দেখছি নিজের চোখে। অনেক দেশ এখন চলছে পুরো সফটওয়্যারে। এন্ড টু এন্ড। আমাদেরকে বুঝতে হবে সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট। এখন অনেক দেশের পুরো ব্যবস্থাপনা চলে গেছে সফটওয়্যারে। সেটা একটা দেশের বর্ডার কন্ট্রোল পার হলেই বুঝবেন। বাইরের দেশের নাগরিক হয়ে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞাসা করুন আপনার ওই দেশি বন্ধুকে। সব সফটওয়্যারের খেলা, জনগনকে ভালো সার্ভিস ডেলিভারির জন্য। সরকারি সব সার্ভিস এখন পাওয়া যায় বাসায় বসে। পাশাপাশি বহু সরকারি অফিসের জায়গায় বসছে কিয়স্ক। যতো কম মানুষের ইন্টারঅ্যাকশন, ততো কম বায়াস এবং দুর্নীতি। তবে শুরুতে দরকার একটা ভালো সনাক্তকরণ পদ্ধতি, প্রতিটা জনগনের জন্য। এটা ঠিক যে আমাদের একটা ভালো সনাক্তকরণ পদ্ধতি আছে, যাকে ব্যবহার করতে হবে সব জায়গায়, যেমন হেলথকার্ড হিসেবে।
বুদ্ধিমান সফটওয়্যার = কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কেমন হয় সফটওয়্যার যদি নিজেই তার প্যারামিটার ঠিক করে নেয়? সেটা কী সম্ভব? আর সেকারণে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমি নিজেই চাইনা মানুষ আরেক মানুষের ড্রাইভারগিরি করুক। সেলফ ড্রাইভিং কার নিজের কাঁধে নিয়ে নেবে এই অমানবিক কাজ। সেটাও কিন্তু সফটওয়্যার। তবে, হার্ডকোডেড সফটওয়্যার নয়। আমরা শুধুমাত্র প্রোগ্রাম করে একটা গাড়ি নামাতে পারবো রাস্তায়? কি হবে যখন ধারণার বাইরের জিনিসপত্র হাজির হবে গাড়ির সামনে? গাড়ি কি বুঝতে পারবে কোনটাকে সামান্য আঘাত করা যাবে, আর কোনটাকে একেবারেই না? এক্সপ্লিসিট প্রোগ্রামিং দিয়ে যেভাবে সেল্ফ ড্রাইভিং কার চালানো যাবে না, সেখানে রাস্তার ডেটা ডিকটেট করবে গাড়ি কিভাবে চলবে। রাস্তার ডেটাকে চেনাবে কে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
এখন আসি, আসল কথায়। ভয় পাবেন না। হাজারো বিজনেস খেয়ে ফেলা সফটওয়্যারকে খেয়ে ফেলবে কে? ঠিক ধরেছেন। "এআই"। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যার শুরুটা ডাটা দিয়ে। অনেক "সাইন" পাচ্ছি হাতেনাতে। আর মাত্র পাঁচ বছর। আসলেই তাই। কেন? আমাকে প্রচুর "এন্ড টু এন্ড" সল্যুশন দেখতে হয় দেশ বিদেশে। তিন বছর আগে ব্যাপারটা "বাজওয়ার্ড" মনে হলেও এখন ব্যাপারটা আর "খেলো" নেই। সবাই এই জিনিসটা থেকে হাতেনাতে ফলাফল পাচ্ছেন বলে এর এডপ্টশন রেট অনেক ভালো।
সফটওয়্যারের কাঁচামাল কী?
ডাটা। এবং ডাটা।