ওয়াইফাই অপটিমাইজেশন গাইড
চ্যানেল সিলেকশন: জ্যাম কমানোর উপায় (১)¶
রাস্তার ট্রাফিকের কথা চিন্তা করুন। যদি সব গাড়ি এক লেনে চলে, তবে জ্যাম লাগবেই। ওয়াইফাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই।
২.৪ গিগাহার্টজ (2.4 GHz)¶
এই ব্যান্ডে ১ থেকে ১১ পর্যন্ত চ্যানেল থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রতিটা চ্যানেল তার পাশের চ্যানেলের ওপর গিয়ে পড়ে (ওভারল্যাপ করে)। শুধুমাত্র ১, ৬ এবং ১১ নম্বর চ্যানেলগুলো একে অপরের থেকে আলাদা থাকে। তাই আশেপাশে যদি অনেক ওয়াইফাই থাকে, তবে সবসময় এই তিনটার যেকোনো একটা সেট করবেন।
৫ গিগাহার্টজ (5 GHz)¶
এখানে চ্যানেলের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এরা একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় না। তাই এই ব্যান্ডে জ্যাম অনেক কম থাকে।
টিপস: ফোনে একটা 'WiFi Analyzer' অ্যাপ দিয়ে দেখে নেবেন কোন চ্যানেলে অন্য রাউটার কম আছে, গ্রাহকের রাউটারে ঠিক সেই চ্যানেলটা ম্যানুয়ালি সেট করে দেবেন।
EIRP: সিগন্যালের শক্তি মাপার সূত্র (২)¶
EIRP-এর পূর্ণরূপ হলো Equivalent Isotropically Radiated Power। সহজ বাংলায়, একটা রাউটার তার অ্যান্টেনা দিয়ে মোট কতটুকু শক্তি বাতাসে ছাড়ছে সেটাই হলো EIRP।
এটা বোঝার জন্য একটা সহজ অংক মনে রাখতে পারেন:
এখানে:
-
\(P_{out}\): রাউটার কতটুকু পাওয়ার তৈরি করছে (dBm)।
-
\(C_{l}\): রাউটার থেকে অ্যান্টেনা পর্যন্ত আসতে ক্যাবলে যেটুকু লস হয় (Cable Loss)।
-
\(G_{a}\): অ্যান্টেনা সিগন্যালটাকে কতটুকু বাড়িয়ে দিচ্ছে (Antenna Gain)।
কেন এটা জানা জরুরি?¶
অনেক সময় আমরা ভাবি ৫ ডিবিআই (\(5\text{ dBi}\)) অ্যান্টেনার জায়গায় ৯ ডিবিআই (\(9\text{ dBi}\)) অ্যান্টেনা লাগালেই নেট সুপার ফাস্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বিটিআরসি (BTRC) বা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সীমার বেশি পাওয়ার বাতাসে ছাড়া যায় না। সিগন্যাল বেশি পাওয়ারফুল হলে পাশের বাসার সিগন্যালে ডিস্টার্ব হয়, যেটাকে আমরা 'ইন্টারফারেন্স' বলি। তাই রাউটারের সেটিংস থেকে পাওয়ার 'High' করার আগে দেখবেন সেটা আসলে সিগন্যাল ভালো করছে নাকি নয়েজ বাড়াচ্ছে।
ইন্টারফারেন্স ও নয়েজ ফ্লোর (৩)¶
ওয়াইফাই সিগন্যালের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস। বাসার মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লুটুথ স্পিকার বা কর্ডলেস ফোন—এগুলোও ২.৪ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে।
পরামর্শ: রাউটার যেন মাইক্রোওয়েভ বা বড় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের খুব কাছে না থাকে। যদি নয়েজ ফ্লোর বেশি থাকে (অর্থাৎ সিগন্যালে অনেক বেশি বাধা থাকে), তবে ইন্টারনেটের স্পিড ড্রপ করবেই, যতই ভালো রাউটার হোক না কেন।
রিসিভার সেন্সিটিভিটি: ডিভাইস ভেদে ভিন্নতা (৪)¶
মনে রাখবেন, রাউটার শক্তিশালী হলেও গ্রাহকের ফোন যদি পুরনো হয়, তবে লাভ নেই। এটাকে বলে 'অ্যাসিমেনট্রিক লিঙ্ক'। রাউটার হয়তো অনেক দূরে সিগন্যাল পাঠাতে পারছে, কিন্তু ফোনের অ্যান্টেনা দুর্বল হওয়ায় সে রাউটারকে উত্তর পাঠাতে পারছে না। গ্রাহককে এটা বুঝিয়ে বলতে হবে যে, সব ডিভাইসের সিগন্যাল ধরার ক্ষমতা এক নয়।
একটা টেকনিক্যাল উদাহরণ
ধরুন, গ্রাহকের রাউটারের পাওয়ার সেট করা আছে \(20\text{ dBm}\)। অ্যান্টেনার গেইন হলো \(5\text{ dBi}\)। ক্যাবলে যদি \(1\text{ dB}\) লস হয়, তবে মোট শক্তি বা EIRP হবে:
যদি দেখেন এই পাওয়ারে সিগন্যাল অনেক দূর যাচ্ছে কিন্তু গ্রাহকের ফোনে নেট স্লো, তবে বুঝবেন সেখানে ইন্টারফারেন্স হচ্ছে। সেক্ষেত্রে চ্যানেল বদলে দেখাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।