যন্ত্রের উপলব্ধি বোধ, চাইনিজ-রুম যুক্তি
যন্ত্রের কী মন আছে?
The point of the argument is this: if the man in the room does not understand Chinese on the basis of implementing the appropriate program for understanding Chinese then neither does any other digital computer solely on that basis because no computer, qua computer, has anything the man does not have.
-- John Searle
টুরিং টেস্ট এর ধারণা থেকে আমাদের মনে কয়েকটা প্রশ্ন আসতে পারে। আচ্ছা কম্পিউটারের কি আসলে মন আছে? কম্পিউটার কি চিন্তা করতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কম্পিউটারে কি নিজস্ব উপলব্ধি বোধ আছে? আচ্ছা, প্রশ্ন কি বেশি কঠিন হয়ে গেল? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা জানতে চাচ্ছিলাম কম্পিউটারের কি নিজস্ব আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে কোন ব্যাপারে? সেকি সচেতনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
'চাইনিজ-রুম' যুক্তি
এই ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করার আগে ‘চাইনিজ রুম’ আর্গুমেন্ট নিয়ে কথা বলে আসি। এই ধারণাটা প্রথমেই নিয়ে আসেন দার্শনিক জন সার্ল, তার “মাইন্ড, ব্রেইন এন্ড প্রোগ্রামস’ পেপারে, ১৯৮০ সালে। ‘চাইনিজ রুম’ আর্গুমেন্ট বলছে একটা কম্পিউটারের প্রোগ্রামে কোনভাবে তার মন অথবা উপলব্ধিবোধ, অথবা ভেতরে ভেতরে যে কোন জিনিসের আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকার কথা না যদিও সেই প্রোগ্রামটা মানুষের মত আচরণ করছে। আসলেই তাই। মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, তার আত্মসচেতনতা, পাশাপাশি তার উপলব্ধির যেকোনো জিনিসের ব্যাপারে - সেগুলো কি তুলনা করা যাবে একটা কম্পিউটারের মানসিকতার সাথে?
চাইনিজ ভাষা না বুঝেও উত্তর তৈরি
এটার ব্যাপারে বিবিসির চমৎকার একটা ভিডিও আছে ইউটিউবে। ২০১৫ সালে তৈরি। ব্যাপারটা নিয়ে হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন উনারা। কল্পনা করুন, একটা রুমে একজন মানুষ বসে আছেন যিনি এক বিন্দু চাইনিজ ভাষা জানেন বা বোঝেন না। তিনি অবশ্যই ইংরেজি বোঝেন। ওই ঘরের দরজার মধ্যে একটা চিঠি পাঠানোর মত একটা স্লট আছে, যার হাত দিয়ে কিছু কাগজপত্র আদান-প্রদান করা যায়। ওই দরজার ফাঁক দিয়ে উনাকে প্রশ্ন পাঠানো হচ্ছে যা পুরোপুরি লেখা হচ্ছে চাইনিজ ভাষায়।
উনি যখন প্রশ্ন পাচ্ছেন, সেটার উত্তর লেখার জন্য ওই রুমের ভেতরে ইংরেজিতে ইনস্ট্রাকশন বই দেয়া আছে যা ব্যবহার করে সেটার উত্তর লিখছেন চাইনিজ ভাষায় লেখা কার্ডবোর্ড ব্যবহার করে। উত্তর লিখে উনি ফেরত দিচ্ছেন সেই দরজার স্লটের ফাঁক দিয়ে। দেখা গেছে, উনি ঠিকঠাক মতই চাইনিজ ভাষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন, চাইনিজ ভাষার এক বিন্দু না বুঝেও। চাইনিজ ভাষা না বুঝেও ইংরেজি ভাষায় ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করে কোন প্রশ্নের জন্য কি ধরনের উত্তর দিতে হবে সেটাই বেছে দিয়েছিলেন কার্ডবোর্ড ধরে ধরে।
না বুঝেই উত্তর দেয়াটা কী 'উপলব্ধি বোধ' থাকা?
এখানে ওই রুমের ভেতরের মানুষটা আসলে একটা কম্পিউটারের মত কাজ করেছেন। ইনফরমেশন প্রসেস করে দিয়েছেন। উনি চাইনিজ ভাষার কোন কিছু না জেনেও শুধুমাত্র ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করে উত্তরগুলো তৈরি করেছেন। বিশেষত: এর ভেতরের ভাব না জেনেই। ‘সার্ল’ বলছেন, এর ভেতরে চাইনিজ ভাষার কোন বোঝাবুঝি ছিল না। উনি নিজেও চাইনিজ ভাষা জানেন না, এবং ইনস্ট্রাকশনগুলো চাইনিজ ভাষা বুঝতে কোন সাহায্য করেনি। এর অর্থ হচ্ছে এই প্রসেসে কোন উপলব্ধি বোধ বা বোঝাবুঝি ছিল না।
এই ধারণা থেকেই এই চাইনিজ রুম আর্গুমেন্ট এসেছে, অর্থাৎ যন্ত্র যে কোন সমস্যাকে উপলব্ধি অথবা এর ভেতরে না বুঝেই সমাধান করতে পারে। এই যুক্তিটা একটা ‘ফাংশন’ এর আউটপুট এবং কম্পিউটেশনাল প্রসেসিং এর দার্শনিক অবস্থানের উল্টো দিকে অবস্থান নিয়ে বসে আছে, যা ধারণা করে যে মন একটা ইনফরমেশন প্রসেসিং অর্থাৎ তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ সিস্টেম ছাড়া কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এজন্য় মানুষের মনের মতো একটা ‘সিমুলেশন’ অর্থাৎ মনের একটা অনুকরণ হলেই যথেষ্ট। বিশেষত, যুক্তিটা আগের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংকে পাল্টানোর জন্য বলা হয়েছে যেখানে ‘সার্ল বলছেন স্ট্রং এআই এর অর্থ বলছেন: “যদি একটা কম্পিউটার প্রোগ্রামের ইনপুট থেকে আউটপুট ঠিক থাকে, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে এই কম্পিউটার প্রোগ্রামের মধ্যে মানুষের মধ্যে মন বা উপলব্ধি বোধ আছে।”
আপনার কী মত?