কনটেন্টে যান

ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুবিধা প্রদান

ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকায়ন এবং ব্যবস্থাপনা

তবে এই ২০২০ সালে অনেক সমস্যাই মিটে গেছে। তবে সুবিধাভোগীর কাছে যথাযথভাবে সুবিধা না পৌঁছানো, সুবিধাভোগী নির্বাচনে সমস্যা ও পুনরায় তদারকি কর্মসূচিতে এখনও সমস্যা আছে। এর পাশাপাশি পুরো ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাতা বেশ কিছু এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে সরকার এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে। একটা কথা বার বার আসছে, অনেকেই ভাতা পাওয়ার উপযোগী না হয়েও তা নিচ্ছেন। এতে সরকারের অপচয় হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু ধারণা দিয়ে এই 'অ্যানামলি' অর্থাৎ অস্বাভাবিকতা বের করা সেরকম সমস্যা নয়।

আবার ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা সংগ্রহ করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা সমস্যায় পড়েন। পুরোপুরি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এর মাধ্যমে কিছু সমস্যা মেটানোর গেলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রকৃত সুবিধাভোগকারী কাছে সুবিধা পৌঁছাতে গেলে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেটা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ মুহুর্তে, মোবাইল সিম কেনার মতো বায়োমেট্রিক পদ্ধতি দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাগুলো দেয়া সম্ভব। আমাদের সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি এখন। ব্লকচেইন প্রযুক্তি আছে এখনই, হাতের নাগালে - দরকার আইনগত ভিত্তি। সেটার খসড়া তৈরি করা যাবে অল্প সময়ে।

এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং, ব্লকচেইন এবং পেছনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

এ ধরনের বিশালাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো চালাতে গেলে তার দক্ষ পরিচালনার জন্য একটা ‘এন্ড টু এন্ড’ এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং এর মতো সফটওয়্যার সলিউশন প্রয়োজন। এর 'ব্যাকএন্ডে' কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সেই ২০১৫ সালে যখন কৌশলপত্রটি প্রণয়ন করা হয়, তখন সেখানে একক রেজিস্ট্রি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে একজন সুবিধাভোগীকে সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যেটি আমরা আলাপ করেছি ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন’ ধাপে। এখনও কিছু হতদরিদ্র পরিবার আছে, যারা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে আছে। তাদেরকে ঠিক ভাবে শনাক্ত করে কোনো না কোনো কর্মসূচিতে সংযুক্ত করতে হবে। আমরা ধারণা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যে সব দরিদ্র মানুষ আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের মধ্যে চলে আসবে। এখনও একটা বড় রকমের সমস্যা আছে - সুবিধাভোগী নির্ধারণ। পত্র পত্রিকায় দেখেছি, দরিদ্র নয় এমন ২৭ শতাংশ পরিবার ভাতা ভোগ করত।

পত্রিকাগুলোর বেশকিছু গোলটেবিল বৈঠকের সুপারিশ নিয়ে যদি আমরা দেখি তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে সনাক্তকরণ একটা বড় সমস্যা বটে। তাদের মতে, ‘সকল উপকারভোগীর তথ্যসমৃদ্ধ একটি একীভূত কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার প্রণয়ন করা প্রয়োজন’, এর অর্থ হচ্ছে এই একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি তৈরির পেছনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া গতি নেই। এছাড়া, ১৫০টি কর্মসূচির মধ্যে ‘বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কারা ভাতা পাচ্ছেন, তা নির্ধারণ করা জরুরি’ এবং যারা ভাতা পাচ্ছেন আর তার পাশাপাশি যারা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাহিরে আছেন তাদের মধ্যে যোগসুত্র করার জন্য দরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিভিন্ন ধরনের ডাটা অ্যানালিটিকস। সুবিধাভোগীর কাছে ভাতা সঠিক সময়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে একটা বিশালকার সফটওয়্যার সলিউশন ছাড়া গতি নেই। সেটা করা সম্ভব দেশেই।

সঠিক সময়ে সঠিক সুবিধাভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছানো

অনেক পত্রিকায় বলেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সুবিধাভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য সেবা সংস্থাসমূহের সমন্বয় প্রয়োজন , এ ধরনের সমন্বয় পদ্ধতি তৈরি করতে বিভিন্ন সেবা সংস্থা সমূহের মধ্যে ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস’ স্থাপন করে তার মাধ্যমে কোন মানুষের সাহায্য ছাড়াই সেই সমন্বয়গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এখানে কোন ধরনের প্রচারণামূলক কার্যক্রম এ ধরনের সিস্টেম থেকে খুব সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব। তবে এ ধরনের ডাটাসেটকে ভালো আউটপুট দেওয়ার জন্য শুদ্ধ ডাটার ইনপুট প্রয়োজন।

‘মিস টার্গেটিং’ এবং সুবিধা বণ্টনের ভারসাম্য

অনেক সময় দেখা গেছে এ সুবিধাভোগী অংশ ও জনগোষ্ঠীর অনুপাতগুলো লক্ষণীয়ভাবে কম অপেক্ষাকৃত দরিদ্র উল্লিখিত বিভাগগুলোয়। কৌশলপত্রে বলা হয়েছে যেহেতু এ ধরনের কর্মসূচি ২৩টা এবং তারও বেশি মন্ত্রনালয় এবং বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে যারা বাস্তবায়ন করছেন, তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য বিনিময়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে সেটা সামগ্রিকভাবে ড্যাসবোর্ডে কোথায় বেশি/কম পরছে সেটার পর্যালোচনা সেভাবে হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, এতে সামাজিক সুবিধা বণ্টনে যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সামগ্রিক উন্নয়ন ভারসাম্যেও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের মতো দেশে ডাটার ওপর সেরকম নির্ভরশীলতা না আসায় এ ধরনের অসংলগ্নতা অথবা ভারসাম্যহীন ব্যবস্থাপনা চলতে পারে শুরুর দিকে। আর সে কারণেই আমাদের এই মুহূর্তে প্রয়োজন কিছু ‘রুল বেইজড সিস্টেম’ যেগুলো আমরা তৈরি করে ফেলেছি কৌশলপত্রে। এই মুহূর্তে অ্যালগরিদমের প্রয়োজন নেই - তবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যে ধরনের ‘রুলসেট’ সুবিধা গ্রহণকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে সেখানে মানুষ সেই নীতিমালাগুলোকে যাতে ভেঙ্গে না ফেলতে পারে সে কারণে কিছু সফটওয়্যার তৈরি করা যেতে পারে শুরুতে। খুবই সাধারণ সিস্টেম, 'হ্যাঁ' অথবা 'না' এর মতো তবে কেন না সেটা বলে দিতে পারে সিস্টেম।

একটা পত্রিকা বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধা বণ্টনের বেলায় ‘মিস টার্গেটিং’ এক বড় সমস্যা। আমাদের দেশে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাটার ব্যবহার সেভাবে শুরু হয়নি। এই ডাটা'র ব্যবহার শুরু হয়েছে কিছু সংস্থায়, তবে সেটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। খেয়াল করা দরকার, দারিদ্র্য নির্মূলে যে ধরনের পরিসংখ্যানগত সুবিধা থাকলে নীতিনির্ধারণে সুবিধা হয়, তার ঘাটতি রয়েছে দেশে। এটা একটা বড় সমস্যা।

ফলে নীতিনির্ধারকরা যেসব জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাদি দেওয়ার টার্গেট করেন, সেগুলো উপযুক্ত হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। তবে, সবচেয়ে বড় সমস্যা রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। তাই লেখক বলেছেন পত্রিকায় - ‘এর মধ্য থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঠিক সুবিধাভোগী নির্ধারণ মোটেও সুবিধাজনক নয়; আরও কঠিন সবাইকে এক সঙ্গে সন্তুষ্ট করা’।2 এখানে আমাদের কাজ করা জরুরি। ব্লক চেইন একটা ভালো সমাধান।


  1. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও কল্যাণকর রাষ্ট্র, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

  2. সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা বণ্টনে বৈষম্য দূর হোক, শেয়ার বিজ, অক্টোবর ৩০, ২০১৭