কনটেন্টে যান

টেক্সটবুকের কিছু ডেফিনিশন

সঠিকতা এবং আদর্শ - র‌্যাশনালিটি, যৌক্তিকতা

A system is rational if it does the right thing.

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ঠিকমতো এন্ড টু এন্ড ‘ডিফাইন’ করতে গেলে এর একটা সিঙ্গেল ডেফিনেশন পাওয়া অসম্ভব। বরং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আরো অন্যান্য ফ্যাক্টর এবং অনেক অনেক ডেফিনেশন দেখে একটা বড় ডেফিনেশন বের করার চেষ্টা করা যায়। শুরুতে পুরো জিনিসটাকে দুই ডাইমেনশনে নিয়ে আসা যায়। উপরের দিকে যা পুরো জিনিসটাকে চালাচ্ছে - সেটার একটা হচ্ছে আমাদের চিন্তা করার প্রসেস, যাকে আমরা ইংরেজিতে বলি 'থট প্রসেস' এবং যুক্তির সাহায্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া, ইংরেজিতে 'রিজনিং' বললে আরো পরিস্কার হতে পারে।

সেদিক থেকে নিচের দিকে আমরা যেকোন জিনিসের 'আচরণ' এবং মানুষের সেই কাজের আউটপুট মেলাই তাহলে কোন কাজটা 'সঠিক' এবং কোনটা 'আদর্শ' বুদ্ধিমত্তার পরিচয় সেটার একটা সংযোগস্থল হতে পারে 'র‌্যাশনালিটি' মানে সেই ব্যাপারটার "যৌক্তিকতা"। মানুষ যা করে সেটাকে আমরা যেভাবে সঠিকভাবে ধরে নেই না, সেখানে একজন মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে তার আউটপুট কী হতে পারে সেটার একটা ধারণার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। মানুষের কাছ থেকে আমরা যৌক্তিকতা আশা করি, তবে সেখানে একটা টেনশন কাজ করে। সব মানুষ কী যৌক্তিক, সঠিক বা আদর্শ সিদ্ধান্ত নিতে পারে? তাহলে তো সবাই একই ধরনের সাফল্য পেতো। এর পাশাপাশি মানসিক বিকারগ্রস্তদের কী বলা যেতে পারে? ব্যাপারটাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে ফেলে দেখি।

মানুষের মতো যৌক্তিকভাবে যেটা হতে পারে
যন্ত্র/সিস্টেম যেটা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে যন্ত্র যেটা যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারে
যন্ত্র যা মানুষের মতো কাজ করতে পারে যন্ত্র যেটা যৌক্তিকভাবে কাজ করতে পারে

আপনার পয়েন্টটা নিয়েছি। যন্ত্রের মানুষের মতো চিন্তা করতে পারা এবং যন্ত্রের যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারাটার মধ্যে ফারাকটা কোথায়? মানুষের চিন্তা অর্থাৎ রিজনিংয়ের মধ্যে কিছু সিস্টেমেটিক ভুল থাকতে পারে, তবে সেটা 'আদর্শ'গত বুদ্ধিমত্তা থেকে কতো দুরে? সেজন্যই এই ব্যবস্থা। তবে এটাকে ঠিকমতো ডিফাইন করতে আরো একটু কাজ করে নিচের ছবিটা দেখতে পারি চারটা ডাইমেনশনে। এটার গল্পটা আসছে স্টেপ বাই স্টেপ।

চার ডাইমেনশনে, আট ডেফিনেশন

চার ডাইমেনশনে, আট ডেফিনেশন

যে যাই বলুক, আমার সবচেয়ে পছন্দের ডেফিনেশন দিয়েছেন ‘রাসেল এবং নরভিগ’1 সেই ২০১৬ সালে। ভালোভাবে বলতে গেলে এটা আটটা ডেফিনেশনকেই নিয়ে আসা হয়েছে চারটা ডাইমেনশনে। কমপ্লেক্স লাগছে? শুরুতে দেখি চারটা ডাইমেনশনে কী দেখাচ্ছে?

চারটা ডাইমেনশন

  1. মানুষের মতো চিন্তা করতে পারা
  2. যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে পারা
  3. মানুষের মতো কাজ করতে পারা
  4. যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে পারা

মানুষের মতো চিন্তা করতে পারা

প্রথম চার ভাগের শুরুর ভাগে - যেটাকে আমরা বলছি ‘মানুষের মতো চিন্তা করতে পারার’ ব্যাপারটাকে আমরা বলছি যন্ত্র কিভাবে চিন্তা করতে পারে। যন্ত্রের চিন্তাধারার আকার কি ধরনের হতে পারে? এরপরের ভাগে ব্যাপারটাকে এমনভাবে ভাগ করেছি যাতে যন্ত্র মানুষের মতো করে চিন্তা করতে পারছে কিনা সেটা দেখার চেষ্টা করবো। মানুষের চিন্তা করার কিছু আউটকাম দেখলে বোঝা যাবে যন্ত্র সেটা পারছে কিনা।

মানুষ কিভাবে চিন্তা করে?

চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, সমস্যা সমাধান

[The automation of] activities that we associate with human thinking, activities such as decision-making, problem solving, learning… (Bellman, 1978).

মানুষের চিন্তা করতে পারার ধারণার পাশাপাশি মানুষ কিভাবে সমস্যার সমাধান করে, তার থেকে বড় জিনিস হচ্ছে মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেই ব্যাপারগুলোকে যন্ত্রতে আমরা পাঠাতে পারছি কিনা। ব্যাপারটা কনফিউজিং হয়ে গেল? এখন আমরা বলতে পারি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম কিভাবে মানুষের মতো করে চিন্তা করতে পারে’, সেটা বের করতে গেলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কিভাবে মানুষ চিন্তা করে? সেই চিন্তা করার প্রসেস ফ্লো কিভাবে কাজ করে?

সেটা বের করতে গেলে মানুষের চিন্তা ধারণার ব্যাকগ্রাউন্ডে কী চলছে, এর পাশাপাশি বাস্তবে কী হচ্ছে এবং সেই পুরো ঘটনাকে আমাদের মস্তিষ্ক কিভাবে সামনে পেছনে করে ইমেজিং করছে সেটা জানলে এই ব্যাপারটাকে ডিফাইন করা অনেক সহজ হবে। তবে এই ক্যাটাগরিটা পুরোটাই জ্ঞানভিত্তিক কগনিটিভ মডেলিং অ্যাপ্রচ। আমার দেখা সেরা ডেফিনেশন এই ক্যাটাগরিতে দিয়েছেন ‘রাসেল এবং নরভিগ’, সেটাকে তুলে দিচ্ছি কোটেশনে।

ইনপুট থেকে আউটপুটের আচরণের পার্থক্য

If the program's input/output behavior matches correspoding human behavior, that is evidence that some of the program's mechanisms could also be operating in humans.

যন্ত্রের ইনপুট এবং আউটপুটের প্যাটার্ন যদি মানুষের আচরণের মতো হয়, তাহলে ওই যন্ত্রের ভেতরের কিছু মেকানিজম মানুষের মধ্যে চলছে বলে ধরে নেয়া যায়। এর মানে কী? সহজ কথায়, মানুষের আচরণকে ম্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে যেকোন অ্যালগরিদমের দক্ষতা নিরুপনে।

যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে পারা

মানুষের চিন্তা ভাবনা কী সবসময় একদম যৌক্তিক হবে? যখন যৌক্তিক হবে সেটা আইডিয়াল মানে 'আদর্শ' পজিশন থেকে কতো দুরে হতে পারে? এই একই জিনিস মানে যন্ত্রের কাছে যৌক্তিকতা আশা করা যায়? আমার ধারণা পাওয়া যাবে। কারণ ঠিকমতো প্রোগ্রাম করলে যন্ত্রের 'বায়াস' কম আসবে। আমাদের সেটাই চাওয়া।

এই ক্যাটাগরির ডেফিনেশন নিয়ে আলাপ করতে গেলে যন্ত্রের যৌক্তিকতা অর্থাৎ যন্ত্রের ‘র‌্যাশনাল’ চিন্তাভাবনা নির্ভর করবে যন্ত্র কিভাবে একটা তথ্যকে ‘পারসিভ’ মানে উপলব্ধি করে সেটার উপরে জাজমেন্ট/সিদ্ধান্ত দেবে সেটা দেখতে হবে আগে। এর পাশাপাশি জিনিসটার ‘রিজনিং’ অংশ যাকে আমরা বলছি কেন সে এই সিদ্ধান্ত নিল অথবা বাকি সিদ্ধান্তগুলো নিল না - সেটা বুঝে নিতে হবে তখন। কারণ, সেটার রেজাল্ট দিয়ে যন্ত্র করবে কাজ। পুরো জিনিসটা এন্ড টু এন্ড কানেক্টেড।

ধরতে পারা, রিজনিং, কাজ করা

The study of the computations that make it possible to perceive, reason, and act” (Winston, 1992).

অ্যারিস্টোটলের বিখ্যাত “ধারনার নীতিমালা" (ল'স অফ থটস)

এখন বড় একটা প্রশ্ন হতে পারে, মানুষ কিভাবে যৌক্তিকতার ভেতর থেকে মানুষের রিজনিং বের করতে পারে? এখানে আমরা দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের বিখ্যাত “ধারনার কিছু নীতিমালা নিয়ে আলাপ করতে পারি। উনি আসলে মানুষের চিন্তাভাবনার প্রসেসকে একটা ওয়ার্ক ফ্লোতে ফেলতে চেয়েছেন। এই নীতিমালা গুলো বহু বছর ধরে ইতিহাসে দর্শন এবং লজিকের সূত্র হিসেবে চলে আসছে। সাধারণত এই নীতিমালাগুলো কে প্রতিটা মানুষের চিন্তা ধারা এর পাশাপাশি তার আলাপ-আলোচনা, অথবা কি ধরনের চিন্তার ফলাফল হিসেবে তার কাজের আউটপুট আসছে, এবং সেগুলোর মধ্যে একটা কানেকশন সম্পর্ক সেটাকে ঠিকমত ডেলিভারি করতে পারলেই এই লজিক গুলো মানুষের চিন্তা ধারার সঙ্গে যাবে।

১৯৯৯ সালের ‘কেমব্রিজ ডিকশনারি অফ ফিলোসফি’ বলছে, চিন্তাধারার এই নীতিমালা অনুযায়ী ঠিক ধারণাগুলোকে সামনে নিয়ে সেগুলোর অনুমানকে ন্যায্যতা মানে ঠিক বলে মতবাদ দেয় তাহলে সবগুলো ধারণা একে অপরের সাথে কানেক্টেড। এই চিন্তার নীতিমালাগুলো এমন নিয়ম যা কোনও ওই কানেক্টেড বিষয় সম্পর্কিত চিন্তার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ছাড়াই কাজ করতে পারে; তখন - কখনও কখনও এই নীতিমালাগুলোকে যুক্তির অবজেক্ট বলা হয়। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? আমারও তাই। একটা উদাহরন দেই বরং।

অ্যারিস্টোটল একজন মানুষ, প্রতিটা মানুষ মরণশীল; এরমানে, অ্যারিস্টোটল অবশ্যই মরণশীল।

অ্যারিস্টোটলের এই আইডিয়াগুলোর পাশাপাশি আরো অনেক ধারণা আছে যেগুলো কাজ করছে রোডম্যাপ হিসেবে - বিশেষ করে মানুষের মন কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝতে। বুঝতেই পারছেন এই সব কিছুকে আমরা ‘লজিক’ বলি।আমরা যদি এখন এই ধরনের লজিকগুলো ব্যবহার করে যন্ত্র তৈরি করি যা আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে তাহলে এই ডেফিনেশন অনুযায়ী যন্ত্রগুলোকে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে।

মানুষের মতো কাজ করতে পারা

মানুষের মতো কাজ

The art of creating machines that perform functions that require intelligence when performed by people.

-- Kurzweil, 1990

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সংজ্ঞায় আমরা দেখব যন্ত্র কিভাবে মানুষের মতো করে কাজ করতে পারে। এখানেই চলে আসবে ‘টুরিং টেস্ট’, যা এরপরের চ্যাপ্টারে আলাপ করা হয়েছে। ‘টুরিং টেস্ট’ এর অর্থ হচ্ছে মানুষ এবং যন্ত্রকে পাশাপাশি রেখে তাদের সাথে ভাব আদান প্রদান করা যায় - তাহলে সেই মানুষ এবং যন্ত্রের উত্তরে ফারাক না পাওয়া গেলে সেই যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান হিসেবে ধরে নেওয়া হবে।

‘রাসেল এবং নরভিগ’ (২০১৬:২) বলছেন যদি কোন যন্ত্র ‘টুরিং টেস্ট’ পাশ করে থাকে - তাহলে সেই যন্ত্রের নিচের চারটা মানবিক ক্ষমতা থাকতে হবে:

চার মানবিক ক্ষমতা

  1. ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং: এর মাধ্যমে যন্ত্র মানুষের ভাষায় মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। আমাদের আশেপাশের অনেক ধরনের যন্ত্র এই কাজগুলো শুরু করেছে, যেমন সিরি, এলেক্সা অথবা ‘ওকে গুগল’, ইত্যাদি।

  2. জ্ঞানকে ঠিকমতো রিপ্রেজেন্ট করতে পারা: এই ক্ষমতা যে কোন যন্ত্রকে তার আগের সক্ষমতা মনে রাখতে পারবে এবং তাকে নতুন তথ্য দেওয়া হলে সেটাকে সে তাত্ক্ষনিকভাবে প্রসেস করতে পারবে।

  3. স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তির সাহায্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া: এই পদ্ধতিতে একটা যন্ত্র তার ভেতরের তথ্যপ্রবাহ অনুযায়ী নিজে থেকেই সিদ্ধান্তে আসতে পারবে। যেমন, সেলফ ড্রাইভিং কার, এই অ্যালগরিদম রাস্তায় নেমে কোথায় কিভাবে যেতে হবে তার কাছে জমা তথ্য থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

  4. মেশিন লার্নিং: এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা মেশিন নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং সেই প্যাটার্ন থেকে নতুন কাজের ধারা বুঝতে পারে।

যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে পারা

যুক্তিযুক্ত কাজ

Computational intelligence is the study of the design of intelligent agents.

-- Poole, Mackworth & Goebel, 1998

এই শেষ সংজ্ঞাতে যন্ত্রের কাছ থেকে যুক্তিযুক্ত ব্যবহার আশা করা হচ্ছে। একটা যুক্তিযুক্ত এজেন্ট সব সময় চেষ্টা করবে তার আশেপাশের তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো ফলাফল কিভাবে নিয়ে আসা যায়? একটা ‘সেলফ ড্রাইভিং’ কার যদি সামনে হঠাৎ করে দু ধরনের অবজেক্ট পায়, তাহলে সে কি করতে পারে? আমরা ধরে নিচ্ছি, সামনের দুটো অবজেক্ট এর মধ্যে একটা গাছ এবং আরেকটা প্রাণী। সেই মুহূর্তে এই ‘অটোনমাস’ গাড়িটা কি সিদ্ধান্ত নেবে? এখানে যুক্তিযুক্ত হিসেবে ওই সময়ের আশেপাশের তথ্যের ভিত্তিতে যা করা উচিত, যন্ত্রকে সেটা করতে পারতে হবে।


  1. দেখতে পারেন এখানে, https://www.amazon.com/Artificial-Intelligence-A-Modern-Approach/dp/0134610997/