কনটেন্টে যান

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘পাবলিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট’ ব্যবস্থাপনা

বুদ্ধিমান 'পাবলিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম'

শুরু হয়েছে

Bangladesh has signed a $100 million financing agreement with the World Bank, on Thursday, to improve public service delivery through an effective, efficient, and transparent public financial management system.

Strengthening Public Financial Management (PFM) Program to Enable Service Delivery program will support the government’s PFM Action Plan 2016-2021, according to a press release.

-- World Bank helps Bangladesh strengthen public financial management, June 29th, 2019, Dhaka Tribiune

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘পাবলিক ফান্ড ম্যানেজমেন্টে’র মত কঠিন কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিংয়ের কাজ ছেড়ে দিতে পারেন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরে। এটা তাদের প্রতিদিনের অ্যাকাউন্টিংয়ের ত্রুটিগুলোকে হ্রাস করবে। এর পাশাপাশি এই ব্যবস্থাপনার ঝুঁকি চিহ্নিত করতে, ট্যাক্স জালিয়াতি এবং আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থাপনা, রুটিন প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করে, সহযোগী এজেন্সিগুলোকে - বিশেষ করে যেখানে এই হিসেব/গণনা হয়, সেখানে মানব ইনপুটকে ‘ফোকাস’ করে সেটার মধ্যে ভুল ইনপুট দেবার আগেই একটা ধারণা তৈরি করে দেবে।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ডাটা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এ ধরনের ব্যবস্থাপনা মানুষকে আরও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে ‘ডাটা থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ ব্যবহার করে। ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কাজ করতে গিয়ে দেখেছি - মানুষের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ডাটার ইনপুট এ ধরনের ‘ক্রিটিক্যাল’ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সহায়তা করবে। কখন কোন সিদ্ধান্ত সবার জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে সেগুলো নিয়ে ভালো ভিজুয়ালাইজেশন দেয় এ ধরনের টুলগুলো।

এই ধরনের আউটকাম অর্থাৎ ফলাফলগুলো সরবরাহ করতে পারছে এমন প্রযুক্তি - যেমন মেশিন লার্নিং, রোবোটিক প্রক্রিয়া, অটোমেশন এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ - যাদের পেছনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডাটা প্রসেসিং টুল। তাদের ফলাফলগুলো নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য, ধারাবাহিক, স্বচ্ছ এবং সময় মতো হওয়ার জন্য, তাদের পেছনের ডাটা (ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান, নিরীক্ষা রিপোর্ট, করদাতাদের উত্স থেকে সরবরাহকৃত ডাটা, ব্যাংক এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ডেটা সহ) সহজলভ্য হওয়া দরকার। সেটা করতে পারে ডাটা এক্সচেঞ্জ, অর্থাৎ ডাটাহাব। এই ধরনের প্লাটফর্মে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি।

কী করতে পারবে এই প্রোগ্রাম?

The program will help improve fiscal forecasting, public budget preparation, and execution, as well as enhance financial reporting and transparency in the ministry of education, ministry of health, finance division, local government division, roads, public works, and local government.

-- World Bank helps Bangladesh strengthen public financial management, June 29th, 2019, Dhaka Tribiune

আচ্ছা, এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘পাবলিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট’ আর কি কি করতে পারেন?

আর্থিক অপরাধ রোধ ও দুর্নীতির পূর্বাভাস

পৃথিবীব্যাপী আর্থিক অপরাধ দেশগুলোকে এবং আর্থিক পরিষেবা খাতকে জর্জরিত করে চলেছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী একমাত্র মানি লন্ডারিং এবং এর সাথে সম্পর্কিত অপরাধের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ৩.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। নিয়ন্ত্রককারী সরকারী সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ পাচার শনাক্ত করতে বেশ কয়েক বছর ধরে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এর ব্যবহারের মাধ্যমে তারা মানব পাচার, মাদক, অস্ত্র বিক্রয় এবং সন্ত্রাসবাদের জন্য তহবিল তোলার কাজকে হ্রাস করতে সহায়তা করছে। উন্নত দেশের সরকারগুলো বিভিন্ন দুর্নীতি এবং জালিয়াতির পূর্বাভাস পাবার জন্য ডাটা থেকে প্যাটার্ন পাবার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু করেছে।

সরকারি কেনাকাটায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে টাকা সাশ্রয়

সরকারি টাকার একটা বড় অংশ যায় বড় কেনাকাটায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে কেবলমাত্র ক্রয় প্রক্রিয়াগুলোকে সহজ করাই নয়, বরং একটা লম্বা সময় ধরে সরকারের পক্ষে কি কি কেনাকাটা হতে পারে সে ধরনের প্রেডিকশন, আর জন্য প্রয়োজনীয় সাপ্লাই চেইন সুব্যবস্থাপনা অর্থ সাশ্রয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে যেসব পণ্যের জন্য অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরশীল, এই পণ্যগুলোকে ঠিকমতো সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া গুলো কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাজিয়ে দিতে পারে। সেই পণ্যগুলোর সরবরাহকারীদের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হবার আগেই পূর্বাভাস দেবে এ ধরনের সিস্টেম। এর পাশাপাশি সরবরাহকারীদের সাথে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট তৈরি যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

এর পাশাপাশি, বিশেষত: সরকারি চালান প্রক্রিয়াকরনের পুরো অংশকে স্বয়ংক্রিয় করা সম্ভব, যাতে টাকা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া জালিয়াতির মধ্যে না পড়ে। প্রস্তাবিত ক্রয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংগ্রহের কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করা যেতে পারে এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে। একইভাবে সরকারী ব্যয় হ্রাস করার সুযোগগুলো চিহ্নিত করা যাবে এর মাধ্যমে।

পাবলিক সেক্টরের নিরীক্ষণের জন্য অসঙ্গতিগুলি সনাক্ত করা

সরকারি কাজে অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং অর্থাৎ নিরীক্ষণ এর জন্য প্রচুর ডাটার প্রয়োজন হয়। ডাটা থেকে সত্যিকারের সমস্যা বের করতে গেলে মানুষের পক্ষে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। এ কারণে অনেক বেশি ডাটা প্রসেস করার ব্যাপারটি ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর উপরে। বর্তমানে মানুষ যে কাজগুলো করছে, বিশেষ করে প্রতিটা ফাইলের মধ্যে কি কি সমস্যা রয়েছে - সেটা বের করতে গেলে মানুষ হিসেবে যেখানে ফোকাস দেওয়া উচিত, বিশেষ করে কোন ভুলগুলো ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত তাহলে মানুষ নিরীক্ষকের উপরে চাপ কমে। ডাটা থেকে বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রমাণে বোঝা যায় কোন কাজগুলো জালিয়াতি হয়েছে আর কোন কাজগুলোর মধ্যে অনিচ্ছাকৃত ভুল রয়েছে, এই প্যাটার্ন বের করতে সহজাত ক্ষমতা আছে ডাটার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করলে সরকারের যতগুলো খরচের ট্রানজাকশন হয়েছে তারমধ্যে কিছু অংশ কেউ লুকিয়ে রাখলে, সেই প্যাটার্নটা বের করা সম্ভব। অনেক দেশে বর্তমানে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অডিটর সফটওয়্যার' ব্যবহার করছে সরকারি এবং বেসরকারি বড় বড় হিসাব মিলাতে গিয়ে।

নিচে অর্থমন্ত্রণালয়ের সফট্ওয়ারের কিছু সাফল্য, যাকে সহজেই 'ট্রান্সফার' করা যেতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমে।

  1. করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সফটওয়্যার সিস্টেমে একটি পৃথক মডিউল সংযোজন এবং ৩৫ লক্ষ উপকারভোগীকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

  2. সফটওয়্যারের পেনশন মডিউল ব্যবহার করে পেনশনারগণকে সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে মাসে মাসে পেনশন এবং ভাতাদি প্রদান করা হচ্ছে। ৩,৮১,০০০ পেনশনার ইএফটির মাধ্যমে পেনশন পাচ্ছেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সকল পেননশনারকে ইএফটির আওতায় আনা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় পেনশন মডিউলের উন্নয়ন, বাস্তবায়ন এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।

  3. সরকারি কর্মকর্তাগণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে দেশের সকল স্থানে অনলাইনে পেপারলেসভাবে বেতন বিল দাখিল করতে পারছেন। বর্তমানে প্রায় দুই লক্ষ কর্মকর্তা অনলাইনে বেতন বিল দাখিল করছেন।

  4. জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এটি একটি কেন্দ্রীয় ইন্টারনেট ভিত্তিক সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সকল প্রকার সঞ্চয়পত্র বিক্রয়, লভ্যাংশ প্রদান এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় হিসাবায়ন সম্পন্ন হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের কিস্তির সুদ এবং আসল নগদায়নের অর্থ ইএফটির মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে এবং সঞ্চয়পত্রকে পেপারলেস করা হয়েছে।

  5. স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ছাড়কৃত অব্যয়িত অর্থ যেন ট্রেজারির বাইরে পড়ে না থাকে, সে উদ্দেশ্যে নগদ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য সফট্ওয়ারে নতুন মডিউল সংযোজন করা হয়েছে। সফটওয়্যার ব্যবহার করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রমসমূহের সুবিধাভোগীদেরকে ভাতা প্রদানের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্যর বেশী উপকারভোগীকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ঘরে বসে চালান জমাদানের উদ্দেশ্যে অটোমেটেড চালান ও ই-চালান বাতায়ন চালু করা হয়েছে।

-- সুত্র: অর্থমন্ত্রণালয়