কনটেন্টে যান

সার্বজনীন ন্যূনতম আয়, ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বাংলাদেশে বিশালাকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

এই সব সমস্যার সমাধান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং তার এনালাইসিস। আমরা যখন ডিপ লার্নিং এর নিউরাল নেটওয়ার্ক চালাই সেখানে লক্ষ-লক্ষ প্যারামিটার থাকতে পারে। সে হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আমাদের ১৬ কোটি মানুষের জন্য হাজারো প্যারামিটার কোন সমস্যা নয়। আমরা যদি সঠিক প্যারামিটার এবং রুলসেটগুলো ঠিকমতো ধরিয়ে দিলে বাকিটা চালিয়ে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আগের ডাটা থেকে। এখন 'ওপেন-এআই' এর 'জিপিটি-৩' 'ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং'য়ের মডেলের যদি ১৭৫০ কোটি প্যারামিটার নিয়ে কাজ করতে পারে, সেখানে বাংলাদেশের মতো বিশালাকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা তার জন্য সমস্যা নয়। আমি বলছি!

আমরা যে ভাবেই মডেলকে ট্রেইন করি না কেন, সেই মডেল ধীরে ধীরে সুচারুভাবে কাজ করতে পারবে - ডাটা প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে। এভাবেই চালানো যাবে এই বিশালাকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে। যেকোন দেশের সরকারের পক্ষে বিশালকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা চালানো সম্ভব নয়, ডাটার ব্যবহার ছাড়া। সেখানে, শুরুতে ব্লক-চেইন, সবাইকে সনাক্ত করে একজন দুস্থকে তার প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেবার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া গতি নেই। মানুষকে সেখানে ব্যবহার করলে দেরি, অন্যায় সুবিধা দেয়া, অনলাইনেই লাইন ভাঙ্গা এবং সেই 'দলাদলি' শুরু হবে। সত্যি বলতে মানুষের বায়াস আছে, আমারও থাকবে - আমরা তাই মানুষ। যন্ত্রের বায়াস কম, আর তাই আমরা যন্ত্রের ওপর নির্ভর করি ফেয়ার-প্লেতে। আমি আপনি একটা সাইটে অর্ডার দিলে সিস্টেম সেটাকে একটা সিরিয়ালে ফেলে দেয়। আমরা সেটা চাই প্রায় সব জায়গায়। যন্ত্রের কাজ যন্ত্র করবে, তবে মানুষ সেখানে 'ওভাররাইড' করতে পারবে, দরকারি ক্ষেত্রে।

সার্বজনীন ন্যূনতম আয়, কতোদুরে আমরা?

জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খরচ

The state gives everyone a set amount of money every month, no matter who they are or what they do. The income cannot be reduced, nor do the recipients have to earn the money in any way. They may, of course, work to earn more money.

-- Universal basic income: An option for Europe? DW News

পৃথিবী যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে, সে কারণে মানুষের প্রচুর কাজ চলে যাবে যন্ত্রের কাছে। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ যন্ত্র এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষ আসছে মানুষের সহায়তায়। ধরুন, আমাদের বাসায় কাপড়চোপড় ধোবার জন্য আলাদা কারো সাহায্য না নিয়ে ‘বুদ্ধিমান’ ওয়াশিং মেশিন (যে তার কাজটা ভালো জানে) এ ধরনের কাজগুলো করে ফেলছে বহুদিন আগে থেকে। মানুষের ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত যত সড়ক দুর্ঘটনা হয়, তার জন্য ‘সেলফ ড্রাইভিং’ প্রযুক্তির গাড়িগুলো কমিয়ে আনবে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুহার। মানুষের কাজ হারানো থেকে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বটে।

জনগণকে তার চাওয়ার কাছাকাছি আনতে পারা

প্রযুক্তি যেভাবে মানুষের ‘কায়িক’ কাজ কেড়ে নিচ্ছে, সেভাবে এই প্রযুক্তি মানুষের জন্য খুলে দিচ্ছে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র। মানুষের কাজ প্রযুক্তি কেড়ে নিচ্ছে বলে নয়, তবে, একজন মানুষ একটা দেশে জন্মগ্রহণ করলে তার ন্যূনতম আয়-ব্যয়ের হিসাব রাষ্ট্র নিয়ে নিলে সেই মানুষটি তার নিজের স্বপ্নের পেছনে দৌড়াতে পারে। মানুষকে যদি তার প্রতিদিনের খরচের একটা ন্যূনতম অংশ যদি রাষ্ট্র থেকে দেওয়া হয় তাহলে কি হতে পারে? পৃথিবীব্যাপী ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ অর্থাৎ ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’কে ঘিরে অনেক কাজ হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী। মানুষ কাজ হারালে যেভাবে উন্নতদেশগুলোতে একটা মানুষের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম সংস্থান রাখে, সেভাবে কাজ করতে শুরু করেছে এই ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ ধারণাটি।

বর্তমানের ইউটোপিয়া 1

তবে ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’ ধারণাটি নতুন নয়। ইংরেজ দার্শনিক ‘টমাস মোর’ তাঁর এক উপন্যাসে সেই ১৫১৬ সালে একই ধরনের ধারণা দেখিয়েছিলেন। উপন্যাসটির নাম শুনলেই বুঝতে পারবেন ব্যাপারটা, তবে সেই জিনিসটা এখন ঘুরে আসছে বারবার। ‘ইউটোপিয়া’ উপন্যাসটার নাম হলেও পুরো ব্যাপারটা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা চিন্তাভাবনা শুরু করেন ১৯৬০-৭০ সালের দিকে। এর প্রয়োগ নিয়ে মার্কিন অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যান ১৯৬২ সালে ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’ সম্পর্কিত ধারণাটাকে একটা ‘নেতিবাচক অথবা ঋণাত্বক আয়কর’ নাম দিয়েছিলেন, যার ফলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের নিচের উপার্জনকারীরা কর পরিশোধের পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে পরিপূরক খরচ পাবেন।

৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা এই ঋণাত্বক আয়কর এবং বাত্সরিকভাবে একটা টাকা দেবার বিষয়ে বিভিন্ন শহরে পাইলট স্টাডি চালিয়েছিল। ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে পুঁজিবাদের ধারণায় সেই ব্যাপারগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়।। ভালো কথা হচ্ছে ১৯৮২ সাল থেকে, আলাস্কা তাদের জনগনের বয়স, কর্মসংস্থান বা অন্য কোনও বিধিনিষেধ নির্বিশেষে, তেল উত্তোলন থেকে লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। ব্যাপারটা এরকম যে, রাষ্ট্র এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে - যাতে জনগণ তার জীবনের সব চাওয়ার কাছাকাছি যেতে পারে। সেটার জন্য সেই মানুষটাকে 'এনাবল' করতে যা করা প্রয়োজন সেটা করবে রাষ্ট্র।

শুরুটা আসতে পারে ‘ঋণাত্বক আয়কর’ দিয়ে

তবে “সার্বজনীন ন্যূনতম আয়” এবং “ঋণাত্বক আয়কর” - দুটো দু'ধরনের প্রেক্ষিতে কাজ করে।‘ যেহেতু, 'ঋণাত্বক আয়করে’র একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের নিচের উপার্জনকারীরা কর পরিশোধের পরিবর্তে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাবেন, সেখানে “সার্বজনীন ন্যূনতম আয়” এর জন্য কোন ধরনের শর্ত থাকবে না। উদাহরণ হিসেবে, বাৎসরিক ২ লক্ষ টাকার উপরে আয় হলে যদি কর দিতে হয়, সেখানে এই সীমার নিচে একজন মানুষ যত টাকা কম আয় করবেন - ততো টাকা ওই ব্যক্তি সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত পাবেন। কারো যদি বাৎসরিক এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা আয় হয়, তাহলে উনি বছর শেষে ৯০ হাজার টাকা ফেরৎ পাবেন।

‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’ এর পাইলট প্রজেক্ট

শুরু হয়েছে কাজ

Guaranteed income, reconceived as basic income, is gaining support across the spectrum, from libertarians to labor leaders. Some see the system as a clean, crisp way of replacing gnarled government bureaucracy. Others view it as a stay against harsh economic pressures now on the horizon.

-- Who really stands to win from universal basic income, Newyorker, Nathan Heller, 2018

বর্তমানে, যেহেতু অটোমেশন মানুষের অনেক চাকরিকে প্রতিস্থাপিত করছে - ফলে এই ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’ ব্যাপারটা আবার ফিরে আসছে অনেক জায়গায়। এই ধারনাটা নিয়ে বেশ বড় অ্যাডভোকেসি গ্রুপ কাজ করছে পৃথিবী ঘিরে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই ধারনার প্রচুর পাইলট হয়েছে পৃথিবীব্যাপী। কেনিয়া, ভারত, নামিবিয়া, ব্রাজিল, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট, ফিনল্যান্ড এবং আরো বেশ কিছু দেশ এই সার্বজনীন ন্যূনতম আয় নিয়ে ছোট ছোট প্রজেক্ট করে ভালো আউটপুট পেয়েছেন।

নামিবিয়াতে যেমন ১০০০ মানুষের জন্য প্রতিমাসে ১০০ নামিবিয়ান ডলার দিয়ে দেখা গেছে স্কুলের উপস্থিতি ৯২ শতাংশে পৌঁছেছে। বাচ্চাদের অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলো ৪২% থেকে কমে নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। একই ধরনের ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে ক্যানাডিয়ান একটা স্টাডিতে। সেই স্টাডিটার নাম ছিল ‘মানিটোবা বেসিক অ্যানুয়াল ইনকাম এক্সপেরিমেন্ট’। সেখানে প্রেইরি এলাকার দুস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষায় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে অনেক। এর পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলে থাকার সময় বেড়েছে। হসপিটালে ভর্তি হওয়ার শতাংশ কমে ছিল প্রায় ৮.৫ ভাগ।

কোভিড ১৯ এর শাপে বর, স্পেন

কোভিড ১৯ মহামারী আমাদেরকে শিখিয়েছে অনেক। এই মহামারীর সময় স্পেনের সরকার পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনৈতিক একটা পরীক্ষা শুরু করেছে। এই সময়ে স্পেনের দুস্থ পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য প্রতিমাসে ১ হাজার ইউরোর মত খরচ পাঠানোর জন্য একটি ওয়েবসাইট দিয়ে সেবা শুরু করেছে। এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় সাড়ে 8 লক্ষ পরিবারকে সহায়তা প্রদান করার জন্য এই প্রকল্পটির চালু করেছে।

এই পদক্ষেপটি বিশেষ করে মহামারীর সময় অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থায় পড়া দুস্থ পরিবারগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটা অসাধারণ পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। এই মহামারীর সময় প্রচুর মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে এবং এর ফলে দারিদ্র্যের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বেশিভাগ নাগরিক। এই ব্যবস্থায় বিশেষ করে, মহামারীর সময় - আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেছে নতুন করে ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ব্যাপারটাকে ঘিরে। আমার ধারণা, এই মহামারীর সময় আমাদের মতো অনেকগুলো দেশই তাদের ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়’ এর কাছাকাছি ‘ভ্যারিয়েন্ট’ কিছু ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এর মধ্যেই।

তবে, মহামারীর আগে থেকেই ওই দেশের বামপন্থী কোয়ালিশন সরকার ‘সার্বজনীন ন্যূনতম আয়ের মত আরেকটা স্কিম নিয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এই নতুন পদ্ধতিতে প্রতিটি যোগ্য পরিবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাসিক টাকা বরাদ্দ থাকবে - যার সাথে কোন আলাদা বিধিনিষেধ এর সংযোগ থাকবে না। যাকে আমরা বলি ‘নো স্ট্রিং অ্যাট্যাচড’। এতে যাতে এই ভাতার প্রাপকগণ দারিদ্র্যে আটকে না থাকে, তাদের প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর জন্য যতোটুকু দরকার সেগুলো তারা পাবে সেই তহবিল থেকে। এতে স্পেন সরকারের প্রতিবছর প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবার, ২৫০০ টাকা

মহামারীর মধ্যে আমাকে দেশি বিদেশী প্রচুর ডাটার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। অন্য দেশগুলো কী পারছে, আর আমরা কেন পারছিনা, সেটার একটা ভালো ধারণা এসেছে এর মধ্যে। তবে, সর্বজনীন ন্যূনতম আয় অথবা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য কিছু ধারনার ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এগিয়েছে আমাদের দেশ। সে কারণে বর্তমানে সরকার এই মহামারীর জন্য বেশকিছু প্রকল্প, বিশেষ করে মহামারীতে যারা সবচেয়ে বেশি দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল থেকে আড়াই হাজার টাকার ভাতা নিয়ে শুরু হয়েছে কাজ। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

এই করোনার কারণে, সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য শুরুতেই এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই বছরের ১১ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের দুই শাখা থেকে এ অর্থ ছাড় করা হয়েছে। যেটা ভালো হয়েছে, দ্রুত টাকা পৌছানোর জন্য পরিবারগুলোকে টাকা দেয়া হবে মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। এখানে এমএফএস সার্ভিসের জন্য সরকারকে খরচ করতে হবে সাড়ে সাত কোটি টাকা।2

ডাটা সাইন্স এবং অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী

মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা

বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো কার্যকর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার অভাব। জাতীয় পর্যায়ে বা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কর্মসূচি পর্যায়ে কোনো ক্ষেত্রেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কর্মসম্পাদন নিয়মিত পর্যালোচনা করার ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি কর্মসূচির প্রভাব মূল্যায়ন শীর্ষক কিছু সমীক্ষা সীমিত পরিসরে দাতাদের সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে। এসব সমীক্ষার ফলাফল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহের জন্য সুগঠিত ও কার্যকর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।

-- জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল: বাংলাদেশ

এই মুহূর্তে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী'কে খুঁজে বের করতে হলে যা প্রয়োজন - তার অধিকাংশ তথ্য আছে বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসি অফিসে। এর পাশাপাশি প্রতিবছর উপজেলা ত্রান কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে এ ধরনের লিস্ট যাচাই-বাছাই হয় প্রয়োজন পড়লে। আমি সেইসব তথ্যগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ডাটা দিয়ে ক্রস-ম্যাচিং করিয়ে এই অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী'কে ঠিকমত বেছে নেওয়া সম্ভব। এই ডাটা এনালাইসিস আগের সব তথ্যগুলোকে আরো ‘ফলপ্রসূ’ করার জন্য ব্যবহার করা হবে। অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এখন মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের ‘ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অব্লিগেশনস ফান্ড’ এর আদলে 'সোশ্যাল অব্লিগেশনস ফান্ড' থেকে দরিদ্র জনগোষ্টিকে এ ধরনের মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া সম্ভব। ফলে, সেই মোবাইল ফোনের বেনামী ডাটা (অর্থাৎ সেই ডাটাতে গ্রাহকের ফোন নাম্বারগুলো থাকবে না সনাক্তকরণ চিহ্ন হিসেবে) ব্যবহার করে একটা ফোনের প্রতিদিনের কার্যপরিধি, যেমন কখন চালু হয়, কখন বন্ধ হয়, উনার বাসা থেকে কতদূর পর্যন্ত যান, উনার ফোনে কতগুলো কল আসে এবং কতগুলো কল যায়, ফোনের রিচার্জ ভ্যালু এবং কতদিন অন্তর টপ আপ করা হয়, মোবাইল ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ব্যবহার করেন কিনা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল একাউন্ট আছে কিনা - ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যবহার করে আমাদের ক্রাইটেরিয়া মাফিক ‘যোগ্য’ মানুষকে বের করা কোন সমস্যাই নয়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি কাজ করেছি এবং দেখেছি বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে। এর ফলাফল অবিশ্বাস্য।


  1. Pandemic speeds largest test yet of universal basic income, Carrie Arnold, Nature 

  2. কারা পাচ্ছেন সরকারের দেয়া ২৫০০ টাকা, সময়টিভি, ১২-০৫-২০২০