Skip to content

ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক প্ল্যানিং ও অপটিমাইজেশন গাইডলাইন

🌐 ওয়াইফাই ইনস্টলেশন ও প্ল্যানিং: কমপ্লিট ইঞ্জিনিয়ারিং গাইড

একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনার লক্ষ্য হলো গ্রাহককে শুধু 'কানেকশন' দেওয়া নয়, বরং 'কোয়ালিটি ইন্টারনেট' নিশ্চিত করা। নিচে এর প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


১. রাউটার প্লেসমেন্ট এবং রেডিও লাইন অফ সাইট (RLoS)

ওয়াইফাই সিগন্যাল মূলত রেডিও ওয়েভ, যা বাধা পেলে দুর্বল হয়ে যায়।

  • সেন্ট্রাল লোকেশন: রাউটার সবসময় ফ্ল্যাটের মাঝামাঝি কোনো রুমে বা ডাইনিং এরিয়ায় বসান। এতে সব রুমে সিগন্যাল সমানভাবে পৌঁছাবে।
  • উচ্চতা: রাউটার কখনোই মেঝেতে বা নিচু টেবিলের নিচে রাখবেন না। মাটি থেকে অন্তত ৫ ফুট উচ্চতায় দেয়াল মাউন্ট করলে সিগন্যাল বেশি দূর পর্যন্ত ট্রাভেল করতে পারে।
  • লাইন অফ সাইট (LoS): রাউটার আর ডিভাইসের মাঝখানে যত কম বাধা থাকবে, নেট তত ফাস্ট চলবে। রাউটারকে আলমারি বা পর্দার আড়ালে রাখা যাবে না।

২. বিল্ডিং পেনিট্রেশন ও সিগন্যাল লস (Attenuation)

আমাদের দেশের বাড়িগুলো মূলত ইট-সিমেন্টের তৈরি, যা ওয়াইফাই সিগন্যালের বড় শত্রু। সিগন্যাল যখন কোনো বাধার ভেতর দিয়ে যায়, তখন তার শক্তি বা dBm (decibel-milliwatts) কমে যায়।

  • কাঁচ বা কাঠ: এতে লস খুব কম (প্রায় ৩ dB)।
  • ইটের দেয়াল: একটি ইটের দেয়াল পার হলে সিগন্যাল শক্তি প্রায় ১০-১৫ dB কমে যায়। অর্থাৎ, সিগন্যাল অর্ধেক বা তারও বেশি দুর্বল হয়ে যায়।
  • আরসিসি (RCC) পিলার/দেয়াল: এগুলো সিগন্যালকে প্রায় ৯০% পর্যন্ত শুষে নেয়। তাই পিলারের পেছনে রাউটার বসালে পাশের রুমে নেট পাওয়া যাবে না।

৩. ডুয়াল ব্যান্ড এবং চ্যানেল সিলেকশন

আজকাল বেশিরভাগ রাউটারে ২.৪ গিগাহার্টজ এবং ৫ গিগাহার্টজ—এই দুটি ব্যান্ড থাকে।

  • ২.৪ গিগাহার্টজ (2.4 GHz): এটি অনেক দূর পর্যন্ত যায় এবং দেয়াল ভেদ করতে পারে। তবে এর স্পিড কম। এখানে সবসময় চ্যানেল ১, ৬ অথবা ১১ ব্যবহার করবেন, কারণ এই চ্যানেলগুলো একে অপরের সাথে ওভারল্যাপ (ধাক্কাধাক্কি) করে না।
  • ৫ গিগাহার্টজ (5 GHz): এটি খুব উচ্চগতির ইন্টারনেট দেয় কিন্তু এর রেঞ্জ কম এবং দেয়াল ভেদ করতে পারে না। একই রুমে গেমিং বা টিভি স্ট্রিমিংয়ের জন্য এটি সেরা।
  • চ্যানেল উইডথ: ২.৪ গিগাহার্টজে ইন্টারফারেন্স কমাতে চ্যানেল উইডথ সবসময় 20 MHz রাখুন।

৪. EIRP ও সিগন্যাল পাওয়ার ক্যালকুলেশন

EIRP (Effective Isotropic Radiated Power) হলো রাউটারের মোট আউটপুট পাওয়ার।

  • অ্যান্টেনা গেইন (dBi): রাউটারে থাকা অ্যান্টেনা সিগন্যালকে কতটা ছড়িয়ে দিচ্ছে সেটা হলো গেইন। ৫ ডিবিআই (5 dBi) অ্যান্টেনা সাধারণ ফ্ল্যাটের জন্য আদর্শ।
  • পাওয়ার ভারসাম্য: রাউটারের ট্রান্সমিট পাওয়ার খুব বেশি বাড়িয়ে দিলে সিগন্যালে নয়েজ (Noise) বাড়ে। তাই সবসময় 'High' পাওয়ার না দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সেট করুন।

৫. SNR এবং সেনসিটিভিটি (Sensitivity)

শুধু সিগন্যাল স্ট্রেন্থ (Bars) থাকলেই নেট চলবে না, সিগন্যালটি পরিষ্কার হতে হবে।

  • SNR (Signal-to-Noise Ratio): এটি হলো সিগন্যাল এবং আশেপাশের নয়েজের পার্থক্য। ভালো ইন্টারনেটের জন্য SNR অন্তত ২৫ ডিবি (25 dB) হওয়া উচিত।
  • ডিভাইস সেনসিটিভিটি: মনে রাখবেন, রাউটার শক্তিশালী হলেও গ্রাহকের মোবাইল যদি পুরনো হয়, তবে সে রাউটারের সিগন্যাল ঠিকমতো রিসিভ করতে পারবে না। একে 'অ্যাসিমেনট্রিক লিংক' বলে।

৬. টেকনিশিয়ানদের জন্য ফাইনাল চেকলিস্ট

বাসায় কাজ শেষ করার আগে নিচের ভ্যালুগুলো 'WiFi Analyzer' অ্যাপ দিয়ে মিলিয়ে নিন:

  1. RSSI (সিগন্যাল স্ট্রেন্থ): এটি যেন -৩০ থেকে -৬৫ dBm-এর মধ্যে থাকে। -৭০ এর নিচে গেলে গ্রাহক বাফারিংয়ের অভিযোগ করবেন।
  2. স্পিড টেস্ট: প্যাকেজ অনুযায়ী স্পিড ল্যান (LAN) এবং ওয়াইফাই—উভয় মোডে চেক করুন।
  3. পিং (Ping): গেমিং গ্রাহকদের জন্য পিং যেন ২০ms-এর নিচে থাকে।

!!! info "একটি বাস্তব উদাহরণ"
ধরুন, গ্রাহকের রাউটার ড্রয়িং রুমে। তিনি মাস্টার বেডরুমে (মাঝখানে দুটি দেয়াল) স্পিড পাচ্ছেন না।

**সমাধান:** প্রথমে রাউটারটি ডাইনিং এরিয়ায় (মাঝামাঝি) আনুন। এরপর ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের চ্যানেল অটো থেকে সরিয়ে ১ বা ৬ নম্বর চ্যানেলে সেট করে দিন। গ্রাহককে বুঝিয়ে বলুন যে দেয়ালের কারণে ৫ গিগাহার্টজ সিগন্যাল ড্রপ করছে, তাই তিনি যেন বেডরুমে ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যবহার করেন।