ভবিষ্যতের সরকার এবং গ্লোবালাইজেশন ইফেক্ট
গতি এবং সার্ভিস
-
The speed of social change is too great for most governments to handle in their current form.
-
Companies continue to up their game in customer service, but the public sector is not keeping pace.
-
Government should design Service Delivery on the basis of people's needs, not the convenience of providers.
-- A blueprint for the Government of the future, BCG Report
ডাটা যার, ক্ষমতা তার
পৃথিবীতে এখন যার কাছে ডাটা আছে তারাই ক্ষমতাশালী। আমরা ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখব পৃথিবীর চিন্তা ধারণা পাল্টে দিচ্ছে যে বেশ কয়েকটা কম্পানি, ডাটার অতিরিক্ত ‘এক্সপোজারের’ কারণে, বিশেষ করে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের ‘পারসেপশন’ এবং ধ্যান ধারণা। মানুষ কোন জিনিসটা নিয়ে সামনে কি ধরনের চিন্তা করবে সে ব্যাপারেও রিসার্চ শুরু হয়ে গেছে সেই কোম্পানিগুলোর মধ্যে। আমরা কি প্রোডাক্টটা কিনবো নাকি অন্য কিছু করব সে ধরনের প্রেডিকশন নিয়ে আসছে সেই কোম্পানিগুলো যাদের কাছে মানুষের পুরো ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট রয়েছে। এটা কিছু কিছু সরকারের জন্য সমস্যা বটে। সরকার তার নিজেদের জনগণ সম্পর্কে যতটুকু জানে তার থেকে অনেক ভাল জানে এই ডিজিটাল কোম্পানিগুলো যারা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত তাদের মতো করে নিরীহভাবে ‘ট্র্যাকিং’ করছে।
ট্র্যাকিং এবং ‘পার্সোনালাইজড’ সার্ভিস
মানুষ তাদেরকে ‘ট্র্যাকিং’ করতে দিচ্ছে কারণ আমরা ভাবছি মেশিন আমাদেরকে যত ভালোভাবে চিনবে ততো ভালো ‘পার্সোনালাইজড’ সার্ভিস দিতে পারবে। এটা অবশ্যই সত্য কথা। ইউটিউব গত ২০ বছর ধরে আমাদেরকে যতোটুকু চিনেছে এখন প্লেলিস্টে এমন কিছু আসবে না যেটা আমাদের পছন্দ নয়। গত কয়েক বছরে আমরা মোবাইল ফোনে কি ধরনের লেখা লিখেছি সেটাকে ‘ট্র্যাক’ করে সে আমাদেরকে বলতে পারে আমরা পরের শব্দটা কি লিখতে চাচ্ছি। অনেক সময় পুরো বাক্যটাই বলতে পারে সে। অথবা আমাজন আমাকে সে ধরনের প্রোডাক্ট ‘রিকমেন্ড’ করবে যে ধরনের প্রোডাক্ট আমি দেখে এবং কিনে আসছি গত ২০ বছর ধরে। আমি কোন প্রোডাক্টটা কবে কিনবো এবং কতো পরিমাণে কিনব সেটার একটা ভালো ধারণা আছে তাদের কাছে। নেটফ্লিক্স আমাদের মনের প্রেফারেন্স জানে বলেই আমরা যে ধরনের রুচির সাথে পরিচিত সে ধরনের রুচির মুভি অথবা টিভি সিরিজ রিকমেন্ড করে আসছে। আমরা সাধারণত কোথায় যাই, কিভাবে যাই এবং কেমন করে যাই - সে ধরনের তথ্য আস্তে আস্তে চলে গেছে উবার-পাঠাও এর কাছে। আমরা তথ্যগুলো দিচ্ছি - কারণ মানুষ এর মাধ্যমে অনেক ভালো পার্সোনালাইজড সার্ভিস পাচ্ছে যেটা তার সময়কে অনেক বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
সরকারের ডাটা থেকে প্রজ্ঞা বের করা
এখানে সমস্যা একটাই। সরকারগুলো কি সেরকমভাবে ‘ইন্টেলিজেন্ট’ হবার ধারাটা ধরে রেখেছে তাদের নিজেদের সার্ভিস ডেলিভারির ব্যাপারে? এর মধ্যে চলে এসেছে গ্লোবালাইজেশনের ইফেক্ট। পৃথিবীর মানুষ এখন গ্লোবাল ভিলেজ এর সদস্য হয়ে গেছে। নিজেদের দেশে কি হচ্ছে তার পাশাপাশি অন্য দেশে কি হচ্ছে সেটার মধ্যে তুলনা হচ্ছে অনেক বেশি। সনাতন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা বেড়েছে অনেক বেশি। পাশাপাশি ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। অনেকে বলতে পারেন, মানুষের চোখ কান খুলে গেছে অনেক বেশি - যা দেখেছি বিশ বছর আগে। মানুষ এখন তার প্রাপ্যতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে, অন্য দেশগুলোর জনগণ এবং নিজেদের মধ্যে। এটা অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে। পাশাপাশি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা দেখেছি আরব বসন্তে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি - সরকারগুলো সামাজিক এই পরিবর্তনগুলো ঠিকমতো ধরতে পারছে না। এই সামাজিক পরিবর্তন এতই দ্রুত হচ্ছে সেটা বর্তমান আমলাতান্ত্রিকতা দিয়ে ঠেকানো সম্ভব না। উপায় একটাই। সরকারগুলোর কাছে যে প্রচুর ডাটা আছে সেটা থেকে প্রজ্ঞা বের করা।
এই পরিবর্তনের পেছনে শক্তি, গতি
সবাইকে গতির মধ্যে আনা
The concept of “speed to services” becomes more important as government agencies begin to incorporate the lessons learned during this crisis and evolve from a digital transformation mindset to digital execution. It’s not simply that speed to services is something governments can pull off during extraordinary times but is becoming part of the new operating paradigm as governments are required to keep up with the demands to accelerate speed to scale, access and innovation.
-- Three Keys to Speed in Government Service, National League of Cities
‘বোস্টন কন্সালটিং গ্রপ’ বলছে বর্তমানে সরকার এবং জনগণের মধ্যে যে ফারাক দেখা যাচ্ছে তার পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে ‘পরিবর্তনের গতি’। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় সরকারের যে স্ট্রাকচার কাজ করছে সেটা অন্যান্য ডাটাভিত্তিক কোম্পানির স্ট্রাকচারের কাছে সেকেলে হয়ে গেছে। সামাজিক ব্যবস্থা যেহেতু আস্তে আস্তে অনেক বেশি কমপ্লেক্স হয়ে যাচ্ছে, সেদিক থেকে সরকারের কার্যপদ্ধতি অনেকটাই সরল এবং সোজাসাপ্টা। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা। সরকারের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা এবং এজেন্সির মধ্যে সমন্বয়হীনতায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে দেশের জনগণ। একটা সার্ভিস নিতে হলে সরকারের ভেতরের আরো কয়েকটা অফিসের ছাড়পত্র বের করতে হিমশিম খেতে হয় জনগণকে। জনগণ চিন্তা করেন - সরকারের কাছেই সব ডাটা, তাহলে তাঁকে কেন দৌড়াতে হবে আলাদা আলাদাভাবে এতগুলো অফিসে? এই ঝামেলার কথা চিন্তা করে সমস্যায় পড়া জনগণ তখন দ্বারস্থ হন অবৈধ রাস্তায়।
বাড়ছে জনগণের আকাঙ্ক্ষা
আমাদের বাবা-মা’রা একটা অফিসেই কাটিয়েছেন সারা জীবন। সেই পার্সপেক্টিভটা এখন সেভাবে কাজ করেনা - কারন প্রচুর সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের আশেপাশে। গ্লোবালাইজেশনের কারণে মানুষ সামান্য চাকরির জন্য চলে যাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে, যেটা ২০ বছর আগেও অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হতো। এখন পৃথিবী চলে এসেছে হাতের মুঠোয় মানে মুঠোফোনে। এই যন্ত্রটা পাল্টে দিয়েছে আমাদের ‘পার্সপেক্টিভ’ কাস্টমার সার্ভিস এর ব্যাপারে।
মুঠোফোনে ‘প্যারাডাইম শিফট’
মোবাইল ফোন থেকে আপনি যেভাবে অর্ডার করতে পারছেন হাজারো জিনিস, সেভাবে এই মোবাইল ফোন থেকেই সব ধরনের টাকাপয়সা লেনদেন করা যাচ্ছে মুহুর্তের মধ্যে। আপনাকে একটা জিনিসের জন্য হেঁটে যেতে হচ্ছে না দোকানে, বরং আপনি যা চাইছেন সেটা পৌঁছে যাচ্ছে আপনার দোরগোড়ায় এবং সেটার ‘ইনস্টলেশন’ হয়ে যাচ্ছে আপনার পছন্দমত জায়গায়। এটা বিশাল একটা মানসিক ‘শিফট’ আমাদের জন্য, যেখানে একজন ব্যবহারকারী অর্থাৎ কাস্টমারই রাজা। আপনার পছন্দমতো জিনিস না আসলে সেটাকে ফেরত দেওয়া যাচ্ছে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। এই ধরনের ‘প্যারাডাইম শিফট’ দেখেনি মানুষ।
সেখানে সরকার থেকে সার্ভিস নিতে হলে প্রচুর ধকল পোহাতে হয় একজন সাধারণ মানুষকে। এ কারণেই এ দুটো জিনিসের ব্যাপারে ফারাক বাড়ছে জনগণ এবং সরকারগুলোর মধ্যে। আকাঙ্খার মধ্যে ফারাক। এক জায়গায় জনগণ রাজা, আরেক জায়গায় জনগণকে ঠিকমতো সার্ভিস পেতে যে ঝামেলা পোহাচ্ছেন, সেটা মেনে নিতে পারছেনা সাধারণ জনগণ। পুরো পৃথিবী জুড়েই একই অবস্থা। সরকারগুলো বেরোতে পারছেনা তাদের পুরনো সার্ভিস ‘স্ট্রাকচার’ থেকে। বিশেষ করে ডিজিটাল সার্ভিস ডেলিভারিতে।
দ্রুতগতিতে প্রযুক্তির পরিবর্তন
গত দুই যুগের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এতটাই এগিয়েছে যে তার সাথে মেলাতে পারছে না অনেক সরকার। শুরুতে ইন্টারনেটের উত্থান। মোবাইল প্রযুক্তির সবকিছুতেই ঢুকে পড়া। বিগ ডাটা থেকে ব্যবসাগুলো পাচ্ছে অসাধারণ প্রজ্ঞা - এসব কিছুই পাল্টে দিয়েছে আমাদের বর্তমান কাজ এবং চিন্তাধারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেটাকে আমরা বলছি ‘মেশিন লার্নিং’, ‘রোবটিক্স’, ‘কম্পিউটার ভিশন’ অথবা ‘ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং’ - এই সবকিছুই পাল্টে দিচ্ছে সমাজকে যে স্কেলে সেটা ব্যবহার করতে পারছে সামান্য কিছু ‘বুদ্ধিমান’ কোম্পানি।
এ অবস্থায় সরকারগুলোকে তৈরি হওয়া প্রয়োজন এই ধরনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে কব্জা করে। প্রথমত: সরকারি সংস্থাগুলোর এই প্রযুক্তির ব্যবহারকে সামনে নিয়ে আসা উচিত তাদের প্রতিদিনের কাজে, বিশেষ করে অপারেশনাল অংশে, নীতি নির্ধারণীতে এবং জনগণের জন্য সার্ভিস ডেলিভারিতে। দ্বিতীয়তঃ যেখানে সরকার খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারেন - এই প্রযুক্তিগত ব্যাপারগুলো নিয়ে জনগণ যাতে বিপদে না পড়েন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা তৈরি করার কাজে।
এর মানে এই নয় যে নতুন প্রযুক্তি আমরা বুঝছি না সেটাকে আটকে রেখে আরো সমস্যা জন্ম দেওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ‘শেয়ারিং ইকোনমি’ এবং ‘ব্লকচেইন’ এর ব্যবহার যা অনেক সময় সরকারগুলো বুঝতে না পেরে সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে নীতিমালা তৈরি করা হয়। যেকোনো প্রযুক্তির ভালো ব্যবহারের সাথে কিছু অবৈধ ব্যবহার চলে আসে বলে পুরো প্রযুক্তিকে আটকে দেওয়া ঠিক নয়। সেখানেই সরকারগুলো মাঝে মাঝে প্রযুক্তিকে ঠিকমতো বিশ্লেষণ না করে ব্যবহার না করার পরিপত্র জারি করে যা একটা দেশকে পিছিয়ে দেয়। হয়তোবা, সেই প্রযুক্তি আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারতো পরবর্তী উৎকর্ষের ধারণায়।
প্রযুক্তিকে ব্যবহার না করার ক্ষতি
যেহেতু সবকিছু এত দ্রুত ঘটছে সেখানে প্রশাসন যদি এই গতির সাথে তাল না মেলায় তখন সরকার এবং জনগণকে সেটার দাম দিতে হয়। ব্যাপারটা এরকম যে প্রশাসনের ব্যর্থতায় জনগণের নির্বাচিত সরকারের সাথে জনগনের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। যখন সরকারগুলো এ ধরনের প্রযুক্তির পরিবর্তনকে ঠিকমতো ধরতে পারে না, তখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা বোঝার যে অন্যান্য টুল সেগুলো তার কার্যকারিতা হারায়।
ধরুন, যেই ব্যবসাগুলো ‘শেয়ারিং ইকোনমি’র উপর ভিত্তি করে চলছে সেগুলো অসাধারণ সাফল্য পায় সরকারগুলো বোঝার আগেই। যখন সরকারগুলো তাদের উপরে নীতিমালা তৈরি করার চেষ্টা করে, কারণ ওই প্রযুক্তিগুলোর উপরে সরকারের ঠিকমতো ধারণা না থাকার কারণে নীতিমালাগুলো বিফলে পর্যবসিত হয়। আমি ধারণা করি এ ধরনের নীতিমালা সরকারের পক্ষে একা তৈরি করা সম্ভব নয় তবে সরকারের যদি ব্যবসাগুলোর সাথে যোগাযোগ ঠিকমতো তৈরি না হয় তখন ব্যবসাগুলো শুরু হয়ে যাওয়ার পরে সেগুলোকে নীতিমালার মধ্যে আনা বেশ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আর সেকারণে নতুন নতুন প্রযুক্তিগুলো কিভাবে সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ‘ইম্প্যাক্ট’ ফেলছে সেটার ধারণা পেতে দরকার প্রশাসনগুলোকে প্রযুক্তির উৎকর্ষের থাকা। এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারণা এবং সরকারের নীতিমালা সবগুলোই একই তালে চলতে পারে।
প্রাথমিক প্রস্তাবনা: আলিঙ্গন করতে হবে নতুন প্রযুক্তিকে
এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে প্রযুক্তিকে আটকে রাখার যৌক্তিকতা নেই। উপায় কী? সরকারের একটা ইউনিফাইড ইন্টারফেস তৈরি করা জনগনের জন্য। জনগণ তো জানবেন না কোন সংস্থার কাজ কী, অথবা কোন ব্যক্তি উনার কাজ করে দেবেন। এর জন্য দরকার সরকারের সব ডাটাকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেয়া। একটা 'এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস' অথবা 'ডাটাহাব' নিয়ে কাজ করার 'ইউনিফিকেশন' করার জন্য দরকার ডাটা থেকে সিদ্ধান্ত নেবার দূরদর্শিতা। এর পাশাপাশি 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' একটা দরকারি কম্পোনেন্ট হবে প্রেডিকশনে মানে 'ভবিষ্যত' দেখতে। সেখানে দরকার প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশীপ।
সংস্থাগুলোর মধ্যে ডাটার আদানপ্রদানের আইনগত বাধ্যবাধকতা
যুক্ত হবার বাধ্যবাধকতা
Success in the future of government work also depends on collaboration across agencies. Often agencies operate in isolated silos and miss out on learning from others.
-- Report: Federal Agencies Must Be 'Better Connected, More Collaborative', Government Executive
আমি যেহেতু সরকারের ‘ডাটা ড্রিভেন’ কয়েকটা সংস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করেছি, সেটার পার্সপেক্টিভ থেকে ধারণা থেকে বলা যায়; সরকারগুলোর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে সংস্থাগুলোর নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব। সে কারণে সরকারের কাছে প্রচুর ডাটা থাকা সত্ত্বেও সেই ডাটাগুলো ‘সাইলো’ হিসেবে পড়ে আছে সংস্থাগুলোর ভেতরে। আজকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানের পেছনের একটা বড় কারণ - বিগ ডাটা; যখন এধরনের ডাটাগুলো একে অপরের সাথে কথা বলে। আমি জনগন হিসেবে একটা অফিস থেকে ছাড়পত্রের জন্য গেলে সেই অফিস যখন অন্যান্য আরো কয়েকটা অফিস থেকে ছাড়পত্র আনতে বলে, তখন ওই সংস্থাগুলোর ভেতরে সমন্বয়হীনতার ব্যাপারটা জানান দেয়।
সরকার এবং জনগন: একটা 'সিঙ্গেল' ইন্টারফেস
সত্যি কথা বলতে, জনগণের জানার কথা না সরকারের কোন সংস্থা কি কাজ করছে এবং কোথায় করছে এবং কে করছে। সরকারি সার্ভিস পাবার জন্য সরকারের একটা ‘সিঙ্গেল ইন্টারফেস’ থাকলে সরকারকে এর পেছনে সবগুলো সংস্থার মধ্যে যোগসুত্র তৈরি করতে হবে। এই সিঙ্গেল ইন্টারফেস বলতে একটা ওয়েবসাইট বলা হচ্ছে না, বরং একটা চ্যানেল যেখানে সবাই জমা করবে তাদের চাহিদা। সেটা হতে পারে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, ইউএসএসডি কোড, অথবা সনাতন সার্ভিস সেন্টার। প্রযুক্তির ব্যবহারে ঠিক জায়গায় পৌঁছানোর দ্বায়িত্ব সরকারের। এই যোগসূত্রের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রশাসনিক আইনগত বাধ্যবাধকতা। সরকারি সংস্থার মধ্যে এই মুহূর্তে এ ধরনের আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই যেখানে তারা নিজেদের মধ্যে জনগণের প্রয়োজনে ডাটা শেয়ার করবে।
ছাড়পত্রের প্রসেস অটোমেশন, মানুষের 'বায়াস' ছাড়াই
অটোমেশন এবং গতি
5 minutes: That’s all you need to get a commercial licence in Dubai.
-- Gulf News
শুরুতেই সরকারের সাথে জনগণের যে যোগসুত্র সেটাকে আমরা দু'ভাগে ভাগ করে ফেলি। প্রথমত: ব্যবসায়িক অথবা জনগণের সরকারি সুবিধাগুলো পাবার জন্য ছাড়পত্র। এই ছাড়পত্রগুলো পাবার ক্ষেত্রে যেই ‘রুলসেট’গুলো ব্যবহার হয় সেগুলো শুরুতেই তৈরি করে দেয় প্রশাসন। পরবর্তীতে পুরো প্রসেসটাকেই ‘অটোমেট’ করা যায় সেই রুলসেটের এর ভিত্তিতে। এই লুপে মানুষের প্রয়োজন নেই।
অনেক দেশে এই লুপ থেকে ‘সিদ্ধান্ত নেবার জন্য’ মানুষকে সরানো যাচ্ছে না কারণ এখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং মানুষের ‘বায়াস’ বিশেষ করে কাকে সার্ভিসটা দেওয়া হবে অথবা হবে না সেই বৈষম্য তৈরি করে মানুষ নিজেই। এখানে পুরো প্রসেসটা ‘অটোমেট’ হয়ে গেলে মানুষের ‘বায়াস’ কমে আসবে। ফলে, মানুষ নির্বিশেষে সরাসরি একটা নীতিমালার ভিত্তিতে সার্ভিস পাবে, কাউকে আগে অথবা কাউকে পরে এ ধরনের বৈষম্য তৈরী হবে না। অথবা, ‘আমি তার পরিচিত’ বলে বাড়তি সুবিধা নেয়া যাবে না এই ধরনের সিস্টেম থেকে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ধরনের ‘অনাপত্তি’ অথবা ‘ছাড়পত্র’ (যেমন ট্রেড লাইসেন্স, বিল্ডিং পারমিট) দেওয়ার সিস্টেমগুলো চলে গেছে রুহুল বেইজ সিস্টেম এর কাছে। অনেক আগেই। সেজন্য অনেক দেশে একটা ওয়েবসাইটে বসে কয়েক মিনিটেই পাওয়া যায় ট্রেড লাইসেন্স অথবা ক্রেডিট কার্ড। যাচাই করে নেওয়া যায় এক মানুষের আদ্যোপান্ত। মানুষের স্পর্শ ছাড়াই। জনগণের যে অংশ ডিজিটাল সার্ভিস নেবার ব্যাপারে অভ্যস্ত নয় (বয়স্কদের ক্ষেত্রে হতে পারে) তাদের জন্য সনাতন সার্ভিস সেন্টার থাকলেও পেছনের সব সিদ্ধান্ত হবে একই ‘রুল বেইজড’ সিস্টেম থেকে।
বাকিটা আসছে সামনের প্রস্তাবনায়।