বইয়ের সাথে মেন্টরশীপ
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ‘ডেটা এনালাইসিস’ নিয়ে সেরকম রেসপন্স পাবো না। এর পেছনের সমস্যা হচ্ছে, আমরা (আমি সহ) ডেটা কালচারে অভ্যস্ত নই। আমি এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেই, কারণ যেই বই এবং ভিডিওগুলো নিয়ে লিখেছিলাম অনলাইনে - গত পাঁচ বছরে, তা ইদানিং শিক্ষার্থীরা দেখছেন মাত্র। এর অর্থ হচ্ছে, জিনিস বানানো এবং সেটাকে দেখার মধ্যে একটা ‘টাইম ল্যাগ’ রয়েছে তিন বছরের।
সেটার পেছনে অনেক কারণ আছে (কনটেন্ট কোয়ালিটি সহ), তবে ডাটা নিয়ে কাজ করার এনভায়রনমেন্ট এর অনুপস্থিতি একটা বড় কারণ। সেকারণে, শুধুমাত্র ‘ডাটা এনালাইসিস’ নিয়ে বই লেখার ধারণা নিয়ে কথা বলা। একটা বই থাকলে - ‘স্টেপ বাই স্টেপ’ সবাই বুঝতে পারবেন। তবে এটাও ঠিক, অনেকে বই পড়তে চাইবেন না।
এখন দেখি প্রায় দুইশত আবেদন পড়েছে। আমার প্ল্যান হচ্ছে - শুরু করবো এই ২০০ জন নিয়েই। যেহেতু এটা একটা বিনামূল্যের ক্লাস, আমি ধারণা করছি (ফ্রি জিনিসের উপযোগিতা কম) ৩০% ক্লাসে যোগদান করবেন। ক্লাস শুরু হবে “মিউট” হিসেবে। সবাই চ্যাট উইন্ডোতে কথা বলতে পারবেন। আমার কাজ হচ্ছে আপনাদেরকে ‘হ্যান্ড হোল্ডিং’ করে ধরিয়ে দেওয়া, কিভাবে, কোথায়, কোন টুল দিয়ে, খুব সহজেই ডাটা থেকে ‘ইনসাইট’ পাওয়া যায় - যা সিদ্ধান্তের জন্য কাজে লাগবে। আমার মতে - এটাই সবচেয়ে বড় নলেজ গ্যাপ, যা পার হতে পারছেন না অনেকেই। একবার পার হলেই, আমার সাহায্য লাগবে না আর।
আমি বিশ্বাস করি, মানুষ মাত্রই ডাটা এনালাইসিস করতে পারেন, কারণ আমরা প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আমাদের আশেপাশের ডাটার ইনপুট এর উপর ভিত্তি করে। তবে সেটাকে ফর্মালাইজ করার জন্য এই মেন্টরশীপ। সবার প্রোফাইল দেখে মনে হয়েছে - ডাটার ব্যাপারে সবার ব্যাকগ্রাউন্ড বিশাল স্পেকট্রামে ছড়িয়ে আছেন। এই ব্যাপারটাকে এক কাতারে আনা অসম্ভব ব্যাপার। আর সেকারণে, একদম বেসিক থেকে শুরু করা। যাদের কাছে একদম বেসিক মনে হবে, উনার তো ক্লাস থেকে চলে যাবার পথ তো খোলাই থাকছে।
এ যুগের প্রশিক্ষণ, ডেটা ড্রিভেন সমাজের জন্য
পেশাগত কারণে প্রচুর প্রশিক্ষণের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের একটা অংশে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে প্রচুর রিসার্চ করতে হয়েছে গত এক দশক ধরে। এবারের ঘটনা একদম মাথা খারাপ করার মতো।
সামনে বেশিরভাগ কাজ ডেটার। গুগল বলছে ডেটা নির্ভর চার বছরের ডিগ্রীর জায়গায় ৬-১২ মাসের নতুন সার্টিফিকেশন তৈরি করে দেবে নতুন জনবল - একুশ শতকের জন্য। গুগল ট্রেন্ড বলছে - মার্কেটে একটা বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে এই মহামারির কারণে। ডেটা বোঝা এবং ডেটা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারা জনবল নিয়ে।
গত ২ মাস ধরে কোর্সগুলোকে ফুল স্কেলে অডিটিং করে যা বোঝা গেল, বিশাল ইনভেস্টমেন্ট করেছে গুগল এবং আইবিএম এর মতো কোম্পানিগুলো - এই গ্যাপ পূরণে। আমি তাদের কোর্সওয়ার্ক ম্যাটেরিয়াল দেখে সত্যিকারভাবে অভিভূত। এই কোর্সগুলো করতে বিশেষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার প্রয়োজন নেই।
এর পাশাপাশি, ওই কোর্সওয়ার্কগুলো এবং আমার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নন-প্রোগ্রামারদের জন্য বাংলায় আমার ডেটা অ্যানালিস্ট মেন্টরশীপ প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে জুলাই ২০২১ এর মধ্যে। একটা সত্যিকারের ডেটা-অ্যানালাইটিক্স কোর্স চালাতে সময় লাগবে ৬-৮ মাস, প্রতি সপ্তাহে ১৫-২০ ঘন্টা সময় দিলে। আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। নন-প্রোগ্রামারদের কথা ভেবে।
'এক্সক্লুসিভ' মেন্টরশীপ" মানে কী?
পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ আলাদা। সবার চাহিদাকে আলাদা করে বুঝলে ডেলিভারি সহজ হয়। আমি আপনাকে আলাদাভাবে চিনে 'স্পেসিফিক্যালি' আপনার ধারণা বোঝার চেষ্টা করবো। সে হিসেবে পুরো ক্লাস গাইড করার চেষ্টা করবো।
ক্যাডেট কলেজের ফর্ম-মাস্টার
ক্লাস সেভেনে গিয়ে পড়লাম ক্যাডেট কলেজে। আমাদের ফর্মে (সেকশন) ২৫ জন। সঙ্গে একজন 'ডেডিকেটেড' ফর্ম-মাস্টার। যার কাজ হচ্ছে এই ২৫ জনের সবকিছু দেখভাল করা। উনি নিজে জ্যামিতির শিক্ষক হলেও রসায়ন অথবা জীববিজ্ঞানে কেন খারাপ করলাম তার কৈফিয়ত দিতে দিতে জীবন শেষ। এদিকে আমাদের এই ২৫ জনের দুষ্টুমির দায়ভার নিতে হতো কলেজের ম্যানেজমেন্টের সাথে। 'প্যারেন্টস-ডে'তে মা-বাবা আসতে না পারলে উনি প্রক্সি দিতেন। রোগশোকে, হাসপাতালে ভর্তি থাকলে ডিউটি মাস্টারের পাশাপাশি খোঁজে থাকতেন এই পিতৃতুল্য মানুষটা। কর্ম জীবনে অর্থাৎ মানুষ হয়ে যাবার পরও যাদের সাথে দেখা হলে যার চোখ ভরে থাকতো স্নেহ - উনি সেই ফর্ম-মাস্টার। একে 'মেন্টরশীপ' বলে 'ফর লাইফ'।
মিলিটারি অ্যাকাডেমীর প্লাটুন কমান্ডার
৩ বছরের মিলিটারি একাডেমীর একেকজন ক্যাডেটের সবকিছু যার নখদর্পনে থাকে তিনি হচ্ছে ২০ জনের একটা প্লাটুনের - প্লাটুন কমান্ডার। একদম বেসামরিক ছাত্র থেকে একজন সামরিক অফিসার তৈরিতে উনার প্রতিটা মুহুর্তের 'কমিটেড ইনভলভমেন্ট' দেখার মতো। ভোরের মাইলটেস্ট (একটা নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে ১, ২, ১০ মাইল পাড়ি দিতে পারা) থেকে রাতে ঘুমুতে যাবার আগে ডায়েরি লেখা 'এনস্যুর' করা - প্রতিটা ক্যাডেটকে 'লিডারশিপ ইনফিউজ' করে মানুষের মতো মানুষ বানানো এই মানুষটার কাজ। একেও 'মেন্টরশীপ' বলে 'ফর লাইফ'।
৬-৮ মাসের জায়গায় ৪ সপ্তাহ কেন?
সবাই ব্যস্ত। শিখতে হবে আপনার নিজেকে। নিজের আগ্রহ থেকে। আপনাকে একটা 'ক্রসরোডে' নিয়ে যাবার দ্বায়িত্ব আমার। যাতে ব্যাপারটা ধরতে পারেন নিজে নিজে। আগ্রহ তৈরি করে দেবো আমি। সেটার মেন্টরশীপ আসবে আমার কাছ থেকে। আপনাকে সময় দিতে হবে এখানে।
রিসোর্সের জন্য চোখ রাখুন https://www.youtube.com/watch?v=K_XEnWAJO-U&list=PL5NPSn95n_L4Z5bpCOqHW_QU8nxgywGM2 এখানে।
ডেটা অ্যানালাইটিক্স, নন-প্রোগ্রামারদের জন্য কেন?
শেখানোর জন্য কলেজ পেরোনো আমার ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যাকগ্রাউন্ড দরকার নেই। দরকার একটা স্কিল। ঔৎসুক্য /বিশেষ্য পদ/ আগ্রহ, ব্যাকুলতা, উৎসুক ভাব। আর কিছু লাগবে না।
ধরে নিচ্ছি - পৃথিবীতে দু ধরনের মানুষ আছে। (১) নন-প্রোগ্রামার, (২) প্রোগ্রামার।
কেন বললেন এই কথা? আপনার প্রশ্ন। কারণ তাদের ‘প্রেজুডিস’ থাকে না - মানে ‘আমি এটা জানি ওটা জানি’। ফলে তারা মনোযোগী হন না পুরো সময় ধরে। ফলে মিস করেন অনেক কানেক্টিং লিংক। এটা অনেক ইম্পর্টেন্ট। তবে ‘আসল’ ভালো প্রোগ্রামাররা সারাজীবন ওপেন মাইন্ডেড থাকেন নতুন কিছু শিখতে।
যারা নন-প্রোগ্রামার, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আসেন এই মনোভাব নিয়ে ‘আমি তো কিছুই জানি না’, আমাকে শিখতে হবে। ‘রেইন অর শাইন’। এটা তাদের জন্য জীবন মরণ সমস্যা। তাই, তারা অনেকটাই ওপেন মাইন্ডেড। তারা জানেন, এই জিনিস শিখতে আমার যা যা শেখার দরকার সেটা শিখতেই হবে।
ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবং আমাদের চিন্তাধারা
The essence of the independent mind lies not in what it thinks, but in how it thinks. — Christopher Hitchens
ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে যে কয়েকটা স্কিলসেট দরকার - তার মধ্যে (ক) কিছু অবজেক্টের মধ্যে রিলেশন, (খ) প্যাটার্ন বের করতে পারা, (গ) ডেটার মধ্যে থেকে প্রশ্ন খুঁজে বের করতে পারা
এই স্কিলগুলো আছে সব মানুষের। শিক্ষার ব্যাকগ্রাউন্ড নির্বিশেষে। আমার কাজ হবে সেটাকে 'ধার' অর্থাৎ ধারাল করে দেয়া, যাতে আপনি একজন অ্যানালিস্টের চোখ দিয়ে সমস্যাগুলো দেখতে পারেন।