কনটেন্টে যান

উদীয়মান অর্থনীতিতে শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং কৃষি ভর্তুকি

কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভর্তুকি

কয়েকটি খবর। আমাদের দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ২০০ কোটি টাকা প্রণোদনার কয়েকটা প্যাকেজ নেয়া হয়েছে।

আচ্ছা ভর্তুকি কাকে বলে? এবং প্রণোদনা কেন দেওয়া হয়? অথবা, ভর্তুকি দেবার খাতগুলো নির্দিষ্ট কিনা?

আমরা এভাবে বলতে পারি, কোন জিনিসের মূল্য নির্ধারিত করার পর যদি সেই মূল্য পূর্ণভাবে কোনভাবে আদায় না হয় - তাহলে যতটুকু বাকী থাকল সেটা নিজ থেকে পরিশোধ করার নামই ভর্তুকি। এ ব্যাপারটি একজন মানুষের জন্য চিন্তা না করে সেটাকে সরকারের পক্ষে হলে সেটাকে আরো বড় ফ্রেমওয়ার্কের নেওয়া যেতে পারে। তবে, সরকারি ভর্তুকি কিভাবে দেয়া যেতে পারে সেটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা আছে খ্যাতিমান জার্নালগুলোতে। যেহেতু, ভর্তুকি বন্টন ব্যবস্থা একাই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো একটা বড় ব্যবস্থাপনা, সে কারণে এই ব্যবস্থাপনায় পেছনের ডাটা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা ছাড়া পুরো ব্যাপারটা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করা ঝামেলাপূর্ণ।

উদীয়মান অর্থনীতিতে শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং কৃষি ভর্তুকি

বাংলাদেশের মতো উদীয়মান একটা অর্থনীতি যেখানে শিল্প বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে সরকার প্রতিবছর একটা বিশাল টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ২৬ শতাংশ যা প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকার মতো। [^২] তবে, এই ভর্তুকির মধ্যে কিভাবে কোন খাতে কোন নীতিমালার আঙ্গিকে বিভিন্ন ভর্তুকিগুলো যাচ্ছে সেটার নিয়ে একটা নীতিমালা থাকতেই পারে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামোতে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে যার মধ্যে ভর্তুকির পরিমাণ অনেকখানি ছিল। এখানে একটা ছবি দেখি এই বছর এবং ২০২১ সালে কী হতে পারে?

খরচের একটা ধারণা, ২০২০-২০২১

রপ্তানি, খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও কৃষি—এই পাঁচ খাতে সরকার প্রতি বছর কী পরিমাণ ভর্তুকি দেয় তার একটি তুলনামূলক ধারণা তৈরি করা যায় গতবছরগুলোর ডাটা থেকে। তবে এখানে আমার ধারণা হচ্ছে - এই ভর্তুকি কিভাবে কোন খাতে এবং কোন নীতিমালায় যাচ্ছে সেই ভর্তুকির বন্টন ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা যায় পেছনের সব ডাটা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। যেহেতু, সমাজে বৈষম্য এবং দারিদ্র্য দূর করার জন্য সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে - সে কারণে এ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে আমাদের পেছনের ডাটা ব্যবহার করতে হবে।

আসল ভর্তুকির হিসেব করতে দরকার 'সরবরাহ থেকে প্রান্তিক পর্যায়' পর্যন্ত ম্যাট্রিক্স

একটা উদাহরন নিয়ে কথা বলি। সারের ভর্তুকি আমাদের প্রায় জিডিপি'র ১ শতাংশের সমান। এই বছরে অনেকগুলো পত্রপত্রিকা দেখে যা বুঝলাম, কৃষকের খরচ কমিয়ে আনতে গত এক দশকে সারের মূল্য কমানো হয়েছে পাঁচবার। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ে সারের প্রয়োজনীয়তার আসল গণনা করতে পারলে এই ভর্তুকি কমানো সম্ভব। তবে এটা একটা বিশাল কাজ। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি সার প্রস্তুতকারক এবং আমদানিকারক উভয়কেই আমাদের বিভিন্ন এলাকার জলবায়ু, পরিবেশগত ধারণা, এর প্রাসঙ্গিক নীতিমালা এবং মূল্য ম্যাট্রিক্সের পর্যালোচনা করে সঠিক হিসেব প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া এ ধরনের ডিটেইল লেভেলে হিসেব করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এদিকে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর চাপ উপেক্ষা করে অব্যাহত রেখেছে এই ভর্তুকি সব সরকার। গত এক যুগে শুধু সারেই প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এটার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন একটা ‘এন্ড টু এন্ড’ ডাটা ভিত্তিক অপারেশন। আসল ভর্তুকির হিসেব বের করতে।

তবে এ ধরনের সিস্টেমে আরও দক্ষতা এবং নির্ভুলতা তৈরি করতে সরকারি ডাটার ইনপুট ব্যবহার করে এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে জলবায়ু, পরিবেশভিত্তিক বিষয়গুলোকে একসাথে আনতে সবার সাহায্য দরকার। এগুলো বিবেচনা করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্টেকহোল্ডারের সাথে সমন্বয় প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমগুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ম্যাট্রিক্সের পাশাপাশি প্রস্তাবিত এবং আসলে কতোটুকু ভর্তুকি লাগবে, যা মাসিক এবং জেলাভিত্তিক সারের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করতে পারে। এই ব্যবস্থাপনা মানুষের সময় কমাবে এবং সিস্টেমের হিসাবের গ্রানুলারিটি বাড়িয়ে তার পাশাপাশি নির্ভুলতা বাড়িয়ে তুলতে পারবে। জেলাভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণের পরে, প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সার পরিবহনের জন্য সংস্থাগুলোকে সেই কৃষিভিত্তিক দ্রব্যের সরবরাহ করতে কতোটুকু ভর্তুকি লাগবে সেটাও হিসাবে আসবে সেই ড্যাসবোর্ডে।

নবায়নযোগ্য শক্তি এবং এর ভর্তুকি

তবে ইদানিং নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে পুরো পৃথিবীতে বিশাল কাজ চলছে। এখানে সৌর এবং বিদ্যুৎ শক্তি নিয়ে দেশগুলো অনেক ভর্তুকি দিচ্ছে কারণ পৃথিবী জুড়ে 'কার্বন এমিশন' বেড়েছে বহুগুণ। এই সমস্যাকে মনে রেখে তৈরি হয়েছে জলবায়ু বিষয়ক বিশাল ফান্ড। এরপরও একটা বিশাল ভর্তুকি চলে যাচ্ছে এই নবায়নযোগ্য শক্তি জেনারেশনে। কারণ, এখনই এটা ঠিক না হলে বিপদে পড়বে মানব সভ্যতা। যেহেতু বাংলাদেশেও এই শক্তি জেনারেশনের প্রচুর ভর্তুকি যাচ্ছে, এখানে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' খুব ভালোভাবে সাহায্য করতে পারে এর ব্যবস্থাপনায় এবং প্রেডিকশনে। তবে, এটা ঠিক যে নবায়নযোগ্য শক্তি 'জেনারেট' করতে আমাদেরকে বসে থাকতে হয় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। সেটার জন্য দরকার ভালো প্রেডিকশন সিস্টেম।

বাংলাদেশে যদিও এই নবায়নযোগ্য শক্তিকে পুরোপুরি গ্রীডে আনতে সময় লাগছে, তবে সামনের বছরগুলোতে এই নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সৌরশক্তি ভাল কাজে দেবে এবং দিচ্ছে। এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কবে, কখন, পুরো সূর্যের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে - সেই প্রেডিকশন নবায়নযোগ্য শক্তি সেক্টরকে ইনভেস্টরদের ভালো ধারণা দিতে পারে। অন্যান্য দেশে এই নবায়নযোগ্য শক্তি সেক্টরে এই মুহূর্তে ভর্তুকির প্ল্যান ঠিকমতো কাজ করলেও লম্বা সময় ধরে এই জিনিসটা কাজ করবেনা। আর সে কারণেই প্রেডিকটিভ এনালাইসিসের মাধ্যমে বিশেষ করে ১২ থেকে ২৪ মাসের 'স্কাডা' তথ্য নিয়ে পুরো দেশের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ 'নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর গ্রিড সিস্টেম' তৈরি করা যায় আমাদের এখানেই।