সবকিছুর পেছনের দর্শনটা জানলে অনেককিছুই বোঝা সহজ হয়। তাই বলে এতো - এতো গল্প? গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত যাচ্ছি যে?
কানেক্টিং দ্য ডটস
তবে, ঠিক বলেছেন। আমি আপনার মতামতকে শ্রদ্ধা করি। আমার বয়স বেশি বলে যে কোন সাধারণ জিনিস বোঝাতে অনেকগুলো কন্টেক্সট নিয়ে আসি। এটা হয়তোবা বয়সের সমস্যা। তবে, মানুষের যতো অভিজ্ঞতা বাড়ে, ততো ডটগুলোকে কানেক্ট করি আমরা। সত্যি কথা বলতে, ‘স্টোরি টেলিং’ থেকেই কনসেপ্ট আসে। এজন্য আমরা পিথাগোরাসের সূত্র মনে না রাখলেও খরগোশ এবং কচ্ছপের গল্পটা ঠিকই মনে রাখি। তবে, কনসেপ্ট ঠিক হয়ে গেলে গল্প কমতে থাকবে আস্তে আস্তে।
আমার যতোগুলো বই বিক্রি হয়েছে তার মধ্যে অনেকটাই গল্পের বই - অর্থাৎ ‘হাতেকলমে মেশিন লার্নিং’ - লাল বইটার বিক্রির পেছনে আমার গল্পগুলোই টেনেছে পাঠকদের বেশি।
বেড়েছে শিক্ষার হার, তবে কমেছে মান
বাংলা ভাষায় প্রযুক্তি বিষয়ক বই লিখে কোন লেখকের জীবনধারণ করতে পারেন না বলে, অ্যাডভান্সড বইগুলো এখনো ইংরেজিতে আছে। তবে, হাতের ডাটা বলছে - শিক্ষার হার বেড়েছে, তবে কমেছে মান। আগের থেকে আমাদের ইংরেজির দখল কমে আসছে সামগ্রিকভাবে। সেটার কিছু ‘স্ন্যাপশট’ দেখবেন সোশ্যাল মিডিয়া ‘ইন্টারঅ্যাকশনে’। আমি ব্যাপারটাকে একটা ‘সিম্পটম’ হিসেবে দেখছি। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন চাকুরীর ইন্টারভিউতে একটা বড় অংশ খারাপ করছেন। আমাকে প্রচুর মানুষ বলছেন, তারা ইংরেজি ভিডিও/গাইডগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না। আর সেকারণে, প্রযুক্তিভিত্তিক লেখকগণ ব্যক্তিগত সময়ে এই কাজগুলো করেন যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলায় যেকোনো সমস্যার ‘ইন্টারনালাইজেশন’ অর্থাৎ মাতৃভাষায় বুঝতে পারেন। আমি বই সেভাবে লিখি, যেভাবে আমি ছোটবেলায় একটা বাংলা বই চাইতাম।
বাংলায় প্রযুক্তির লেখালেখিকে ‘প্রফেশনালি’ না নিতে পারা
ব্যাপারটা এমন যে - আমরা একটা বই লিখতে যতো সময় ব্যয় করি, তার ‘ভগ্নাংশ’ সময় অন্য যেকোনো জায়গায় দিলে তার থেকে বেশি আয় করা সম্ভব। তবে, আমরা যারা প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসি, তারা সেই আয় নিয়ে চিন্তা করেন না। তবে, এটা সত্যি যে - যতক্ষণ পর্যন্ত এই লেখালেখি করে জীবন ধারন করা সম্ভব হচ্ছে না, ততোদিন পর্যন্ত এই লেখালেখি ‘প্রফেশনালি’ নিতে পারছেন না অনেকেই। আমি জানি না, তবে পাঠ্যপুস্তক বইয়ের কথা আলাদা হতে পারে। আমি নিজেও চাই সারাদিন ধরে লেখালেখি করতে, একটা ‘কোয়ালিটি’ সময় দিতে - তবে জীবনধারণের জন্য আমাদের এখনও সে সময় আসেনি। বিশেষ করে বাংলাকে প্রযুক্তির ভাষায় নিয়ে আসতে। যেহেতু আমরা শুরু করেছি, আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে সামনের বাংলা বইগুলো আরো সহজতর হবে।
বইয়ের দাম নিয়ে বিতর্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাকে প্রচুর বই কিনতে হয় যার একেকটার দাম ৪০+ ডলার থেকে ১০০ ডলারের মতো পড়ে। সে তুলনায় একটা ভালো মানের কফি, বার্গার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের উপাদান ৫ ডলারের মধ্যে পাওয়া যায়। সেখানে - বাংলাদেশে একটা বইয়ের দাম কেএফসি’র বার্গারের দামেরও কম। আর সেকারণে পেশাদার বই লেখক ‘পেশা’ হিসেবে গড়ে উঠেনি। একেকটা বইয়ের পেছনে যতোটুকু রিসার্চ লাগে, সেটার বাজার মূল্য সেভাবে তৈরি হয়নি।
একটা প্রযুক্তি বইয়ে শুরু থেকে ইন্টারমিডিয়েট বিষয়গুলো সহজভাবে বোঝাতে গেলে বইয়ের পৃষ্ঠা কলেবর বেড়ে যাবে ভেবে পৃষ্ঠার সীমাবদ্ধতা একটা সমস্যা। কারণ বইয়ের পৃষ্ঠার কারণে বইয়ের দাম বাড়লে সেটা বিক্রি হয় কম। প্রযুক্তি বিষয়ে ৭০০ পৃষ্ঠার বই চলার মতো বাজার তৈরি হয়নি এখনও। এর পাশাপাশি, প্রকাশক যিনি ইনভেস্ট করছেন তার টাকাটাও উঠতে হবে। সেজন্য মধ্যপন্থা। তবে, অনেক ‘ইন্টার-মিডিয়েট’ লেখা বইয়ে না থাকলেও সেটা ওয়েবসাইটে থাকবে। যারা আরো জানতে চান - তাদের জন্য বাড়তি অংশগুলো ওয়েবসাইটে দেখে নিতে পারেন। সেরকমভাবে, হাতে-কলমে পাইথন ডিপ লার্নিং বইয়ের অনেকগুলো গল্প ওয়েবসাইটে আছে।
সব বইয়ের কনটেন্ট ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’ লাইসেন্সে
আমার বইগুলোর সব কনটেন্ট অনলাইনে রাখা আছে ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’ লাইসেন্সের ভিত্তিতে। ফলে একটা বই কেনার আগে পুরো কনটেন্ট পড়ে বইটা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
শুরুতে হাতেকলমে, এখনই রিসার্চ নয়
If your only tool is a hammer then every problem looks like a nail.
– Abraham Maslow
আমার দর্শন হচ্ছে প্রযুক্তিটাকে শুরুতে হাতে-কলমে শেখানো। একটা জিনিস না চালাতে পারলে সেটার ওপরে রিসার্চ করতে পারা দুস্কর। আর তাই, যারা শুরুতেই রিসার্চ করতে চান তাদের জন্য বইগুলো নয়। রিসার্চ লেভেলে কাজের জন্য বইয়ের ধরণ আলাদা।
ব্যাপারটা এবং যে - আমরা এখন গ্রাফিক্স প্রসেসর ব্যবহার করে ডিপ লার্নিং দিয়ে একটা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করব নাকি সেই গ্রাফিক্স প্রসেসর কিভাবে কাজগুলো করছে তার পেছনে কাজ করব, সেটা যিনি কাজ শুরু করবেন তার সিদ্ধান্ত। গবেষণা অবশ্যই ভালো, তবে তার জন্য যথোপযুক্ত এনভায়রনমেন্ট না পেলে আগের গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহার করাটাই আমার কাছে প্রায়োরিটি মনে হয়। বাকিটা এখানে দেখতে পারেন।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
বাংলায় ডিপ লার্নিংয়ের একমাত্র বই
এই বইটা শুরুতে খসড়া ৭০০ পৃষ্ঠা থাকলেও সেটাকে কমিয়ে আনতে হয়েছিল ৪০০ পৃষ্ঠায়। এই বইয়ের দাম নিয়েও সমস্যা আছে বাজারে। তবে, প্রযুক্তিনির্ভর বইগুলোতে এই দামের সমস্যা কাটবে অচিরেই।
পাবেন এখানে।