ডাটা নিয়ে কাজ শিখলে কি চাকরি পাওয়া যাবে?

প্রশ্ন: আচ্ছা, ডাটা নিয়ে কাজ শিখলে কি চাকরি পাওয়া যাবে?

আমার উত্তর: চাকরির জন্য শিখতে চাইলে শেষ পর্যন্ত সেই চাকরি আর হয় না। ব্যাপারটা মুখস্তের নয়। বরং, সমস্যা সমাধানের জন্য শিখলে চাকরিই আপনাকে খুঁজে নেবে। আমার অনুরোধ, বর্তমানে যেখানে চাকরি করছেন (যেই ক্যাটাগরিতে হোক না কেন), তার পাশাপাশি প্রতিমূহুর্ত শিখবেন। বিশেষ করে ডাটা নিয়ে। এটাই ভবিষ্যত। আপনি চেষ্টা করবেন কিভাবে ডাটা ব্যবহার করে আপনার বর্তমান চাকরির কাজগুলোকে আরো দক্ষ করা যায়। কিভাবে প্রসেসগুলো কে অটোমেশনে নিয়ে আসা যায়। তাহলেই দেখবেন আপনি তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছেন।

কী ধরনের স্কিল থাকা প্রয়োজন?

বর্তমান যুগে যেখানে প্রিমিয়াম জ্ঞান প্রায় “বিনামূল্যে” পাওয়া যায়, সেখানে সেটাকে শিখতে একজনের যেই আগ্রহ থাকা দরকার, সেটা থাকলেই আমি তাকে টিমে নিয়ে নেই। কারণ, তাকে তৈরী করে নেয়া সম্ভব। আগ্রহই সব। নতুন যেকোনো জিনিস শেখার ক্ষেত্রে।

যে যতো ভালো অথবা খারাপ জানুক না কেন, শেষমেষ অ্যাটিচ্যুডটাই আসল। সার্টিফিকেটের দাম কমে আসছে, কারণ ডেলিভারিটাই ইম্পরট্যান্ট। ডিগ্রী নয়। ডিগ্রী দিয়ে কি হবে যখন কোম্পানির প্রয়োজনে আসল কাজটাই ডেলিভারি না হয়?

** ডাটার ব্যবহার বাড়ার কারণে আপনি যেই পেশায় থাকুন না কেন, ভবিষ্যতে সবাই (কোম্পানিগুলো) নিজ নিজ চাকরিতে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ডাটা অ্যানালিস্ট চাইবেন। তখনতো ডাটার খেলা, ডাটা থেকে জ্ঞান বের করতে হবে নিজেকে। খানিকটা কম্পিউটার ব্যবহার নিজে থেকে জেনে রাখার মতো। এখন যেমন প্রযুক্তিগত চাকরিতে আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেন না যে, আপনি কম্পিউটার পারেন কি পারেন না?

আমাদের সমস্যা কোথায়? এডুকেশন সিস্টেমে?

আমি একটা সাধারণ উদাহরণ দেই আপনাকে। বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি সফটওয়্যার (সলিউশন) কেনে প্রতিবছর। আমি সফটওয়্যার বলছি এ কারণে, হার্ডওয়ার সবসময় কমার্শিয়াল অফ দা সেল্ফ, মানে ডেল এইচপি ইত্যাদি। যে কোন সিস্টেম প্রসেস কে অটোমেট করার জন্য এর পেছনে এত এত সফটওয়্যার থাকে, তাদের লোকাল সাপোর্ট দেবার জন্য লোক পাওয়া যায় না। একসময়ের সেই লোকাল সার্পোট দেবার জন্য অনেক অনেক টাকা খরচ করে দেশে বাইরের থেকে লোক আনতে হয়। এটি বিদেশীরাও অবাক হয়। এতোদিনেও তোমার দেশের মানুষ তৈরি করতে পারো নি তোমরা? সে কারণে এতগুলো বই লেখা। এতে মনে কষ্ট পাই। তবে, সেটার জন্য দোষারোপ করে লাভ নেই। সরকারও আমাদের মত কোন মানুষ চালাচ্ছেন। হয়তোবা আমরা তাদেরকে ঠিকমতো বোঝাতে পারছি না, সেটা আমাদের ব্যর্থতা।

আমাদের এডুকেশন সিস্টেম নিয়ে কথা বলবো না, তবে পৃথিবীর সাথে টেক্কা দিতে হলে সবাইকে এডুকেশন সিস্টেমের বাইরে এসে ফাইট দিতে হবে। উন্নত বিশ্বের এডুকেশন সিস্টেম হয়তোবা তাদেরকে একটু বেনিফিট দেয়, তবে আমাদের দেশের ছেলেপেলেরা দেশের বাইরে যেয়ে তারা ঠিকই নতুন করে শিখে টেক্কা দিচ্ছে। আমি বেশ বড় একটা লম্বা সময় ধরে প্রসেস অটমেশন দেখেছি পৃথিবীতে, সে তার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীতে এখন বড় বড় কোম্পানিগুলো সব সফটওয়্যার কোম্পানি। আমাদের বিকাশ, পাঠাও, দারাজ, ইত্যাদি ইত্যাদি সবাই সফটওয়্যার কোম্পানি।

আমরা কি সেভাবে তৈরি হতে পারছি? অথবা গ্লোবালি আমাদের রিসোর্স পাঠাতে পারছি সেভাবে? পারছিনা। সে কারণেই সবাইকে আস্তে আস্তে গ্লোবাল স্কেলে নেবার জন্য আমার ক্ষুদ্রতম প্রয়াস।

পৃথিবীর সব বড় বড় সমস্যার সমাধান হচ্ছে এডুকেশন। এই সমস্যা যে ক্র্যাক করতে পারবে, ভবিষ্যৎ তার।

বাবা মা’র কথামতো বুয়েটে/ভালো সাবজেক্টে না চান্স পেলে কি হবে?

মানুষ হার্ভার্ডে কেন পড়ে? ভালো শিক্ষা? কিছুটা তো অবশ্যই। তবে তার চেয়ে যেটা বেশি কাজে লাগে সেটা হচ্ছে পারিপার্শ্বিক এনভায়রনমেন্ট এবং নেটওয়ার্কিং। এক্সপেরিয়েন্স। মানুষ আগে জমিজমা কিনতো, এখন পয়সা দেয় এক্সপেরিয়েন্স এ। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়।

বুয়েট হয়তোবা সেটাই দেয়, একটা বিশাল এলামনাই। যারা বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিতে নিয়ে যায় তাদের পরের ব্যাচ গুলোকে। তবে দিস ইজ নট দা এন্ড অফ লাইফ। এই পৃথিবীকে দেবার অনেক কিছুই আছে আমাদের। আমি আমার সন্তানদের বলি, সামনের যুগের স্কিলসেট ইম্পর্টেন্ট, ডিগ্রী তো নয়ই। আমি আমার চাকরীর জীবনে ছয়বার re-skiling করেছি, যুগের সাথে তাল মেলাতে।

বুড়োরা কেন গল্প বেশি বলে? তাদের হাজারো পার্সপেক্টিভ, কানেক্টিং দ্যা ডটের মত। আমি শুরুতে প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে চাইনি, কারণ প্রযুক্তি বোঝার মত লেভেলটা তৈরি হয়নি অনেক জায়গায়। সে কারণেই সাহায্য নিয়েছি স্টোরি টেলিং এ। মজার কথা হচ্ছে, যে বইগুলোতে গল্প বেশি লিখেছি সেগুলো শেষমেষ বিক্রি হয়েছে বেশি।

পরিসংখ্যান একটা অসাধারণ সাবজেক্ট, আমি না বুঝে নিয়েছিলাম ক্যাডেট কলেজে থাকার সময় ক্লাস টুয়েলভে। তখন মজা পাইনি, এখন পাচ্ছি। আসলেই মজার। আমার ভাই ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় পড়ায়, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লাইড স্টাটিস্টিকস থেকে পড়াশোনা করে গিয়েছে। ইনফরমেশন সিকিউরিটি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে পারেন, এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং যোগ হচ্ছে সামনে।

অফ টপিক: আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি দায়িত্ব নিতো প্লেসমেন্টের, পড়াশোনার শেষে চাকরির, তাহলে তারাই সাজেস্ট করত কোনটা পড়লে সেই ছেলে অথবা মেয়েটা ভবিষ্যতে কোথাও যেতে পারবে। আপনি ইনভেস্ট করছেন তারা আপনাকে যোগ্যতা অনুযায়ী প্লেস করবে। না হলে টাকা ফেরত। ভবিষ্যতের “টপ নচ” বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেটাই করবে। আমি নিজেও এডুকেশনে আসছি সামনে, আমি সেটাই করব। এডুকেশন বিজনেস মানে আরেকটা সফটওয়্যার কোম্পানি। সঙ্গে “লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম”, LMS হচ্ছে education 2.0।

ফাইনালি, যেটাই শিখতে চান না কেন, মনে রাখবেন এটা long-haul জার্নি। যে জিনিস নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনার বুকের ভেতরে কম ভারী মনে হয়, মাথায় কিছুটা বেশি “ইলুমিনেশন” বের হয়, সেটাতেই থাকা উচিত। এই ভালোবাসাটা সারাজীবনের।

আমরা পিতা-মাতারা অনেক সময়ে কনভেনশনাল উইজডম নিয়ে কথা বলি (আমার বাচ্চাদের কেও আমি বলি, এটা এক ধরনের ভালবাসা), তাদেরকে বুঝিয়ে আগানো শ্রেয়। তাদের জন্য এবং আপনার জন্য দুই পক্ষেরই মানসিক সাপোর্ট লাগবে এই জার্নিতে।

সব বইয়ের কনটেন্ট ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’ লাইসেন্সে

আমার বইগুলোর সব কনটেন্ট অনলাইনে রাখা আছে ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’ লাইসেন্সের ভিত্তিতে। ফলে একটা বই কেনার আগে পুরো কনটেন্ট পড়ে বইটা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

ডিপ লার্নিং এর বাংলা বই

পাইথন প্রোগ্রামিং পাইথন ডিপ লার্নিং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং

পাবেন এখানে