কনটেন্টে যান

সিআরভিএস এবং শিক্ষার্থী একীভূত আইডি

বাংলাট্রিবিউনের রিপোর্টটা1 পড়ছিলাম। চমত্কার রিপোর্টটি করেছেন এস এম আববাস।

শিক্ষার্থীরা পেতে যাচ্ছে ইউনিক আইডি

দেশের তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) তৈরি করছে সরকার। পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী থেকে ১৭ বছর বয়সের দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্র-ছাত্রী পাবে এই ইউনিক আইডি। এই আইডিতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে, যা পরবর্তীতে হবে ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না। ২০২০ সাল থেকে শিক্ষার্থী শনাক্ত করার ইউনিক আইডি দেওয়া শুরু হবে।

সিআরভিএস এবং শিক্ষার্থী সনাক্তকরণ পদ্ধতি

এই রিপোর্টটা থেকে আমরা বুঝতে পারছি বিশেষ করে শিক্ষার দিক থেকে আমাদের দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতির দিকে হাঁটছে। একটা দেশে বেশ কয়েকটি সনাক্তকরণ পদ্ধতি থাকলেও সেগুলোর একীভূত না করা হলে ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। একই মানুষ তবে তার ভিন্ন ভিন্ন ডাটা ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেমে থাকলে সেটা থেকে আসতে সময় নেবে। এতে দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ডিসিশন সাপোট সিস্তেম ড্যাশবোর্ডে ভুল তথ্য যাবে। সব ডাটা থেকে কোরিলেশন হলেই ডাটার মধ্যে ক্রসম্যাচ হবে আর সেটা থেকে আউটপুট পাওয়া সফল হবে।

এর পাশাপাশি বুঝতেই পারছেন এই জিনিসটার সংযোগ আসছে সেই ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস) থেকে। এর মানে হচ্ছে এই সিআরভিএস এর একটা এক্সটেন্ডেড অংশ হচ্ছে শিক্ষার্থী সনাক্তকরণ পদ্ধতি। সেখানে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এই নতুন আইডিতে এখনকার জাতীয় পরিচয়পত্রের চেয়ে বেশি তথ্যের সংযোজন থাকবে। সেটা কিভাবে হবে?

এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (IEIMS)

আসলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতি প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করলে সেটা জাতীয় পরিচয়পত্রের থেকে বেশি হবেই। এর পাশাপাশি শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (IEIMS)’ প্রকল্প দুটো ভালো কাজে দেবে। এই ডাটাসেটের মধ্যে সিটিজেন কোর ডাটা স্ট্রাকচার স্টাইলে নেবার ফলে সেই শিক্ষার্থী ১৮ বছর হলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয়পরিচয় পত্রে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। ফলে এই ডাটাসেটের সাথে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন জেনারেলের কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনিআইডি) ডাটাসেট কানেক্টেড থাকবে।

প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি

দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিশেষ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে আগে থেকেই ‘সিআরভিএস’ এর কাজ শুরু করেছে, সেখানে এর সাথে যুক্ত করে সংখ্যার হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। হিসেবে দেখেছি শুরুতে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক কোটি ৮৭ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা কাজ শুরু হয়েছে। এই তথ্য সংগ্রহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা করে ইউনিক প্রফাইল ইন সিস্টেম তৈরি করা। রিপোর্ট থেকে যেটা বোঝা গেছে, ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে, তা শেষ হবে ২০২১ সালে।

একীভূত করার প্রসেস

তথ্য দিতে হবে অনলাইনে

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা জরিপে ইআইআইএনধারী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ব্যানবেইসের ওয়েবসাইটে লগইন করে এসব তথ্য দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

-- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, ১৯ নভেম্বর ২০২০, জাগোনিউজ২৪.কম

এখানে জন্ম নিবন্ধন ডাটাসেটের সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন এবং তার বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে একটা রিলেশন তৈরি করে ব্যাপারটাকে ঠিক করে নেওয়া কোন সমস্যাই নয়। এখানে সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস), জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডি ডাটাবেজ একসাথে কাজ করছে যাতে একটা একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি বের করে নিয়ে আসা যায় যাতে জন্ম থেকে শিক্ষার্থীর জীবন এবং পরবর্তী সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্রতে মাইগ্রেট করে নেওয়াটা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতে থাকবে।

শিক্ষার্থীর সারাজীবনের রেকর্ড ট্র্যাকিং

এর সাথে ফর্মগুলো দেখে বোঝা গেছে এই ডাটাবেসে শিক্ষার্থীর ফল, কোন বিষয়ে ভালো এবং তার ব্যক্তি জীবনের অনেক তথ্যই থাকবে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে এখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনের ট্র্যাক রেকর্ড সম্বন্ধে ভালো ধারণা আসবে। চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ডাটাবেস কাজে লাগবে। শনাক্ত নম্বরটি দিলেই সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর তার তথ্য জানতে পারবে। এর অর্থ হচ্ছে যেকোনো শিক্ষার্থীকে বিশেষ করে যারা ভালো ফলাফল করছে শুরু থেকে তাদের ঝরেপড়া রোধ হবে। সরকার জানবে তাদের কি সমস্যা হচ্ছে এবং সেই সমস্যাগুলোকে সমাধান করে তাদেরকে স্কুল বা কলেজ সিস্টেমে ইন্ট্রিগেটেড করবে।

এই রিপোর্টেই ২০১৯ সালে জুলাই মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছিলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটা ডাটাবেইসের আওতায় নেওয়া হবে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী শিশুর বয়স যখন পাঁচ বছর হবে তখন থেকেই একটি সিস্টেমে নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হবে। শিক্ষার্থীরা একটি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর পাবে। এই নম্বরটিই পরবর্তী সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরে রূপান্তরিত হবে। প্রাথমিকের যারা আইন্টিফিকেশন নম্বর পাওয়ার পর মাধ্যমিকে ভর্তি হবে এবং মাধ্যমিকের পর কলেজে ভর্তি হবে তখন পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক ও কলেজের কাছে এই তথ্য চলে যাবে। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হলে এনআইডির অনুবিভাগের আওতায় চলে যাবে তার তথ্য। এই সিস্টেমে কোনও তথ্য ডুপ্লিকেশনের সুযোগ নেই। সিআরভিএস বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এটি করা হচ্ছে। দেশের সব নাগরিকের জন্য একক পরিচয় নিশ্চিত হবে এই সিস্টেমে।’

ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণি গ্রুপের আইডি

এরপরের স্লটের কথা বললে স্কুলের সিনিয়র গ্রুপ - যেটাকে আমরা ধরে নিচ্ছি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণি যার রেঞ্জ হচ্ছে ১১ বয়স থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত। এই ডাটাটা এসেছে ব্যানবেইস সূত্র থেকে। হিসেব মতে এই ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে দেড় কোটি। অর্থাৎ এই দেড় কোটি শিক্ষার্থীর জন্য তৈরি হবে সেই একই ইউনিক আইডি। এটা অবশ্যই আগের ডাটার সাথে সম্পুরক হবে।

এই সিস্টেমে দেশে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে তা জানা যাবে সহজে। এমুহুর্তে কোনও শিক্ষার্থী অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। ফলে নীতিনির্ধারকদের হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তারা তাদের শিক্ষা সিস্টেম থেকে হারিয়ে গিয়েছে। এই ইউনিক আইডিটা এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে একই আইডি চলে যেতে পারে জাতীয় পরিচয়পত্রে। এই আইডি সম্বলিত যখন একজন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হয়ে যাবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই আইডিটি জাতীয় পরিচয় পত্র পাল্টে যাবে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর হিসেব

এদিকে ব্যানবেইস সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১১ থেকে ১৭ বছর) প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি। ২০২০ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পুরো জিনিসটি ঘটবে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্প থেকে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে - ‘এটি একটি সিটিজেন ডাটা স্টাকচার। এই ডাটা স্ট্রাকচারের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সব তথ্য থাকবে। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে গেলে শুধু ইউআইডি নম্বর দিলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। নতুন করে কোনও তথ্য প্রয়োজন হবে না। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ইউআইডি নম্বর চেক করলেই সব তথ্য পাবে। এখানে কোনও তথ্য ভুল হওয়ার সুযোগ নেই এবং নকল করার সুযোগ থাকবে না। এই ডাটাবেইসে তার সারা জীবনের তথ্য সংযোজিত হবে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব তথ্যই থাকবে। একটি সময়ে গিয়ে দেশের সব মানুষ এই ডাটাবেইসের মধ্যে চলে আসবে। জনসংখ্যার পরিসংখ্যান করতে নতুন করে কোনও সময় ও অর্থ ব্যয় হবে না।’

এর অর্থ হচ্ছে আস্তে আস্তে আমরা ঢুকে যাচ্ছি একটা একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতিতে। তবে সেটাতে একটু সময় লাগছে এই যা। সেটা থেকে উত্তরণের উপায় কী?


  1. শিক্ষার্থীরা পেতে যাচ্ছে ‘ইউনিক’ আইডি, এস এম আববাস, প্রকাশিত জুলাই ১২, ২০১৯, বাংলা ট্রিবিউন - https://www.banglatribune.com/national/news/505697/