সুবিধাবঞ্চিতদের সনাক্ত করবো কিভাবে?
সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়নের কৌশলপত্র
এক কথায় বলতে গেলে, সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়নের কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। ওই কৌশলপত্রটি বিবেচনায় এনে এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কিভাবে নিরাপত্তা প্রদান করা যায় সে নিয়ে অনেক কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের দারিদ্র্য কমাতে অনেক কর্মসূচি থাকলেও জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো দারিদ্র ঝুঁকিতে রয়ে গেছেন। তবে, এদের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে যে অংশটা আছে এবং এর পাশাপাশি দারিদ্র্যসীমার কিছুটা উপরে থাকা মানুষজন প্রায় সময়ই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
তবে মোটা দাগে বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ মহিলা, দুগ্ধ দানকারী দরিদ্র মা, অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী (যেমন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি) এ সুবিধার মধ্যে পড়বেন। এর সাথে যারা ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীরাও এ সুবিধা পাবেন।
সরকারি ডকুমেন্টগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসকরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র বাস্তবায়ন অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৬-২১ অনুমোদিত হয়েছে আগেই। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরকার দরিদ্র জনগণের অবস্থা উন্নয়নে প্রতিবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। সরকারের তথ্য় অনুযায়ী - দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে, আমার অভিজ্ঞতায় মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের তথ্য এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর 'প্রক্সি ডাটা' 'নামবিহীন' অর্থাৎ 'অ্যানোনিমাস' হিসেবে ব্যবহার করে সুবিধাবঞ্চিতদের সনাক্ত করা সহজ। সেখানে ব্লকচেইন এখন আশীর্বাদের মতো। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ব্যাপারে কাজ করে দেখেছি ব্যাপারটা সম্ভব। ব্যাপারটা কমিয়ে আনবে সামাজিক অসঙ্গতি।
বর্তমানে বাজেটের ১৭ শতাংশ, ২৫ এ দাড়াবে
এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটাকে বাজেটের সাথে মেলালে সেটা ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ হয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। করোনা মহামারির কারণে আরো ১২ লাখ মানুষ নতুন উপকারভোগীতে যোগ হবে।
তবে, অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশের সাথে মিলিয়ে দেখা গেছে সামাজিক সুরক্ষার জন্য যতটুকু বরাদ্দ তা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। এটা ঠিক যে, কাউকে পেছনে রেখে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে যত ডকুমেন্টেশন পড়েছে সেখানে সবাই বলছেন দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও অব্যবস্থাপনা দূর করা প্রয়োজন। পুরো ব্যবস্থাপনাকে ঠিকমতো সিনক্রোনাইজেশন করতে গেলে সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এই ঝামেলা অনেকটা দুবাই এয়ারপোর্টের মতো। প্রচুর সেখানে সাহায্য লাগবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।
নিচের কিছু তথ্য দেখি, এনএসএসএস, উন্নয়ন বাজেট ২০১৫-২০১৬, জনগণনা ২০১১, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এবং প্রথম আলো ২০১৬ থেকে
-
সামাজিক নিরাপত্তা–সেবার নির্বাচন–প্রক্রিয়ায় ৩৩.৫% উপকারভোগী সঠিকভাবে নির্বাচিত হন না
-
২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপির ২.১৯% এবং উন্নয়ন বাজেটের ৩.৮% সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল
-
দেশে জনসংখ্যার ৭.৭% বয়স্ক মানুষ
-
২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির ২.০২% বা বাজেটের ১৩% সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হয়েছে
-
দেশে ৮৩% কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো সাধারণত গ্রামাঞ্চলেই পরিচালিত হয়। অথচ শহরে উচ্চ বাড়িভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অসহায় করে তুলছে। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শহরে তেমন মনোযোগ পাচ্ছে না।
বর্তমানে প্রায় ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ২৩টি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়। কিন্তু এদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়া, টানাটানি, সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, অদক্ষতা, ঘুষ-দুর্নীতিসহ অব্যবস্থাপনার জন্য প্রকৃত গ্রাহকেরা এর সুফল পাচ্ছেন না। সামাজিক সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত ব্যয়ের ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ প্রাপকের কাছে পৌঁছায় না।
অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত দরিদ্ররা এই কর্মসূচির মধ্যে ঢুকতে পারছে না। আবার সচ্ছল মানুষ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তাই একজন সচ্ছল মানুষকে বের করে দিলে সেখানে একজন দরিদ্র মানুষ প্রবেশ করতে পারে।
পেনশনকে সর্বজনীন করার বিষয়টি ভাবতে হবে; বিশেষ করে যাঁরা কর দেন, তাঁদের সবার জন্য পেনশনের বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।