কনটেন্টে যান

কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর, বর্তমান সনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং ফটোকপি

ফিনান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট এবং কাগুজে ডকুমেন্ট

ডিজিটাল এজেন্ডা

eIDAS is a result of the European Commission's focus on Europe's Digital Agenda. With the Commission's oversight, eIDAS was implemented to spur digital growth within the EU.

-- (electronic IDentification, Authentication and trust Services) an EU regulation on electronic identification and trust services for electronic transactions

শুরুতে একটা উদাহরন দিচ্ছি। সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেবার সময় কাজটা ঠিকমতো উঠবে কিনা এবং ভবিষ্যতে সেটা কাজ করবে কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য ‘পারফরম্যান্স বন্ড’ অথবা ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ নিয়ে নেয় কাজ দেবার সময়। এটা একটা ‘ব্যাংক ইন্সট্রুমেন্ট’ যার মাধ্যমে কাজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারেন যিনি কাজটা পেয়েছেন উনার কাজের সদিচ্ছা এবং কোন কারণে কাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করতে না পারলে এই ইন্সট্রুমেন্টটিকে কাজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকায় পরিবর্তন করতে পারেন।

তবে এখন জালিয়াতি প্রযুক্তি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে ব্যাংক যে ধরনের কাগুজে ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ অথবা ‘বন্ড’ দিচ্ছেন সেই ইন্সট্রুমেন্টটাকে পুরোপুরি নকল করা যায়। ফলে এই মুহূর্তে যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ দিচ্ছেন তারা কাজ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এই বন্ড অথবা গ্যারান্টি ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে নিলেও পরবর্তীতে তারা ব্যাংক থেকে আলাদা করে নিশ্চিত করেন যাতে এই ইন্সট্রুমেন্টটার ‘জাল’ না হয়।

এমনও ঘটনা ঘটেছে - প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠি পাঠানোর পরও ব্যাংক থেকে সেই গ্যারান্টি অথবা বন্ডকে চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করার পর পুনরায় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায় যে সেই চিঠিটি ব্যাংক পাঠাননি অথবা ব্যাংক এ ধরনের নিশ্চিতকরণ চিঠি সেই প্রতিষ্ঠানকে দেননি। অর্থাৎ চিঠিটাও জাল। ফলে এ ধরনের ফিনান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট সনাতন কাগুজে পদ্ধতিতে নিশ্চিতকরণ অথবা ‘ভেরিফাই’ করা সম্ভব নয়।

গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে কাগুজে বন্ড

দ্বিতীয় ঘটনা। যারা পরিবার নিয়ে হজে যান তাদেরকে এককালীন যে টাকা জমা দিতে হয় সেটা হাতে করে বহন করা নিরাপদ নয় বলে ‘পে-অর্ডার’ এর মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া যায়। একটা পরিবারের যদি তিনজন হজে যান তার জন্য যতো টাকা হাতে করে এক ব্যাংক থেকে তুলে আরেক ব্যাংকে জমা দিতে হবে তার জন্য ‘পে-অর্ডার’ করা অনেক সহজ এবং নিরাপদ বলে সবাই এই ফিনান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টটাকে ব্যবহার করতে চান। এই জিনিসটাকে একটা কন্ট্রোলিং নম্বর সিয়ে ‘ডিমান্ড ড্রাফ্ট’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে সেটার সময় লাগে বেশি।

বর্তমানে পে-অর্ডারের জালিয়াতির ঘটনায় ইদানিং ব্যাংকগুলো পে-অর্ডার জমা দেওয়ার পর সেই পে-অর্ডারটি নগদায়ন/‘এনক্যাশ’ অর্থাৎ টাকায় পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোন ধরনের ছাড়পত্র দিতে পারছেন না। অথচ ব্যাংক ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে ‘পে-অর্ডার’ অর্থ হচ্ছে সমপরিমাণ টাকা তাকে দিতে বাধ্য থাকবে। একদম টাকার মতো। এর জন্য পূর্বের ব্যাংকের কনফার্মেশন এর প্রয়োজন নেই। একই ঘটনা ঘটছে টাকায়। সেকারণে মানুষ ঝুকছে ডিজিটাল টাকায়।

সরকারি/বেসরকারি ডকুমেন্ট জালিয়াতি

তৃতীয় ঘটনা। বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রোডাক্ট আমদানির জন্য কিছু রেগুলেটরি সংস্থার অনাপত্তি অথবা ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়ে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এই অনাপত্তি এবং ছাড়পত্রগুলো রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়ে জমা দেন শুল্ক বিভাগে। এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে এ ধরনের অনাপত্তিপত্রের জালিয়াতি হবার কারণে সরকার তার সঠিক শুল্ক এবং অজানা সংখ্যক জিনিসপত্র ঢুকে গেছে দেশের ভিতরে। অথবা অনাপত্তিপত্রে মালামাল সংখ্যা আসলে যা ছিল তাকে পরিবর্তন করে অন্যান্য মালামাল যোগ করা হয়েছে যা মূল ‘অনাপত্তি’ পত্রে ছিল না। এধরনের জালিয়াতির ঘটনা বেশ ঘটেছে জমি সংক্রান্ত দলিল নিয়ে। এ ধরনের দলিলকে ঠিকমতো শনাক্তকরণ পদ্ধতির অভাবে প্রচুর মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন।

এধরনের পরপর কয়েকটা ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে কাগজের ফিনান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট অথবা এগ্রিমেন্ট কপি অথবা সরকারি অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের যে কোন চিঠি, রেগুলেটরি এজেন্সিগুলোর অনাপত্তি ছাড়পত্র, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স এর কপি, দলিল - কোনটাই এই জালিয়াতি থেকে মুক্ত নয়। ফলে বর্তমানে দেশের ভেতরে/বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রাক্ট এবং এগ্রিমেন্টে মানুষের যতো স্বাক্ষর রয়েছে সেটাকে নিশ্চিতকরণ অথবা ভেরিফাই না করা পর্যন্ত কোন ডকুমেন্টকে সত্য বলে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

সাক্ষর কী জালিয়াতি থেকে বাঁচাতে পারছে?

ইলেকট্রনিক সিগনেচার

A contract or signature “may not be denied legal effect, validity, or enforceability solely because it is in electronic form."

-- First section (101.a), Electronic Signatures in Global and National Commerce Act, USA

আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিকভাবে একটি চিঠি, কন্ট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট এবং অন্যান্য আইনগত ডকুমেন্টে মানুষের স্বাক্ষরকে শনাক্তকরণের পূর্ব শর্ত হিসেবে ধরে নেব ততক্ষণ পর্যন্ত এই জালিয়াতি চলতে থাকবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে - আমরা ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান থেকে যেই ডকুমেন্টটি পাচ্ছি সেখানে যার স্বাক্ষর রয়েছে সেই সাক্ষর তো আমরা আগে কখনো দেখিনি যাতে সেটাকে প্রাথমিকভাবে ভেরিফাই করা সম্ভব হবে।

আমি কি আপনার সাক্ষর চিনি?

একজন ব্যক্তি অথবা একটা প্রতিষ্ঠান যখন তাদের এধরনের ডকুমেন্ট আরেকটা প্রতিষ্ঠানে জমা দেন তখন দুটো প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন যোগসুত্র নেই যার মাধ্যমে এ ধরনের স্বাক্ষর, প্রতিষ্ঠানের সিল, ‘এমবোস’কৃত ডকুমেন্ট সনাক্তকরণ সম্ভব হবে। আমরা একটা ডকুমেন্টকে স্ক্যান করে নতুন করে প্রিন্ট করলে সেই এনালগ ডকুমেন্টকে সনাক্তকরণ করার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করছি না এ মুহূর্তে। ফলে, স্ক্যানকৃত ডকুমেন্টের ‘প্রিন্ট-আউট’ মানে এই নয় যে এইটা আসল ডকুমেন্টের প্রতিচ্ছবি।

ডিজিটাল ডকুমেন্ট, সনাক্তকরণ পদ্ধতি

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি সরকারি এবং বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের এনালগ মানে কাগুজে ডকুমেন্টে কিছু ডিজিটাল সিগনেচার এর মতো প্রযুক্তি ‘এমবেড’ মানে সংযোগ করে দিচ্ছেন যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার মোবাইল হ্যান্ডসেটে ক্যামেরা ব্যবহার করে সেটাকে সনাক্ত করতে পারছেন। ব্যাপারটা এরকম যে ডকুমেন্ট অথবা এগ্রিমেন্টটা যিনি ইস্যু করছেন - উনি এনালগ ডকুমেন্টে এমন একটা লিংক জেনারেট করছেন যা পড়া যাচ্ছে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে। অর্থাৎ গ্রহীতা একটা ডকুমেন্ট সনাক্তকরণ কর্তৃপক্ষের (ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ হতে পারেন) মাধ্যমে ভেরিফাই করে নিচ্ছেন। এর মধ্যে ডকুমেন্টটা যদি পরিবর্তন অর্থাৎ টেম্পারিং হয় তাহলে সেটা সহজেই জানা যায় এ ধরনের সনাক্তকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন ডিজিটাল ডকুমেন্ট ইলেকট্রনিক ভাবে বন্টন এবং বিতরণ অর্থাৎ ‘ডিস্ট্রিবিউশন’ হলে সেই ডকুমেন্টটাকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্যালি বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা আসলে এ ধরনের জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। এটা সম্ভব এখনই।

এর পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট এবং দলিল দেখে থাকি সেটার প্রিন্ট কপি অনেক পৃষ্ঠা সম্বলিত হয়। এখানে এগ্রিমেন্ট এর সাথে যে অংশটুকু ব্যবহারকারীর কাছে থাকবে সেখানে এত বড় ডকুমেন্ট প্রয়োজন নেই। এজন্য উন্নতদেশগুলোতে দলিল হিসেবে সাধারণত এক পাতার একটা ডকুমেন্ট হয়ে থাকে - যেখানে বাকি অংশটুকু থাকে ইলেক্ট্রনিক এগ্রিমেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। বাংলাদেশে দলিলকে ইলেক্ট্রনিক্যালি পরিবর্তন করতে হলে সেটা যতটুকু সহজ, তার থেকে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে এখানে অনেক দলিল লেখক কাজ হারাবেন। এ ব্যাপারে সরকার তাদেরকে নতুন-কাজের আওতায় অর্থাৎ ‘রি-স্কিলিং’ প্রোগ্রামে নতুন অথবা একই ধরনের কাজে তাদেরকে পরিবর্তন করে আনতে পারেন। আমাদের প্রচুর কম্পিউটার অপারেটর প্রয়োজন।

দরকার সরকারি নীতিমালা - সঙ্গে ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা

আইনি সংজ্ঞা

In the United States, the legal definition outlined in the Electronic Signatures in Global and National Commerce (ESIGN) Act is “an electronic sound, symbol, or process, attached to or logically associated with a contract or other record and executed or adopted by a person with the intent to sign the record."

-- Electronic Signature vs Digital Signature: What You Should Know, Ontask

আমার বর্তমান ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটা সফটওয়্যার কোম্পানি থাকায় এই কাগুজে এগ্রিমেন্ট/ কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্টের সনাক্তকরণ পদ্ধতি নিয়ে প্রায় আলাপ হয়। সেখানে ‘ডকুসাইন’ বলে একটা সফটওয়্যার কোম্পানি কিভাবে নির্ভুলভাবে ইলেকট্রনিক কন্ট্রাক্ট এবং এগ্রিমেন্ট সহজে শনাক্ত করছে সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছি কয়েকবার। এই ‘ডকুসাইনের’ অপারেশন চলছে পৃথিবীর ১৮০ টার মতো দেশে। তবে, আমার রিসার্চ বলে এ ধরনের সার্ভিস বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ডকুমেন্টগুলোকে সঠিকভাবে সনাক্ত করার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০১ সালে জারি করা “ইলেকট্রনিক্স সিগনেচার গ্লোবাল এন্ড ন্যাশনাল কমার্স অ্যাক্ট” এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের “ইলেকট্রনিক আইডেন্টিফিকেশন অথেন্টিকেশন এন্ড ট্রাস্ট সার্ভিসেস” নীতিমালা অসাধারণভাবে প্রভাবিত করেছে।

মানুষ কখনোই তার প্রথাগত ধ্যান-ধারণা থেকে সরবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার এবং সংগঠনগুলোর সাথে কথা বলে একটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করে যা সরকার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে সুফল বয়ে নিয়ে আসে। অনেকটা চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এর মতো, নতুন জিনিস শুরুতে মানতে চাইবে না সবাই। আর সেকারণে এ ধরনের ইলেকট্রনিক সিগনেচার এবং ব্যবসায়িক নীতিমালার মধ্যে যুক্তিযুক্ত ‘সংযোগ’ নিয়ে আসতে হবে। এই একই কারণে ইলেকট্রনিক ভিসা পদ্ধতি সরকারগুলোর কাগুজে ভিসার কাছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।