বুদ্ধিমান আয়কর সংস্থা এবং তার কাজ
আয়কর আইনি নীতিমালা, পাল্টায় দ্রুত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আয়করের অংশে একটা ছোট ধাক্কা খেলাম। একজন (একজন ব্যক্তি অথবা একটা সংস্থা) আয়কর ঠিকমত প্রদান করছেন কিনা সেটা জানার জন্য ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ এখন একটা বড় হাতিয়ার। আয়কর নীতিমালার হাজারো বিধি এবং ‘এসআরও’, চালান এবং আইনি ধারা পড়ে একমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমানই পারবে যেকোনো আয়কর সঠিকভাবে নিরূপণ করতে। আমার নিজের আয়কর, বেতন, গাড়ির নীতিমালা পড়তে পড়তেই বুঝে গেলাম এই নীতিমালা খুব পাল্টায়, অল্প সময়ে। একেক সময়ে একেক নিয়ম। এগুলো মনে রাখা কষ্ট মানুষের পক্ষে, তাই এখন খুব দাম আয়কর আইনজীবিদের।
তবে যে জিনিসটা বুঝতে পারছি - সামনে সবকিছুই করবে সফটওয়্যার - যার নখদর্পনে থাকবে সব আয়কর আইন। এটা সম্ভব। এধরনের সফটওয়্যারের কাজও দেখেছি আমি। তবে এটা ঠিক যে, দেশের সার্বজনীন সব উন্নয়ন কাজগুলোর (ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং সামাজিক উন্নয়ন) জন্য যে ধরনের ‘ক্যাশ-ফ্লো’ অর্থাৎ টাকা পয়সার প্রয়োজন তার জন্য আয়কর ব্যবস্থার প্রসেস অটোমেশন, বিশেষ করে সঠিক আয়কর নিরূপণ অতীব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশগুলোর জন্য।
২৫ বছর ধরে পরিসংখ্যানের ব্যবহার - ডাটা অ্যানালিটিক্স
পৃথিবীর বড় বড় আয়কর সংস্থাগুলোর কেস স্টাডি পড়তে গিয়ে দুটো জিনিস বুঝলাম। এক. আয়কর সংস্থাগুলো গত ২৫ বছর ধরে কিছু ফর্মে ডাটা অ্যানালিটিক্স চালিয়ে আসছেন সঠিক আয়কর নিরূপণের জন্য। সেটা বর্তমানের ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ না হলেও পরিসংখ্যানের অনেক টুল ব্যবহার করে আসছেন এই কাজে। দুই. আয়কর সংস্থার মূলত দুটো কাজ। বিশেষ করে এই একবিংশ শতাব্দীতে। প্রথমত, যারা আয়কর দিচ্ছেন, তাদের ট্যাক্স ‘কমপ্লায়েন্স’ অর্থাৎ হাজারো নীতিমালা মেনে ঠিকভাবে আয়কর প্রতিপালন করছেন কিনা সেটা ঠিকমতো এনালাইসিস করা।
অ্যানালিটিক্স এবং অডিট
The scope of advanced analytics is now expanding into new areas, going beyond identifying suitable cases for audit to include methods of enforcing filing and payment compliance, providing better taxpayer service and debt management, and informing policy at a more strategic level.
-- Artificial intelligence in taxation, A case study on the use of AI in government, BCG
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এখানে সেই আয়কর দেওয়ার মধ্যে অবৈধ ‘আচরণ’ অর্থাৎ প্যাটার্ন সনাক্তকরণ পদ্ধতি - একজন আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এই বছর কত টাকা আয়কর হতে পারে, সেটার একটা প্রেডিকশন তৈরি করে প্রদানকারী মূল টাকার সংখ্যার সাথে মেলালে এই ব্যাপারটি সহজে বোঝা যায়। এর পাশাপাশি শুধুমাত্র মানবসম্পদ দিয়ে প্রতিটা আয়কর দেখে সেটার সঠিকতা নিরূপণ করা একটা অসম্ভব ব্যাপার।
২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫৩ শতাংশ ‘ওইসিডি’ আয়কর সংস্থাগুলো ‘প্রেডিকটিভ’ মডেলিং ব্যবহার করেন এ ধরনের প্যাটার্ন বের করতে। সেই প্যাটার্ন বের করা থেকে শুরু করে, তাদেরকে দিয়ে সঠিক আয়কর নিরূপণ করে আয়কর প্রদানকারী সংস্থা অথবা ব্যক্তির কাছ থেকে সচ্ছতা এবং সমঝোতার ভিত্তিতে সেই টাকা আদায়ের ব্যাপারটিকে একটা ‘প্রসেস অটোমেশনে'র মধ্যে ফেলেছে অনেকগুলো দেশের সংস্থাগুলো। এই কাজগুলো দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনার। কারণ একটাই। ডাটা মিথ্যা বলে না।
আয়কর সংস্থার জন্য ঝুঁকি সনাক্তকরণ
তবে আমার মনে হয়েছে, একটা আয়কর সংস্থার জন্য ঝুঁকি সনাক্তকরণ (কোথায় টাকা কম দেখানো হচ্ছে বার বার), সেটার ‘অ্যানালাইটিক্যাল’ অর্থাৎ চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং সেটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং ফলাফল মূল্যায়নের জন্য বেশিরভাগ কর সংস্থাগুলো শুরুতে জেনেরিক মডেল ব্যবহার করে। সেই মডেলগুলো দক্ষতা পেতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। মানুষের অভিজ্ঞতার মতো। যতো ডাটা, ততো ভালো কাজ করে এই মডেলগুলো।
আয়কর এবং এআই
To manage the changing tax landscape, alongside the increased use of analytics, tax authorities and tax advisors are starting to explore the possibilities for deploying sophisticated data analytics and Artificial Intelligence (AI) in tax to facilitate compliance and assist professionals and their clients with commonly encountered questions.
-- Artificial Intelligence―Entering the world of tax, Deloitte Insight
আমার দেখামতে, বিভিন্ন ধরনের মডেল আয়কর সংস্থাগুলোর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যবহার করা যায়। ‘প্রেডিকটিভ এনালাইটিক্স’ অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণগুলো সম্ভাব্য সমস্যাগুলির পূর্বাভাস দেবার চেষ্টা করে, যাতে আয়কর সংস্থাগুলো একটা সমস্যা তৈরি হবার আগেই তার ব্যবস্থা নিতে পারে। এদিকে ‘প্রেসক্রিপটিভ এনালাইটিক্স’ অর্থাৎ ‘ব্যবস্থাপূর্ণ বিশ্লেষণগুলো সংস্থাগুলোকে নতুন একটা কর ব্যবস্থা তৈরি করার আগে অথবা পরে করদাতাদের উপর সেই নতুন নীতিমালাগুলো কিভাবে প্রভাব ফেলছে অথবা ফেলবে - সেটার মডেল তৈরিতে সাহায্য করছে। এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি, ঘটনাকে সিমুলেশন করে। ঘটনা ঘটার আগে অথবা পরে করদাতারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন সেটার মডেল। এর পাশাপাশি মডেলের ধারনায় আয়কর সংস্থা নতুন কোন সেক্টর (অথবা কোন জিনিসগুলো নতুন সেক্টর হিসেবে খোলা যায়), বিভাগ বা কিছু নির্দিষ্ট কেসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ বেছে নিতে পারে, যেটা কাজ করবেই। সম্প্রতি নতুন এই পন্থাগুলো ব্যবহৃত মডেলের বিভিন্ন অংশকে এক সাথে যুক্ত করে ভালো ফলাফল পাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
বিহেভিয়ারিয়াল সাইন্স, মানুষের মনের কথা
ইদানিং দেখছি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য এবং আরও কিছু কর কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমর্থিত বেশ কিছু মডেল তৈরি করতে শুরু করেছেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি অথবা কোম্পানিগুলোকে সনাক্ত করে তার আগের প্যাটার্ন দেখে বের করে তাদের উদ্ভাবিত কোন কোন রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াগুলো (একেক কোম্পানির জন্য একেকরকম) তাদের জন্য কাজ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে কোন কোন কৌশল সেই কোম্পানি সহজেই মেনে যাবে - সেগুলো বের করার মডেল চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে বললে, কোম্পানির মনের কথা পড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেরা পদ্ধতি বের করবে, যেটা কাজ করবেই। সেই মডেলগুলোর কোন আউটপুটের ভিত্তিতে কোম্পানি/ব্যক্তি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে অথবা সহজে মেনে নেবে বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘প্রেডিকশন’ অর্থাৎ অনুমান করার চেষ্টা করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, মডেলগুলো ডাটার সাহায্য নিয়ে ভালোভাবে কাজ করছে। এই কৌশলগুলো, যা মানুষের ‘আচরণ’ বিজ্ঞানের পাশাপাশি ডাটা মাইনিংয়ের ভেতরে ঢুকে, সংস্থাটির পক্ষে যেই ‘প্রতিনিধিত্বকারী’ কেসগুলো ঠিক করে দেবে। এর পাশাপাশি, সেগুলোকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়ে তা নিশ্চিত করার কাজটা করে মডেল। ফলে রাজস্ব আদায় হয়, দুপক্ষকে খুশি রেখে। নীতিমালা মেনে।
আয়কর প্রদানকারীদের যথার্থ পরিষেবা এবং শিক্ষা প্রদান
মনে আছে তো, আয়কর সংস্থার আরেকটা বড় কাজের কথা? আমার ধারণা এটা বিশাল কাজ। প্রথম কাজ শুনেছেন আগে। দ্বিতীয়তঃ করদাতাদের নীতিমালাগুলোকে আরো সহজ এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সহজে মেনে চলার জন্য আয়কর প্রদানকারীদের যথার্থ পরিষেবা এবং শিক্ষা প্রদান। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিশ্বের বিভিন্ন আয়কর সংস্থাগুলো দ্বিতীয় অংশটির জন্য অনেক ধরনের উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসেন, যাতে সাধারণ জনগণ আয়কর ব্যাপারটাকে ভীতিকর না মনে করেন। বরং এতে উত্সাহিত বোধ করেন। দেশ গড়ায়।