অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং সিস্টেম - কী বলছেন সবাই?
ভালো ছাত্রদের সাথে থাকা
For students who are not as fully prepared, like in a pre-calc course, the adaptive courseware provides them with extra questions, or questions they feel like they can achieve. By the time they get to class, if they’ve completed the assigned modules, they’re going to be at the same place as higher-achieving students.
-- Susan Adams
আমি দেখেছি ২০১৯ সালে পৃথিবী জুড়ে বড় বড় কলেজ, কিছু স্কুল এবং ইউনিভারসিটিতে ‘অ্যাডাপটিভ লার্নিং সফটওয়্যার’ নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। একে আমরা অন্যান্য ‘লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস)' এর সাথে তুলনা করে দেখেছি যে এর অ্যাডপ্শন অনেক ভালো। আমাদের শিক্ষক এবং লার্নিং নেটওয়ার্ক ডিজাইনারদের একটা বড় লক্ষ্য ছিল কিভাবে প্রথম জেনারেশনের স্কুল এবং কলেজ ছাত্রদের বিশেষ করে যারা নিম্নমধ্যবিত্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন তাদেরকে ক্লাসরুমে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। বড় কথা হচ্ছে এর আউটকাম বেশ ভালো।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পাইলট প্রোগ্রাম শেষে যে জিনিসটা বোঝা গেছে সেখানে শিক্ষক এবং আমাদের লার্নিং ডিজাইনাররা এই ‘অ্যাডাপটিভ লার্নিং সফটওয়্যারকে বিভিন্নভাবে মানে তাদের নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে দেখেছেন। সেই কেসস্টাডিগুলো থেকে কয়েকটা ধারণা নিয়ে আমরা এখানে আলাপ করতে পারি। এখানে একটা জিনিস বোঝা গেছে, শিক্ষাতে ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’, ব্যাপারটা বোধহয় আর খাটবে না। কারণ সবাই আলাদা, এবং সবার বিষয়ভিত্তিক বোঝার ক্ষমতাও ভিন্ন।
নতুন ক্লাসের শুরুতে সব শিক্ষার্থীকে একই লেভেলে নিয়ে আসা
আমরা এর আগে আলাপ করেছিলাম একটা ক্লাস থেকে আরেকট ক্লাসে যাবার সময় নলেজ গ্যাপের কারণে শিক্ষার্থীদের শেখার ভ্যারিয়েশন অনেক থাকে। বিশেষ করে, সবার ফলাফল কাছাকাছি থাকে না, অনেকে অন্যান্য স্কুল থেকে এসে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়। সেখানে নতুন ক্লাস শুরু করার আগে সব শিক্ষার্থীদের নলেজ লেভেল এক জায়গায় আনার জন্য এ ধরনের ‘অ্যাডাপটিভ লার্নিং সলিউশন’ ভালো কাজ করে। শিক্ষকরা এই জায়গায় বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছেন সবাইকে এক জায়গায় আনতে।
ধরা যাক, পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে যাবার সময় শুরুতেই সব শিক্ষার্থীদের একটা ‘ইউনিফাইড’ লেভেল সেট করে নেওয়া দরকার যাতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে মাঝামাঝি গিয়ে শিক্ষার্থীদের কম সমস্যা হয়। আর সে কারণে পঞ্চম শ্রেনী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে যাবার সময় যে যে শিক্ষার্থী যেই বিষয় দুর্বল সেই বিষয়গুলোকে ঠিকমত ঝালাই করানোর জন্য এই অ্যাডাপটিভ লার্নিং সিস্টেম শিক্ষার্থীদের একটা কমন অ্যাসেসমেন্টে ফেলতে পারে। সেই ‘অ্যাসেসমেন্ট’ শেষে যার যেখানে দুর্বলতা সেটা আপডেট করা যেতে পারে এই নতুন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে। এদিকে ক্লাসের মধ্যে যারা খুব ভালো শিক্ষার্থী, তাদের সমস্যা কমানোর জন্য অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের একই লেভেলের নিয়ে আসতে পারলে পুরো ক্লাসকে নিয়ে সামনে এগোনো সহজ হয়।
শিক্ষার্থীদের পূর্বের জ্ঞান জানা থাকলে বর্তমান লার্নিংকে এগিয়ে নিতে পারে সহজেই
একটা ক্লাসের শুরুতে শিক্ষার্থীদের ওই বিষয়ে আগের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা সেটা জানা গেলে সেই কাজগুলোকে ঠিকমতো এগিয়ে নেয়া যায়। এখানে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের আগের জ্ঞানকে ‘অ্যাসেস’ করে তার শিক্ষা উপকরণ আগে থেকে দিয়ে দিলে অনেক সময় এক ঘন্টার ক্লাস কে ২০ মিনিটে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন। ফলে, ওই বাড়তি সময় দিয়ে অন্যান্য অ্যাক্টিভ লার্নিং সেশন নেওয়া সম্ভব হয়।
সিস্টেম থেকে ইনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক
সনাতন শিক্ষা সিস্টেমে একজন শিক্ষার্থী তার অ্যাসাইনমেন্ট এবং হোমওয়ার্ক করে যখন জমা দেন সেটার ফিডব্যাক পেতে পেতেই কয়েকদিন এবং মাঝে মাঝে সপ্তাহ লেগে যায়। এর মধ্যে শিক্ষক নতুন কনসেপ্ট অথবা চ্যাপ্টার নিয়ে শুরু করলে তাদের সেই ফিডব্যাকগুলো সেভাবে কাজে লাগে না আর। সেখানে এই অ্যাডাপটিভ লার্নিং সিস্টেমে শিক্ষার্থীরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের ফিডব্যাক পেয়ে যান সিস্টেমের মধ্যে। যদি তারা কনসেপ্টই ঠিকমতো না বোঝেন তাহলে পরবর্তী লেসন এর শুরুতে শিক্ষক তাকে একই লেভেলে আনার জন্য অন্যান্য লেসন দিতে পারেন। এটাও একটা ভালো ব্যবহার এই সিস্টেমের।
ডাটা ব্যবহার করে প্রতিটা ছাত্রের পেছনে ‘ইন্টারভেনশন’ মানে হস্তক্ষেপ করা
পার্সোনাল টাচ
For instance, facial recognition, voice recognition, and emotional analysis can measure student engagement, emotions, and determine their attention, understanding, and confidence. AI also enables teachers to access the best content available globally and personalize it for each student in their local language.
-- Can AI Close the Learning Gap of Indian Education System?, August 20, All Things Talent
শিক্ষকরা যেহেতু প্রতিটা ছাত্রের ওপর আলাদা ড্যাশবোর্ড পান, সে কারণে যেকোন সময় রিয়েল টাইমে ছাত্রের প্রোফাইল দেখে লেসন এর মাঝামাঝি সময়ে ইন্টারভেনশন/তার সাথে যোগাযোগ করা যায়। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য আলাদা ‘সমন্বিত’ ড্যাশবোর্ড দেখে প্রতিটা ছাত্রের সমন্বিত একটা ফিডব্যাক পান। সেখানে তাদের রেজাল্ট একটা শতাংশের নিচে গেলে সেই শিক্ষার্থীদের আলাদা করে ফেলতে পারেন।
একজন শিক্ষক যখন প্রতিদিন তার ছাত্রদের ড্যাশবোর্ড চেক করেন তখন উনি বুঝতে পারবেন কোন কোন ছাত্র ঠিকমত এগুতে পারছেনা। এর পাশাপাশি আলাদা করে স্টুডেন্টদের ড্যাশবোর্ড দেখলে বোঝা যাবে তারা সেই বিষয়গুলোতে কতটুকু এগিয়েছে এবং কতটুকু অংশ বাকি আছে। বাকি কাজ তখন সোজা। তাদেরকে বাড়তি লেসনে নিয়ে আসা সেরকম সমস্যা নয়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক সময় সিস্টেম শিক্ষার্থীদের নিজে থেকেই বলে তার একটা অ্যাক্টিভিটি হবার আগে এবং পরে সিস্টেমের রেটিং কী হতে পারে? সেই রেটিং এবং শিক্ষার্থীদের নিজের ওপর রেটিং দুটো মিলিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায় কার কি ধরনের সাহায্য প্রয়োজন। শিক্ষকগণ এই ড্যাসবোর্ডের ডাটা ব্যবহার করে বের করতে পারেন তাদের অন্য ধরনের সমস্যা আছে কিনা। এই অ্যালগরিদম দিয়ে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাসার পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
ডাটা ব্যবহার করে প্রতিটা বিষয় নিয়ে ইন্টারভেনশন
ডাটা ড্যাশবোর্ড যদি দেখায় একটা ক্লাসের ৮০% শিক্ষার্থী একটা কনসেপ্ট ঠিকমত বুঝতে পারেনি, তাহলে তাদেরকে কী পরবর্তী বিষয়ে নেয়াটা ঠিক হবে? মনে হয় না। এর মানে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সেই কনসেপ্টের ওপর বাড়তি কিছু সময় দিয়ে পরবর্তী বিষয়ে নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের মতামত হচ্ছে, এখানে শুধুমাত্র অ্যাডাপটিভ লার্নিং সিস্টেম থাকলে হবে না এর পাশাপাশি ‘অ্যাডাপটিভ’ শিক্ষক প্রয়োজন। সনাতন পদ্ধতিতে উনারা যেভাবে পড়ান সেই সিস্টেম থেকে বের হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, আর সে কারণেই এই ডাটা সাহায্য করবে কিভাবে এবং কোন বিষয়ে শিক্ষাকে আরো ফলপ্রসূ করা যায়।
ডাটা দিয়ে পরের সেমিস্টার এ নতুন উদ্ভাবনা
যেসব শিক্ষক এই অ্যাডাপটিভ লার্নিং সিস্টেমের সাথে আগে থেকে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে অনেক উদ্ভাবনী শিক্ষক সফটওয়্যার থেকে ডাটা নিয়ে পরবর্তী সেমিস্টারে নতুন নতুন কি কি উদ্ভাবনা আনা যায় সেটার প্ল্যান জমা দিতে পারেন স্কুল ম্যানেজমেন্ট এর কাছে। এধরনে বেশ কিছু কাজ হয়েছে এর মধ্যে।
এই ডাটা বলতে পারে শিক্ষার্থীদের কত সময় লেকচার এবং কতোটুকু সময় ল্যাব সেশন এ ভাগ করা যেতে পারে। শিক্ষকদের অনেকে বলেছেন এই ডাটা দেখিয়ে দিতে পারে এমন কিছু ‘মিসকনসেপশন’ মানে ভ্রান্ত ধারণা যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে। তখন শিক্ষক ১০ মিনিটের জন্য সবাইকে অ্যাডাপটিভ সিস্টেম থেকে বের করে ছোট্ট একটা লেকচার দিয়ে ভ্রান্তি দূর করে দিতে পারেন।
যদি শিক্ষার্থীরা পূর্বের জ্ঞান দিয়ে কোন মডিউলে ভালো করলে সেই মডিউল আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা অথবা শিক্ষার্থীদের সরাসরি টেস্টে নিয়ে যাবার ধারণা পাবেন এই ড্যাশবোর্ড থেকে। এটাও করেছেন অনেকে।
যেহেতু এই অ্যাডাপটিভ লার্নিং সফটওয়্যার শুরুতে টেক্সট বইয়ের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়, সেখানে ছাত্রদের জন্য আলাদা টেক্সট বই না হলেও চলে। এখানে শিক্ষকদের উপর নির্ভর করছে কোন কোর্স মডিউলে বাড়তি টেক্সট বই প্রয়োজন আছে কিনা। এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতে কোন প্রতিষ্ঠান টেক্সট বই থেকে পুরোপুরি অ্যাডাপটিভ লার্নিং সিস্টেমে মাইগ্রেট করবে কিনা সেটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশের শিক্ষা বোর্ড। এটা এখন করছে অনেক দেশ।
উদ্ভাবনায় এবং লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স রি-ডিজাইন
শুরুর দিকে বেশ কিছু শিক্ষক এই নতুন অ্যাডাপটিভ লার্নিং প্রযুক্তির ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। পরে আস্তে আস্তে যখন তারা সফটওয়্যারটার সাথে পরিচিত হতে থাকলেন তখন নতুন নতুন মডিউল যোগ হতে থাকলো আস্তে আস্তে। ফলে এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটা একটা সময়ের সাথে সাথে বুদ্ধিমান হতে শুরু করলো। এর পাশাপাশি যখন শিক্ষকগণ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করলেন, তখন এই সিস্টেমের আরো অনেক সফল ব্যবহার নিয়ে উনাদের নিজেদের মধ্যে ধারণা বাড়তে থাকলো। যখন এ ধরনের সফটওয়্যার শিক্ষকদের সাহায্যে ভালো লার্নিং ডিজাইনারের হাতে পড়ে, তখন সেটার সুফল পেয়েছেন সবাই।