কনটেন্টে যান

কিভাবে এখানে এলাম?

তিনটা মজার গল্প।

লেগে থাকা

It’s not that I’m so smart. It’s just that I stay with problems longer.

--Albert Einstein

ক্যাডেট কলেজ লাইব্রেরি, ম্যান মেশিন

১৯৮৩ সালের কথা। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে শুরুতে মন কিছুটা খারাপ হলেও পরে বিশাল একটা লাইব্রেরী দেখে মন ভালো হয়ে গেল। লাইব্রেরি ক্লাসের পাশাপাশি সময় পেলেই ছুটতাম বই ইস্যু করতে। অনেক বই একসাথে ইস্যু করার ধারনাটা পেয়েছিলাম আদমজী থেকে। মজার কথা হচ্ছে, লাইব্রেরির একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল ইংরেজি বইয়ের সংগ্রহ। এরমধ্যে প্রযুক্তি বিষয়ক বইগুলো দেখছিলাম, হয় সেগুলো 'এমআইটি প্রেস' অথবা 'ম্যাকগ্র হিলসে'র। সেখানেই পেলাম একই সিরিজের তিনটা বই। 'ম্যান মেশিন'। মানে মানুষ কিভাবে মেশিনের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ শুরু করেছিল সেটার কিছু স্ন্যাপশট দেখছিলাম ওই বইগুলোতে।

একটা মুভি, পাল্টে দিল সবকিছু

আগের বইয়ে কিছুটা লিখেছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে। ছোটবেলার একটা মুভি ভয়ংকরভাবে দাগ কেটেছিল মনে। এর রেশ টেনে বেড়াচ্ছি এখনো। মুভিটার প্রোটাগনিস্ট ছিল ‘হ্যাল’, একটা সেন্টিনেন্ট কম্পিউটার। ঠিক ধরেছেন, মুভিটার নাম ছিল ‘২০০১ : আ স্পেস ওডেসি’। মানুষ আর ‘চিন্তা করতে পারা’ যন্ত্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন আমরা দেখেছি ওই মুভিটায়।

শত বছর ধরে ইন্টেলিজেন্ট মেশিনের খোঁজে মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা দেখছি অনেক কিছু। আয়রনম্যানের জার্ভিস, টার্মিনেটর, নাইট রাইডারের ‘কিট’ পার্সোনালিটিগুলোর প্রতি আমাদের ব্যাকুলতা অথবা উৎসুক ভাব একটা পাওয়ারফুল আইডিয়া। যন্ত্র মানুষের মতো চিন্তা করতে পারছে কি পারছে না অথবা চিন্তা করতে পারার মতো যন্ত্র তৈরি হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটা থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে মানুষ হাল ছাড়ছে না এই আইডিয়া থেকে।

উইলিয়াম গিবসনের ‘নিউরোমান্সার’

২০ বছর আগের কথা। নিউ ইয়র্কে নেমেই চলে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ইউজড’ বুক স্টোর, স্ট্র্যান্ডএ। তখনকার ব্র্যান্ডিং ছিল তাদের কাছে যত বই আছে সবগুলো বই পাশাপাশি সাজিয়ে রাখলে ৮ মাইল লম্বা বইয়ের সারি হবে। ‘এইট মাইলস অফ বুকস’, এখন ২৫ মাইলে দাড়ালেও ডাউনটাউনের ব্রডওয়েতে এই বইয়ের দোকান এখনো মাথা খারাপ করার মতো। প্রথম দিনে বাইশটা মতো বই নিয়ে এলেও পরের দিন সেই বইয়ের সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ৩৫এ। সেদিন এক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া উচ্ছল একটা মেয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কোন সাহায্য লাগবে কিনা? সচরাচর এর মত মুখে স্মিত হাসি টেনে তাকে তাড়িয়ে দিতে চাইলাম। থ্যাঙ্ক ইউ, আই এম গুড। শুনে চলে গেল আরেক কাস্টমারের সাপোর্টে। আমিও ডুবে গেলাম বই পড়তে। শেষ করতে হবে কয়েকটা বই। সেদিনই।

আসল কথা হচ্ছে, অনেক বই যেহেতু কিনতে পারব না, মানে বাংলাদেশ টেনে আনা সমস্যা বলে ওখানেই তিন-চারদিন বসে বেশ কিছু বই পড়ে ফেলতাম প্রতিদিন - ‘এলআইআর’ ধরে লং আইল্যান্ডে বন্ধুর বাসায় ফেরার আগে। দুই ঘন্টা পর ওই মেয়ে এসে হাজির আবারো। কাহিনী কি? "এই বইটা তুমি দেখতে পারো, আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।" বইটা হাতে নিলাম। উইলিয়াম গিবসনের ‘নিউরোমান্সার’। সাইবারনেটিক্স নিয়ে। সেই মেয়েটার সাথে প্রায় কিছুদিন যোগাযোগ ছিল পরে, বিশেষ করে ওই বইটা নিয়ে, তবে সময়ের অভাবে যোগাযোগ রাখা হয়নি শেষে। আজকে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে যতটুকু আমার ধারণা হয়েছে, তার একটা ভালো স্টেপিংস্টোন ছিল সেই বইটা। একটা মাথা খারাপ করার মতো বই বটে।

বই বলে কথা

জাপান আমার পছন্দের একটা জায়গা, এই বইটার জন্য।

বৃদ্ধ বাবার প্রশ্রয়ের হাসি

প্রচুর কাজ হয়েছে দেশে, তবে সেটার গতি হয়তোবা আরেকটু বাড়ানো যেতো। যতোটুকুই কাজ করেছি সরকারি গণমুখী অংশে, আমার মনে হয়েছে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবার ছিলো, এই ৫০ বছরে। বাবার পাশে বসে যখন দেশের কিছু সাফল্যের কথা বলি, উনি প্রশ্রয়ের হাসি হাসেন। আগে কিছু বলতেন, এখন খুব একটা বলেন না, মাথা নাড়ান। আমার তখন মনে হয়, উনার যে সুবিধাগুলো দরকার ছিলো দেশ থেকে, সেগুলো দিতে পারিনি আমরা। এখন আর কিছু বলেন না, তখন মনে হয় উনার জীবদ্দশায় হবে তো ব্যাপারগুলো? সামাজিক নিরাপত্তার বৃদ্ধভাতা, চিকিত্সা সেবা, বাসায় বসে বায়োমেট্রিক মোবাইল পেনশন, যা করে দিতে পারিনি উনাকে। সামান্য পেনশন পেতেই যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে উনাকে। ৫০ বৎসরে আমাদের প্রাপ্তি যা হবার কথা ছিলো সেটা হয়নি এখনও। সেকারণে এই নীতিনির্ধারণী আলাপ।

প্রবাসীদের সাহায্যের হাতছানি

দেশের বাইরে গেলেই খুঁজে বের করতাম বাংলাদেশীদের, জানতে চাইতাম কী করছেন জন্মভূমির জন্য। যারা প্রবাসে পড়ে আছেন, প্রতিমুহুর্তে উনাদের মন কাঁদে, ‘যদি কিছু করতে পারতাম দেশের জন্য’। তাদের অনেকেই বাইরে সাফল্য পেয়েছেন তবে - সেটার একটা বড়ভাগ দিয়ে দিতে চান দেশকে। প্রতিবছর উনারা দেশে আসেন, যদি আমরা তাদেরকে যোগ করে নেই আমাদের অগ্রযাত্রায়? সেটা কী হয় সবসময়? আমরা কী নিতে পারছি উনাদের এক্সপার্টিজ?