কনটেন্টে যান

ডাটা, 'স্ট্রাটেজিক অ্যাসেট' এবং ওপেন ডাটা ইনিশিয়েটিভ

নিজের ডাটার ব্যবহার

Companies across a wide range of industries are learning that the sophisticated use of information found within their own organizations is critical to achieving high performance.

-- Accenture

ডাটাকে 'ডিক্লেয়ার' করতে হবে 'স্ট্রাটেজিক অ্যাসেট' হিসেবে

আমাদের হাতে এখন এত বেশি ডাটা, স্টোরেজের দাম কমে যাওয়া এবং কম্পিউটিং প্রসেসিং ক্ষমতার প্রাচুর্যতা মানব সভ্যতাকে দিচ্ছে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত। ডাটা এখন 'স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট' হিসেবে পরিগণিত হাওয়ায় অনেক দেশ এবং কোম্পানিগুলোর একক আধিপত্য বিপদে ফেলছে আমাদের মত দেশগুলোকে। জাতীয় অনেক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে যেহেতু আমাদের অনেক ডাটা আছে তাদের কাছে। এখন আমরা বুঝতে না পারলেও কয়েকবছর পরে এটার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনৈতিক 'গ্রোথে'।

ডাটা যেখানে একাধারে সম্ভাবনা দিচ্ছে সেখানে ডাটাকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারায় বিপদে ফেলছে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে। ডাটার ব্যাপারে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক বাড়তি খরচ। আমাদের মতো দেশগুলোতে ডেটার ব্যবহার ঠিকমতো না হবার পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে জাতীয় সংস্থাগুলো কিভাবে ডেটাকে জনস্বার্থে ব্যবহার করবে সে ব্যাপারে ধারণা না থাকা। সব ধরনের ডেটাকে 'স্পর্শকাতর' ডেটা হিসেবে ব্যবহার করলে এই ডেটা থেকে সুবিধা নেয়া যাচ্ছে না। বিশাল ডেটাসেন্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ইনভেস্টমেন্ট করেও তার থেকে সুফল হারাচ্ছে সরকার।

ডাটা এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন

Ultimately, data becomes the fuel that helps power multiple use cases or opportunities that the business may want to go after as part of [a digital] transformation.

-- CEO of Informatica

অনেক সংস্থা মনে করছেন এই পাবলিক (জনগনের ব্যক্তিগত ডেটা বাদ দিয়ে) ডেটা আসলে তাদের সংস্থার ডেটা। ফলে ডেটা থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারছে না সরকার সামগ্রিকভাবে। ধরুন, একটা সংস্থা ভাবছে তাদের ডেটা দিয়ে অন্যের কী লাভ হবে? যেটা সেই সংস্থা বুঝতে পারছে না, যখন ডেটাগুলোকে 'কানেক্টিং দ্যা ডটস' এর মতো এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়, তখন অনেক অজানা তথ্য ভেসে ওঠে। ডেটাগুলোর মধ্যে 'সম্পর্কিত' মানে 'রেলেভেন্সি' ব্যাপারগুলো আরো অন্য ডেটার ব্যাপারে ধারণা দেয়। এবং সেই ধারণা সামনের বছরগুলোতে সরকার কিভাবে চলবে সেটার একটা বিশাল গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে। প্রচুর প্রেডিকশন আসবে সামনের সব সমস্যার সমাধানে।

ওপেন ডাটা ইনিশিয়েটিভ

সবাই যখন বুঝে গেছে বিশাল পরিমান ডেটাতে এক্সেসই বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাবিকাঠি, সেখানে নলেজ ইকোনমিগুলো নিয়েছে 'ওপেন ডেটা এক্সেস ইনিশিয়েটিভ, যাতে সরকারি ডেটাকে ব্যবহার করে দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে উদ্ভাবনী কোম্পানি, অ্যাকাডেমিয়া, অথবা তাদের 'স্পিন-অফ' ভেঞ্চারগুলো। সরকারের পাবলিক ডেটা (প্রাইভেট ডেটা নয়) এবং উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলোর পার্টনারশীপ সমাধান করছে সরকারি সার্ভিস ডেলিভারির সমস্যাগুলোকে। তবে অনেক দেশের সরকার ব্যবহার করুক অথবা না করুক, ডাটার ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যাদের অপারেশন রয়েছে পৃথিবীজুড়ে। সেখান থেকে শিখছে বাকি কোম্পানিগুলো। সরকারের কাছে ডাটা, তবে সেটা থেকে প্রজ্ঞা বের করে পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারিতে যুক্ত হতে পারে প্রাইভেট সেক্টর। ধরুন, ক্রাইম ডাটা, পাবলিকভাবে 'ওপেন' থাকলে প্রাইভেট সেক্টরের সাহায্য নিয়ে ভবিষ্যত অনেক ধারণা পেতে পারে একেকটা এজেন্সী।

ডেটার ভালো ব্যবহার যেহেতু প্রাইভেট সেক্টরে বেশি, অনেক জায়গায় জনস্বার্থে ডেটার 'ফেয়ার এক্সেস' যেখানে কোম্পানিগুলো (সরকারের নীতিমালা মেনে) গ্রাহকের অনুমতিতেই দিতে পারে আরো 'পার্সোনালাইজড' সার্ভিস। বিশেষ করে, নাগরিকসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কেন্দ্রীয়ভাবে জনগনের সঠিক প্রাপ্যতা/সনাক্তকরণ প্রসেস ঠিকমতো তৈরি হলে কমে যাবে সামাজিক অসঙ্গতি। উন্নতদেশগুলো ভিসা সার্ভিসগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়া সেরকম একটা ভালো উদাহরণ।

অনেক ক্ষেত্রে দেশগুলোর ডেটা নিয়ে সেরকম ধারণা না থাকার ফলে সুযোগ নিচ্ছে বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার/কনটেন্ট প্রোভাইডাররা। ফলে বিশাল পরিমানে গ্রাহক/পাবলিক ডেটা নিয়ে তারা হয়ে যাচ্ছে মহীরুহ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাথে পেরে ওঠে না সেই দেশগুলো। এক্ষেত্রে ডেটা প্রোটেকশন, 'ডেটা পোর্টেবিলিটি', 'ডেটা ট্রাস্ট' নীতিমালাগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে ডেটার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। প্রতিযোগিতা/বাজার সংস্থাও কাজ করেছে এখানে অনেক দেশে। এদিকে ডেটার সঠিক ব্যবহার (ডেটার প্রিজুডিস)[^২] নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারেও সমস্যা হয় বিভিন্ন স্পেসিফিক গোষ্ঠির ওপর। নাগরিকসেবার অসমতা তৈরি হয় তখন। হয়তোবা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পায় কিছু জনগোষ্টি। সেকারণে নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি।

৬ মাসে বর্তমান যেকোন সরকারি সেবাকে অনলাইন

বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, বর্তমানে বাংলাদেশে যেকোন সংস্থার সেবা সহজীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ থেকে ৬ মাসের বেশি লাগার কারণ নেই। কারণ, সকল সহযোগী প্রযুক্তিসহ সেবাগ্রহীতাকে সনাক্তকরণ, সেবার 'এন্ড টু এন্ড' ট্র্যাকিং, সেবার প্রতিটা পর্যায়ে সেবাগ্রহীতাদের জন্য তথ্য টিকেট জেনারেশন, ডিস্ট্রিবিউটেড লেজারের জন্য ব্লক-চেইন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ই-নথি, সরকারি পোর্টাল সব উপস্থিত। সত্যিই তাই।

শুধুমাত্র দরকার আসল মাইন্ডসেট। যেভাবে আমরা করেছিলাম বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশন। নীতিনির্ধারণী কর্তাব্যক্তি বলেছিলেন, আমার চাইই, চাই। হয়েছেও তাই। প্রশাসন ৬ মাসের মধ্যে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোকে সেবাগ্রহীতাদের সংস্থার অফিসে না এসে পূর্ণ সার্ভিস ডেলিভারির জন্য সেই সংস্থাকে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত করলে সামনের ১ বছরে সব সার্ভিস সম্পুর্ন অনলাইন করা সম্ভব। সেটাই আলাপ করেছি সেবাসহজীকরণ অধ্যায়ে। সমস্যা প্রযুক্তিতে নয়, সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। তবে, সেটা সম্পুর্ন নির্ভর করছে সংস্থাপ্রধানের ওপরে।

প্রযুক্তির 'লিপ-ফ্রগিং'

প্রযুক্তির লিপ-ফ্রগিং / সরকারি সার্ভিস ডেলিভারি

আমার ধারণা, উন্নত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশেই আগে দরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি। কারণ, প্রযুক্তির 'লিপ-ফ্রগিং'। আমাদের মধ্যম প্রযুক্তি নেই বলে সরাসরি যাওয়া যাবে উন্নত প্রযুক্তিতে। 'কানেক্টিং' লিগেসি প্রযুক্তি নেই বলে দরকার পড়ছে না খরুচে 'মাইগ্রেশন স্ট্রাটেজি'। বাংলাদেশের একেকটা সরকারি সার্ভিস ডেলিভারিতে - যেমন, পাসপোর্ট/নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) ডেলিভারি, পুলিস ভেরিফিকেশন, ভু-সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন, আদালত/আইনগতসেবা ইত্যাদির জন্য মানুষের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কমিয়ে আনা সম্ভব বর্তমান ডেলিভারি সময়।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সময় কম/কাজের অ্যাক্যুরেসি বাড়ার সাথে সাথে মানুষের 'বায়াসে'র অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ আসবে কমে। দিনের শেষে সরকার পাবে একটা ড্যাসবোর্ড, যেটা আনবে ওয়ার্ক ফ্লো/প্রসেসের সচ্ছতা। প্রতিটা টাকার খরচের হিসেব। সম্ভব সবই। প্রায় তৈরি হয়ে আছে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ঠিক হয়ে আসছে জাতীয় ডেটাসেটগুলো। তাদের এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) ডকুমেন্টেশনগুলো দেখলে মন ভালো হতে থাকে। যোগসূত্র তৈরিতে একটু সময় লাগলেও সেটা ঠিক হয়ে আসবে সামনের বছরগুলোতে। এখন দরকার স্মার্ট লিডারশিপ, সঠিক মাইন্ডসেট, এবং একটা ছোট কমিটেড টীম।