বাংলাদেশ এবং আগাম ধারণার প্রশাসন, কিভাবে?
খাপ খাইয়ে নিতে পারা
We understand anticipatory governance to broadly mean governing in the present to adapt to or shape uncertain futures.
-- Four approaches to anticipatory climate governance: Different conceptions of the future and implications for the present, Wiley Online Library
‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন
ডাটার ভবিষ্যৎ দেখার বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যবহার করে প্রশাসন এক ধরনের ‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসন তৈরি করতে পারে। কিছুটা আবহাওয়া পূর্বাভাসের মতো। ফোরকাস্ট দিয়ে সমস্যা খুঁজে বের করে সেটার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে তৈরি থাকা। মানুষ কালকে অর্থাৎ সামনের মাসগুলোতে যেই সমস্যাগুলোতে পড়তে পারেন সেটা যদি আগেভাগে সমাধান করা যায় তাহলে কেমন হয়? সেই প্রশাসনকে মানুষ ভালো না বেসে যাবে কোথায়? ডাটাকে ঠিকভাবে অ্যানালাইসিস অর্থাৎ নিরীক্ষণ করলে সামনে কি ঘটতে পারে সেটা নিয়ে কাজ করছে অনেক দেশের প্রশাসন। নীতিমালা তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করলে সেই নীতিমালার ফলাফল একটা সামগ্রিক ড্যাসবোর্ডে আসে। নীতিনির্ধারকদের জন্য। সেই রাস্তায় হাটছে অনেক দেশ এখন।
সার্ভিস হবে দ্রুত ভালো এবং কম খরচে
বাংলাদেশের ‘ডাটা ড্রিভেন’ প্রশাসন সরকারি সার্ভিস ডেলিভারিতে অবশ্যই ভালো ফলাফল দেখাতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। বর্তমানে সরকারি পদ্ধতিতে জমি সংক্রান্ত কেনাবেচা, নাম পরিবর্তন, নামজারি ইত্যাদি ভূমির সার্ভিসগুলোতে যে সময় লাগে সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এলে পুরো ব্যাপারটাই নেমে আসবে কয়েকদিনে। ডাটাসেটগুলো যখন একে অপরের সাথে যুক্ত থাকবে তখন বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরকারি ছাড়পত্রগুলো নিরীক্ষণ হবে অনলাইন কোয়েরি দিয়ে যা করবে সিস্টেমের ওয়ার্ক ফ্লো। এখন যেখানে অনেকগুলো টেবিল ঘুরতে হচ্ছে এনালগ প্রসেসে - তখন ডিজিটাল প্রসেসে ব্যাপারগুলো কমে আসবে নতুন ডিজিটাল ডিজাইনে।
প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে যখন দৈনন্দিন সিদ্ধান্তের প্রসেসগুলো পুরোপুরি অটোমেটেড হয়ে যাবে তখন কাজের সময় আসবে কমে। যেকোন কাজের প্রসেস এর মধ্যে কোন ধরনের ভুল অথবা ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন বা পরিমার্জন, অথবা প্রতারণামূলক কার্যক্রম, সিস্টেম থেকেই ‘ফ্লাগিং’ অর্থাৎ আটকে দেবে প্যাটার্ন বুঝে। যখন একটা রিসোর্স অনেকের মধ্যে ভাগ হবে তখন সেটার ব্যবহারের অপটিমাইজেশন করতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশেষ করে দেশব্যাপী এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিংয়ে। একই খাতে টাকা কোথায় কয়েকবার খরচ হচ্ছে সেটাও ধরা পরবে ড্যাসবোর্ডে।
কম খরচ, ভালো সার্ভিস
These new applications could save hundreds of millions of staff hours and billions of dollars annually. But the shift’s size and impact will depend on many factors, some political and some financial. With adequate investment and support, we believe, AI could free up 30 percent of the government workforce’s time within five to seven years.
-- How much time and money can AI save government? Deloitte Insights
সরকারি কোন কোন সার্ভিস দিতে গিয়ে সময় বেশি লাগছে এবং কেন লাগছে সেটা বের করতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যেহেতু বেশিরভাগ সিদ্ধান্তগুলো - বিশেষ করে শুরুতে ছোটখাটো সিদ্ধান্তগুলো একটা প্রসেসে পড়ে যাবে বলে দিনের কাজ দিনেই বের করে আনা যাবে। যেমন, সরকারি হেলথকেয়ার সিস্টেমে কোন রোগীকে হাসপাতাল থেকে আগে ছেড়ে দিলে সেই রোগীর আবার ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু সেটা জেনেই রোগীকে ঠিকমত ছাড়ার ব্যবস্থা করা যায়। সেই রোগী যদি আবার একই সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয় দুদিন পরে, তাহলে সরকারের রিসোর্সের ক্ষতি হয় ঠিক প্রেডিকশন না করার কারণে।
প্রেডিকটিভ মডেল, সামাজিক সুবিধা দেবার ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের পেনশন অর্থাৎ অবসর ভাতা থেকে শুরু করে বয়স্ক ভাতা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভাতা (সামাজিক সুবিধা হিসেবে) আগে থেকে হিসেব করা যাবে সরকারি সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী। কয়েক বছর আগেই একটা বছরে কতো টাকা আলাদা করে রাখতে হবে সেটা বের করা যাবে কবে কতজন অবসর গ্রহণ করছেন। এ ধরনের প্রেডিকশন বাঁচিয়ে দেবে অনেক ধরনের বিপদ থেকে। প্রশাসনকে হতাশ করতে হবে না কাউকে। কে একটা ভাতার জন্য যোগ্য অর্থাৎ কোন কোন মানদণ্ড মেনে একজন ভাতা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত, সেটা বের করে দিবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ইউরোপে এরকম বেশ কিছু দেশে সামাজিক সুবিধা বন্টন করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রেডিক্টিভ মডেলের সাহায্য নিয়ে। এই জায়গাগুলোতে মানুষ যেভাবে সিদ্ধান্তের লুপ থেকে বের হয়ে যাবে, এর সাথে সাথে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেওয়ার মানুষের সংখ্যাও আসবে কমে। এটা তখনই হবে যখন সর্বশেষ সিদ্ধান্তগুলো দিতে চাইবে মানুষ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে ‘সামগ্রিক’ প্রশাসন
আমি যখন সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরে কাজ করেছি, তখন একটা জিনিস বোঝা গেছে, প্রশাসনের সুবিধার্থে প্রতিটা মন্ত্রণালয় আসলে একেকটা সরকার। নীতিমালাগুলোতে স্পষ্ট করে বলা থাকে “সরকার বলতে উক্ত মন্ত্রণালয় বুঝাইবে”, এর অর্থ হচ্ছে সরকার তার কাজগুলোকে ঠিক ভাবে সম্পন্ন করার জন্য একেকটা মন্ত্রণালয়কে সরকারের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়গুলো সরকারের হয়ে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। “সামগ্রিক সরকার” অর্থাৎ প্রশাসন হচ্ছে এমন একটা নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রসেস যেখানে প্রতিটা মন্ত্রণালয় এবং সরকারের প্রশাসন একে অপরের কাজের সামগ্রিকতা ভেবেই কাজ করবেন।
অটোমেশন
Since overall government employment trends follow skills-biased trends, we expect similar trends at the task level, determining which government tasks will be replaced sooner than others.
-- How much time and money can AI save government? Deloitte Insights
সরকারের কাজের ভেতরে প্রচুর সদৃশ কাজ অর্থাৎ ‘ডুপ্লিকেশন’ থাকে যেখানে বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা প্রচেষ্টা এবং টাকা সময় নষ্ট হয়। এর পাশাপাশি একটা কাজের ইভেন্ট আরেকটা উন্নয়ন কাজের কোথায় প্রভাব ফেলবে সেটা জানা যাবে কিভাবে? ধরা যাক, সরকার নতুন কিছু কর আরোপিত করলে সেটা শিক্ষাখাত অথবা পোশাক খাতে কতটুকু প্রভাব ফেলবে? অথবা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের ট্রাফিক কিভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা বড় অংশ হচ্ছে সামগ্রিকভাবে একটা কাজ অন্য আরেকটা উপরে কি ধরনের প্রভাব ফেলে সেটা বের করতে পারা।
শক্তি উত্পাদন, জেনারেশনে অসাধারণ 'অপটিমাইজেশন'
যেকোনো দেশের জন্য শক্তি উত্পাদন অর্থাৎ এনার্জি জেনারেশন তার সক্ষমতার একটা বড় অংশ। সাধারণ গ্যাস টারবাইন থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, তার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তি কিভাবে (গ্রীডের শক্তি ব্যবহারে) আরো অপটিমাইজ করা যায় সেটা করতে পারবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমি কয়েকটা দেশের শক্তি উত্পাদনের দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি - তাদের প্রেডিকশন ক্ষমতা অসাধারণ। কোন শক্তি নষ্ট হবার নয়।
এনার্জি অর্থাৎ শক্তি জেনারেশনের পাশাপাশি আবহাওয়া পূর্বাভাস ধরলে কখন সোলার প্যানেল সূর্য পাবে আর কখন সাগরের পাড়ে টারবাইন ঘুরিয়ে এর সাথে জাতীয় গ্রিডে কারা কারা শক্তি দিতে পারবেন, তাদের মধ্যে সমন্বয় করে পুরো বছরের একটা ভালো শক্তি ধারণা দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিদ্যুৎ জেনারেশন নিয়ে একটা বিশাল অংশ আছে যার মাধ্যমে এই জেনারেশন চালানো যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রেডিকশন থেকে। মাথা খারাপ করে দেবার মতো প্রজ্ঞা। বসিয়ে দিতে হবে না ক্যাপটিভ চার্জ।
কখন কোল্ডস্টোরেজ চলবে এবং কখন ব্যবসায়িক লাইনে বিদ্যুতের দাম কমবে এই সবকিছুই মেলানো যাবে যদি একটা ভালো পূর্বাভাস পাওয়া যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে। পাওয়ার জেনারেশন এর প্রচুর পূর্বাভাস আসে আগের বছরগুলোর ডাটা থেকে। ২০-৩০ বছরের ডাটা। বিদ্যুতের দাম কখন বাড়লে বা কমলে গ্রাহকদের সুবিধা হয় সেটাও প্রেডিকশন করতে পারবে মডেল। পাওয়ার জেনারেশন কখন বাজারের জন্য ভালো হবে এবং কখন গ্রাহকরা এর ব্যাপারে ন্যায্য দাম দিতে পারবেন সেটাও হিসেব করা যায় এই পদ্ধতিতে। এর পাশাপাশি গ্রাহক থেকে তৈরি বিদ্যুৎ কিভাবে গ্রিডে ফেরত দেয়া যায় সেটা নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে মধ্যে।
সরকারি কাজে সংবেদনশীলতা অর্থাৎ রেস্পন্সিভনেস
ডাটার যে ক্ষমতা সেখানে জনগণের প্রতিটা সমস্যা ধরে ধরে সেটার সমাধান করা যায় এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। যেহেতু প্রতিটা জিনিস ‘রুল-বেসড’ সিস্টেমের মাধ্যমে হচ্ছে সেখানে মানুষের সাহায্য ছাড়াই জনগণের মোটাদাগের সমস্যাগুলো মেটানো যাবে একটা প্রসেস ফ্লো’র মাধ্যমে। ডাটা ড্রিভেন সরকারের একটা বিশাল কাজই হচ্ছে জনগণের সমস্যা খুঁজে খুঁজে বের করে সেটার সমাধান দেয়া। অনেক ব্যবস্যায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের পুরানো গ্রাহকদের খুঁজে পেতে যেভাবে তাদেরকে সার্ভিস দেয়, সেরকম মডেলে। বিগ ডাটা ব্যবহার করে। জনগনের সাথে 'ক্রেতার বিশ্বস্ততা'র মতো ধারণা একটা প্রশাসনের জন্য আশির্বাদ।
"আমরা এখনো অভিযোগ পাইনি" অথবা "লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে" এ ধরনের সরকারি গদবাধা উত্তর প্রয়োজন পড়বে না যখন এই ‘প্রসেস ফ্লো’ মানুষের সিদ্ধান্ত ছাড়াই চলবে। সোশ্যাল মিডিয়া কী নিয়ে সামনে উত্তাল হবে সেটার ধারণা আগেই পেতে পারে প্যাটার্ন এনালাইসিস। জনগনের সমস্যাগুলোকে প্রেডিকশন করে সেটার জন্য তৈরি থাকাই হচ্ছে ‘অ্যান্টিসিপেটরি গভার্নমেন্ট’ অর্থাৎ আগাম ধারনার প্রশাসনের কাজ। অনেক আগে পড়েছিলাম, যেই প্রশাসন অদৃশ্যমান, যাদের অফিস/দালান কোঠা দেখা যায় না, যাদেরকে নিয়ে কোন আলাপ নেই পত্রিকায়, তাদের নীতিমালাই কথা বলে তাদের উপস্থিতি প্রতিমুহুর্তে। সে ধরনের 'অদৃশ্য' প্রশাসন কিভাবে সম্ভব? সম্ভব, ডাটা থেকে। সেই ডাটার শুরুটা আসছে কোথা থেকে?
বিভিন্ন জরুরি সেবা কল সেন্টারের ডাটা এনালাইসিস
আমার যেহেতু সরকারের বেশ কয়েকটি জরুরি সেবা কল সেন্টারের ডাটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল একসময়, সেখানে কল সেন্টারের মানুষের সমস্যাগুলো ঠিকমতো ইনপুট দিয়ে প্রসেস করলে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করলে প্রতিটা কল থেকে ‘যিনি ফোন করেছেন তার ডিটেইলস’, ‘কোথা থেকে ফোন করেছেন’ যা পাওয়া যাবে ‘লোকেশন’ সিস্টেমের মাধ্যমে, ‘কি জন্য’ ফোন করেছিলেন, কোন অফিসে তার সমস্যাটা আটকে আছে, কতোদিনের মধ্যে সমাধান প্রয়োজন - এ ধরনের ডাটাগুলোকে এনালাইজ করলে সরকারের সার্ভিসের বর্তমান চিত্র পাওয়া যাবে।
কোন সমস্যাগুলো বর্তমানে জনগণকে খুব ভোগাচ্ছে, কোথায় আটকে যাচ্ছে জিনিস, সমাধানের প্রস্তাবনা - সেগুলোর ট্রেন্ড এনালাইসিস এবং এর পাশাপাশি এই ধরনের কলগুলোকে কিভাবে আরো ভালোভাবে প্রসেস করা যায় সেটাও সম্ভব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। রিসোর্স অপটিমাইজেশন সম্ভব এভাবে। উদাহরণ হিসেবে, সরকারি সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সেই সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে একই জায়গায় চার ধরনের সার্ভিস দিতে হলে সেখানে চারটা গাড়ি আলাদা না পাঠিয়ে একটা গাড়ি চারটা সার্ভিস দিয়ে আসতে পারে। প্রাইভেট সেক্টর যেভাবে তাদের সার্ভিস ডেলিভারী করতে পারে খুব অল্প সময়ে, সে ধরনের মডেল সম্ভব যখন সরকারের ভেতরের সংস্থাগুলো ডাটা শেয়ার করা শুরু করবে নিজেদের ভেতরে।
মানুষকে মধ্যে রেখে সল্যুশন ডিজাইন - ‘হিউম্যান সেন্টারড ডিজাইন’
প্রযুক্তি সমস্যা নয়, মানুষকে বুঝতে দরকার প্রযুক্তি
The technology is the easy part. The hard part is figuring out the social and institutional structures around the technology.
-- John Seely Brown, AI Needs Human-Centered Design
সরকারি সেবা সহজিকরণ প্রকল্পে ‘সলিউশন ডিজাইন তৈরি করতে ‘হিউম্যান সেন্টারড ডিজাইন’ না ব্যবহার করলে সেটা কাজ করবেনা। যেকোনো সমস্যাকে দেখতে হবে ব্যবহারকারীর চশমা দিয়ে এবং সেই সলিউশনটাই কাজ করবে যখন ডেভলপাররা শুরুতে ব্যবহারকারীর দরকারকে ঠিকমতো ফোকাস করে। এ ধরনের ‘হিউম্যান সেন্টারড ডিজাইন’ ভালো কাস্টমার সার্ভিস দেবার প্রতিশ্রুতি দেয় সেখানে এর ভেতরের প্রক্রিয়াগুলোকে এমন ভাবে তৈরি করে যাতে দক্ষতা এবং ভুলের সংখ্যা কমিয়ে সরকারি এই সার্ভিসগুলোর খরচ নামিয়ে নিয়ে আসে।
যখন অনলাইনে সব সরকারি সেবাগুলো আসবে, তখন প্রচুর সরকারি স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষনের খরচগুলো কমে আসবে এলাকাগুলোতে। সকল জনগণকে অনলাইন পোর্টালে আনার জন্য সরকারি স্থাপনার খরচগুলোকে ভর্তুকি হিসাবে দিলে সবাই অনলাইনে চলে আসবে। যেমন - যখন আয়কর ব্যবস্থা পুরোপুরি অনলাইনে চলে আসবে, তখন বিভিন্ন শহরে রাজস্ব স্থাপনাগুলোর প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে। এতে আয়কর দেবার জন্য বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ কমে আসবে। কারণ, অনেক সরকারি স্থাপনায় প্রতিবছর প্রশাসনিক যতো খরচ হয় - সেগুলোর ওভারহেড কমে আসবে জনগনের করের ওপর।
‘কো-ক্রিয়েশন’, জনগণকে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিতে আনা
In 2017, 599 regional and national projects and in 2018 a total of 692 projects were put to the vote online or via an SMS system. Whilst in 2017 nearly 80,000 people took part in the vote, this number rose to 120,000 in 2018.
-- Portugal – The World’s first National Participatory Budget, Politics Reinvented
বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারণীতে নাগরিকদের অংশগ্রহণ এর ব্যাপারটা ভালই বেড়েছে। ডাটা ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো বুঝতে পারছে কোথায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ তাদের প্রশাসনের কাজগুলোকে আরো সহজ করে তুলবে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটা দেশ অংশগ্রহণমূলক বাজেটিং এর ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছে। পর্তুগালে পৌরসভাগুলোতে সেই ২০০০ সাল থেকেই নাগরিকদের অংশগ্রহণ মূলক বাজেটের অনেকগুলো অনুশীলন দেখেছি বিভিন্ন খবরে।
ধীরে ধীরে পর্তুগাল এবং ব্রাজিল তাদের জনগণকে জাতীয় বাজেট প্রণয়নে যুক্ত করছে। জনগণকে রাজনীতির আরো কাছে আনার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের বড় বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে কোনগুলোতে জনগণের সায় আছে - সেগুলো বোঝার জন্য জনগণকে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে অনলাইন এবং এসএমএস দিয়ে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। জনগণ অনেকে মিলে কোন কোন প্রকল্প কাজে লাগবে সেগুলোর প্রস্তাবনা দেন ওয়েবসাইটে। সেখানে বাছাই হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক সেরা প্রকল্পগুলো হিসেবে। জনগণকে জাতীয় বাজেট প্রণয়নে অংশগ্রহণের পেছনে ডাটার ভালো কাজ রয়েছে।
ডাটা থেকে অনেক কিছু ধারণা করা যায় কী হচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে। ধরুন, উদাহরণ হিসেবে বলছি - আমাদের খাবার পরিদর্শকদের কথা। এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সব সেক্টরে কাজ করা সম্ভব। ডাটাকে বিশ্বাস করলে সমস্যাগুলোকে উতরে ওঠা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে খাদ্য পরিদর্শন (একটা উদাহরণ, যা অন্য জায়গায় ব্যবহার করা যাবে)
খাদ্য পরিদর্শক কিভাবে জানবেন সামনে কোন হোটেল, রেস্টুরেন্ট অথবা বাজারে গেলে খাদ্যের সমস্যাগুলোকে খুঁজে পাওয়া যাবে? শহরগুলো যখন আস্তে আস্তে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ছে তখন মানুষ নিজের বাসায় তৈরি করা খাবারের পাশাপাশি বাইরের খাবারের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি বাইরে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে অনেক উদ্যোক্তা কাজ করছে বিভিন্ন অফিস, কারখানায় খাবার সরবরাহে। এ অবস্থায় একজন খাদ্য পরিদর্শক কিভাবে বুঝবেন - কোথায় এই খাবারের সমস্যাগুলো পাওয়া যাবে? এ ব্যাপারে বর্তমানে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’, নিউজ কমেন্টে, অথবা বিভিন্ন রিভিউয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট অথবা বাজারের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে মানুষের মতামতগুলো পাওয়া যায়। আমি নিজে কাজ করেছিলাম এগুলো নিয়ে, বিশেষ করে ‘সেন্টিমেন্ট এনালাইসিসে’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ‘ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং’ ব্যবহার করে খাদ্যে বিষক্রিয়া, পচা খাবার, মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বিক্রি করা ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যাগুলোকে জানাতে পারবে সরকারের নির্ধারিত সংস্থাকে।