ওয়াইফাই প্ল্যানিং ও ইনস্টলেশন
সকল ইঞ্জিনিয়ার এবং টেকনিশিয়ানদের জন্য ওয়াইফাই ইনস্টলেশন ও প্ল্যানিং-এর এই গাইডলাইনটি তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু গ্রাহকরা নিজেদের রাউটার নিজে কেনেন, তাই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের সেই ডিভাইস থেকেই সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স বের করে আনা।
ওয়াইফাই প্ল্যানিং ও ইনস্টলেশন: সহজ গাইডলাইন¶
রাউটার বসানোর জায়গা ও রেডিও লাইন অফ সাইট (RLoS)¶
ওয়াইফাই সিগন্যাল অনেকটা আলোর মতো কাজ করে। রাউটারটা এমন জায়গায় বসাতে হবে যেখান থেকে পুরো ঘরের বেশিরভাগ অংশ সরাসরি দেখা যায়। এটাকে আমরা বলি 'রেডিও লাইন অফ সাইট'। রাউটার যদি কোনো আলমারির ভেতরে বা কোণায় লুকিয়ে রাখা হয়, তবে সিগন্যাল বাধা পাবে। মনে রাখবেন, দেয়াল বা বড় ফার্নিচার সিগন্যাল শুষে নেয়। একে বলে 'বিল্ডিং পেনিট্রেশন'। পাতলা দেয়াল সিগন্যাল কিছুটা পার করতে পারলেও আরসিসি (RCC) পিলার বা আয়না সিগন্যাল পুরোপুরি আটকে দিতে পারে। তাই রাউটার সবসময় দেয়াল থেকে অন্তত ১-২ ফিট দূরে এবং একটু উঁচুতে বসানোর চেষ্টা করবেন।
ডুয়াল ব্যান্ড ও ফ্রিকোয়েন্সি সিলেকশন¶
আজকাল বেশিরভাগ রাউটারই ডুয়াল ব্যান্ডের হয়—২.৪ গিগাহার্টজ (2.4 GHz) আর ৫ গিগাহার্টজ (5 GHz)। ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের সিগন্যাল অনেক দূর পর্যন্ত যায় এবং দেয়াল ভেদ করার ক্ষমতা বেশি, কিন্তু ইন্টারনেটের স্পিড কিছুটা কম থাকে। অন্যদিকে, ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে অনেক বেশি স্পিড পাওয়া যায় কিন্তু এটার রেঞ্জ কম এবং দেয়াল থাকলে সিগন্যাল দ্রুত কমে যায়। গ্রাহককে বুঝিয়ে বলবেন, যারা গেমিং করেন বা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন তারা যেন ৫ গিগাহার্টজ ব্যবহার করেন আর যারা একটু দূরে থেকে সাধারণ কাজ করেন তারা যেন ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যবহার করেন।
চ্যানেল সিলেকশন ও স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট¶
রাউটার ইনস্টল করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক চ্যানেল বেছে নেওয়া। আপনার আশেপাশে যদি অনেকগুলো রাউটার থাকে, তবে তাদের সিগন্যাল একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে দেয়। ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের জন্য ১, ৬ এবং ১১ নম্বর চ্যানেলগুলো সবচেয়ে ভালো কারণ এগুলো একে অপরের ওপর ওভারল্যাপ করে না। ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারফারেন্স বা জ্যাম অনেক কম থাকে, তাই সেখানে অটো চ্যানেল রাখলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। সবসময় অ্যাপ দিয়ে চেক করে দেখবেন কোন চ্যানেলটা সবচেয়ে ফাঁকা আছে।
EIRP ক্যালকুলেশন ও সেনসিটিভিটি¶
সহজ কথায় বলতে গেলে, 'EIRP' হলো একটা রাউটার কতটুকু শক্তিতে সিগন্যাল ছাড়তে পারছে। আমরা চাইলেই রাউটারের পাওয়ার একদম বাড়িয়ে দিতে পারি না, কারণ তাতে সিগন্যাল নয়েজ বেড়ে যেতে পারে। আবার রিসিভিং ডিভাইসের (যেমন ফোন বা ল্যাপটপ) একটা 'সেনসিটিভিটি' বা সিগন্যাল ধরার ক্ষমতা থাকে। সিগন্যাল খুব বেশি শক্তিশালী হলেই যে নেট ভালো চলবে তা নয়, বরং সিগন্যালটা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। গ্রাহকের ডিভাইস যদি খুব পুরনো হয়, তবে তার সেনসিটিভিটি কম থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে রাউটারের কাছাকাছি থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবেন।
একটা সহজ উদাহরণ¶
ধরুন, আপনার একজন গ্রাহক একটা তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে থাকেন। তিনি রাউটারটা বসিয়েছেন একদম ড্রয়িং রুমের কোণায়। এখন শেষ মাথার বেডরুমে গিয়ে তিনি স্পিড পাচ্ছেন না।
সমাধান:
-
রাউটারটা ড্রয়িং রুমের কোণা থেকে সরিয়ে ঘরের মাঝামাঝি কোনো জায়গায় (যেমন ডাইনিং স্পেস) বসাতে হবে।
-
মাঝখানের দেয়ালগুলো সিগন্যাল কমিয়ে দিচ্ছে কিনা সেটা চেক করতে হবে।
-
৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের বদলে তাকে ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের সাথে কানেক্ট করে দেখতে হবে রেঞ্জ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে কিনা।
-
যদি আশেপাশে অনেকগুলো ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক দেখা যায়, তবে ফোনের অ্যাপ দিয়ে দেখে সবচেয়ে ফাঁকা চ্যানেলটি (যেমন চ্যানেল ৬) সেট করে দিতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারদের বলছি, আপনারা যখন গ্রাহকের বাসায় যাবেন, তখন শুধু কানেকশন দিয়ে আসবেন না; বরং রাউটারের সেটিংস অপটিমাইজ করে দিয়ে তাকে একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা দেবেন। এতে সেবার মান ও সুনাম দুটোই বাড়বে।