কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | বাংলায়

বই ওপেনসোর্স প্রজেক্ট হিসেবে উন্মুক্ত করার ব্যাপারে ইন্ডাস্ট্রিতে বিতর্ক রয়েছে। একটা মতামত হচ্ছে, সবাই যদি তার নিজের বই উন্মুক্ত করে দেন, তাহলে প্রফেশনাল লেখকরা বই লিখতে উৎসাহী হবেন না। কারণ, একটা বই, যদি ‘প্রফেশনালি’ অর্থাৎ পেশাদারিত্বের সাথে লেখা হয়, সেটার পিছনে রিসার্চ এবং ব্যবহৃত সময়ের একটা রেভিনিউ ম্যাপিং থাকতে হবে। এটা না হলে ফিকশন, নন ফিকশন এবং প্রযুক্তি নির্ভর বইগুলো তার উৎকর্ষ হারাবে।

এর পাশাপাশি, যারা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন, এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান - তাদের বই লেখার বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি অনেকে বই লিখে যেতে চান জীবনের তাৎপর্য খুজে পেতে। এখানে একটা কনফ্লিক্ট চলে আসে। এই দ্বিতীয় গ্রুপটা হয়তোবা বই লেখাকে পেশা হিসেবে নেননি। তারা বই লেখেন মনের আনন্দে, নিজের জ্ঞান অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। অনেকটাই “স্ট্যান্ডিং অন দা সোল্ডারস অফ জায়ান্ট” এর মতো। এই বইগুলোর উপরে ভিত্তি করে পরিমার্জন হয় দেশের নীতিমালা।

আমি যখন বই লেখা শুরু করেছি, তখন আমার হাতে পুঁজি ছিল প্রযুক্তিভিত্তিক সার্ভিস ডেলিভারি করার অভিজ্ঞতা। তবে, আমার লাইনের গ্লোবাল বেস্টসেলার বইগুলো পড়া শুরু করলাম বুঝতে, কিভাবে ব্যাপারগুলোকে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই বইগুলোর প্রতিটার দাম ৫০-১০০ ডলার (পাঁচ, দশ হাজার টাকা) হলেও আমাদের বইগুলোকে ৪০০-৫০০ টাকা দাম ধার্য করতে ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ বাংলাদেশে বই বিক্রি হয় ফর্মা ধরে, পৃষ্ঠা গুনে, মেধাস্বত্ব এর দাম নেই। একটা বইয়ের পিছনে ছয়/নয় মাস সময় দিয়ে যেই রেভিনিউ আসে, ওই সময়টা অন্য কোথাও দেয়া হলে তার থেকে বহুগুণ রেভিনিউ আনা যায়।

তবে মজার কথা হচ্ছে, আমি দুই গ্রুপেই আছি। এক সময় মনে করেছিলাম, বাংলায় প্রযুক্তি নির্ভর বই লেখাটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া যাবে। এই মুহূর্তে সেটাকে সাইডলাইনে সরিয়ে রেখেছি। নিজের ভাষায় “ইন্টারনালাইজেশন” করে বোঝা নাকি ইংরেজিতেই প্রযুক্তির সব বিষয়গুলো বোঝা -এই বিতর্কে যাবো না আমি। তবে বেসিক জিনিসগুলো বোঝার জন্য নিজের ভাষা ছাড়া গতি নেই। নিজের ভাষায় কি করা যায় সেখানে চায়না একটা বড় উদাহরণ।

কমিউনিকেশন নিয়ে সরকারে থাকার ৩২ বছরের “ঝলমলে” অভিজ্ঞতা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে পৃথিবীর হাইটেক/ডিপটেক ইন্ডাস্ট্রিগুলো কিভাবে ‘ইন্টারনালি’ কাজ করে সেটা একদম কাছ থেকে দেখা। এর পাশাপাশি, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে হাইটেক প্রযুক্তি ইমপ্লিমেন্ট করতে আমাকে ভাবিয়েছে অনেক। উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী প্রফেশনালদের না পাওয়ার ব্যাপারটা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এই বইগুলো লিখতে।

এর পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন ডাটাসেটের “এপিআই” নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছিলাম এই বইটা, সরকারি সার্ভিস ডেলিভারিকে মাথায় রেখে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সরকারি সার্ভিস ডেলিভারিকে কিভাবে উন্নততর করা যায় সেটাই এসেছে এই বইটাতে। কিভাবে বাংলাদেশ প্রযুক্তির সাহায্যে ঘুরে দাড়াতে পারে সেটা নিয়েই এগিয়েছে বইটা।

আমার প্রকাশনী সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষেই উন্মুক্ত করে দিচ্ছি আমার ষষ্ঠ বই। পোর্টেবল ফরম্যাট [পিডিএফ] বইটা পড়ে ভালো লাগলে বইটা কিনে উপহার দিতে পারেন নীতি নির্ধারণীতে থাকা মানুষগুলোর কাছে। বাংলাদেশে যারা হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন, অথবা ইনভেস্ট করতে চান (বিশেষ করে প্রবাসীরা) তাদের জন্য এটা একটা সহজপাঠ্য হতে পারে।

‘ইফ ইউ বিল্ড ইট, দে উইল কাম’। সত্যি! হাজারো জিনিস করার আছে আমাদের বাংলাদেশে!