সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস)

আমার দেখা মতে, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, তালাক এবং ভ্রূণের মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলোর পরিসংখ্যান ঠিকমতো রেকর্ড করার জন্য একটা সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। স্পেসিফিকভাবে, এটা একটা সরকারি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি ইভেন্টের একটি স্থায়ী রেকর্ড তৈরি করে রেখে দেয়। এখন আমরা ঠিকমতো বললে একটা সু-কার্যকর সিআরভিএস সিস্টেমের কী করতে পারে:

ক. একটা দেশের প্রতিটা মানুষের জন্য তাদের আইনী পরিচয় স্বীকৃতিসহ সেটাকে ঠিকমতো সুরক্ষিত করে। এই একই পরিচয় নিবন্ধন পদ্ধতি জনসেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং মানবাধিকারের অ্যাক্সেসের অধিকার নিশ্চিত করে;

খ. পুরো দেশের জন্য জনসংখ্যার ডিনামিক্স, এবং স্বাস্থ্য সূচকগুলির পরিসংখ্যান তৈরি করে প্রশাসনিক এলাকাগুলোর ভিত্তিতে - এই ব্যাপারটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস;

গ. দেশের নীতিনির্ধারকদের সহজে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একটা ড্যাশবোর্ড এবং প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান সম্পর্কিত তথ্য জেনারেট করে দেবে এই সিআরভিএস। এই ড্যাশবোর্ড থেকে ডাটা নিয়ে নীতি নির্ধারনী পলিসি, সেগুলোর পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন আমাদের নীতিনির্ধারনীতে বসে থাকা মানুষজন।

ঘ. একটা দেশের মৃত্যুর বিস্তৃতি,তার ডিস্ট্রিবিউশন মানে জনবসতির উপর সেটার বন্টন এবং কেন ব্যাপারগুলো ঘটছে সেটার বোঝার একটা পার্সপেক্টিভ পাওয়া যায় এই ‘সিআরভিএস’ থেকে। এর পাশাপাশি পুরো দেশের স্বাস্থ্যগত অসমতা মানে ইনইকুয়ালিটি বোঝা যায় এলাকা ধরে। সেটা দেখে নীতিনির্ধারকগণ তাদের কাজের প্রায়োরিটি বের করতে পারবেন।

আচ্ছা, জাতিসংঘ এই সিভিল রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে কী বলেছে সেটা একটু দেখি এখানে;

জাতিসংঘ কী বলছে

… “the continuous, permanent, compulsory, and universal recording of the occurrence and characteristics of vital events (live births, deaths, fetal deaths, marriages, and divorces) and other civil status events pertaining to the population as provided by decree, law or regulation, in accordance with the legal requirements in each country.1

যে জিনিসটা বোঝা গেছে - কোন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানের মান উন্নত এবং এর পাশাপাশি দেশের জন্য নীতি ও কর্মসূচী পরিচালনার করতে এই সিআরভিএস সিস্টেমের বিকাশ ও শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে 'বাংলাদেশ সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস)' বাংলাদেশে একই ধরনের একটা একক আইডি-ব্যবস্থাপনা তৈরি করে সকল নাগরিকের জীবন-প্রবাহের উল্লেখযােগ্য ঘটনাসমূহ তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ এবং এর ভিত্তিতে সরকারের সকল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগের সূত্রপাত ২০১০ সালে।

বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ডকুমেন্ট হিসেবে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্থাৎ 'get everyone in the picture' বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তাঁর জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তার সম্পর্কিত সকল তথ্য যেমন: জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধিত করা এবং তার ভিত্তিতে প্রয়ােজনীয় সকল ধরণের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হল ‘সিআরভিএস’।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা (প্রধানত স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ওপরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) আলাদাভাবে এই জিনিসগুলো করে আসছিলো| যেহেতু এখানে সমন্বয়ের একটা সমস্যা থাকাতে এধরনের সব কাজে দ্বৈততা, অসামঞ্জস্যটা এবং কখনাে কখনাে বৈপরিত্য দেখা যাচ্ছিলো। এজন্য় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস) সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করা হয়। ২০১৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এই বিষয়ে সিআরভিএস সচিবালয় তৈরি হয়।

জাতিসংঘের ধারনায় এ ব্যাপারটাতে কী কী তথ্য যোগ করা হবে সেটা অনেকটাই ছেড়ে দেয়া হয়েছে দেশগুলোর ওপর। আর সেকারণে বেসিক তথ্য জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিয়ে, তালাক, এবং দত্তক এই ছয়টি তথ্য়কে বেসিক সিআরভিএস-এর পাশাপাশি বাংলাদেশে সিআরভিএস জন্য বেসিক ছয়টি তথ্যের সঙ্গে আরো কিছু ডাটা যোগ করা হয়। জনগণের স্থানান্তর মানে ইন-মাইগ্রেশন, আউট-মাইগ্রেশন এবং শিক্ষাকে যোগ করে করে ‘সিআরভিএস’কে বাংলাদেশের জনগণের সেবাপ্রদান প্রক্রিয়া মানে সার্ভিস ডেলিভারি নিশ্চিত করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর সাথে যোগ করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে একটা সমন্বিত সেবাপ্রদান ব্যবস্থাপনা গড়ে তােলার ধারণা দেখেছি তাদের ডকুমেন্টগুলোতে।

এর পাশাপাশি, বাংলাদেশে আরো বিভিন্ন আইডি ব্যবস্থা যেমন, জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়পরিচয়পত্র এর সাথে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সমন্বিত করে একটা একীভূত আইডি দেবার কথা হচ্ছে। এই একীভূত আইডি-এর সাথে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্টুডেন্ট আইডি নিয়ে কাজ হচ্ছে যা শিক্ষারসকল পর্যায়ে ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তীতে এই একীভূত আইডি জনগণ মানে সবাই অন্যান্য সেবাগ্রহণে ব্যবহার করবেন। এখন আমরা দেখি কিভাবে শিক্ষার্থী ডাটাবেস একটা একীভূত সিস্টেমে যাচ্ছে?


  1. United Nations (UN). Principles and recommendations for a vital statistics system, Revision 2. UN, 2001.