কনটেন্টে যান

‘পার্সোনালাইজড’ শিক্ষা

শেখার মতো শেখা

It's not that I'm so smart, it's just that I stay with problems longer.

-- Albert Einstein

২৫ জনের ক্লাস

১৯৮৩ সালের ঘটনা। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে শুনলাম আমাদের ক্লাস সেভেনের দুটো ফর্ম। ২৫ জনের ফর্ম মানে একটা সেকশন, সঙ্গে একজন ফর্ম মাস্টার। উনি নিজে জ্যামিতির গুরু হলেও পুরো ২৫টা ছেলের দায় দায়িত্ব তার উপরে। অন্য বিষয় যেমন রসায়ন বা ইতিহাস কেন খারাপ করলাম সেটার জবাবদিহিতাও তার কাছে। ২৫টা বাচ্চার দেখভাল তার কাছে।

একটু রুটিন বলি। দুপুরের আগ পর্যন্ত ক্লাস। লাঞ্চের পরে সামান্য ব্রেক দিয়েই একটা ‘প্রিপারেশন (প্রেপ) টাইম’ বিকালের গেমস এর আগ পর্যন্ত। গেমস, নামাজ শেষ করেই আবার দৌড় ‘প্রেপ’ টাইমে। মাঝখানে ডিনার ব্রেক, রাত দশটা পর্যন্ত আবার প্রেপ টাইম। শীতের সময় সেটা কমে আসে। রাতের ঘুমের পর সকালে পিটি, এরপর ব্রেকফাস্ট, পরে ক্লাস শুরু। এর মধ্যে হাজারো ক্লাব অ্যাকটিভিটি, এই খেলা, সেই ক্রসকান্ট্রি দৌড় তো আছে। তবে, আমার গল্প হচ্ছে আমাদের ক্লাস টিচারদের নিয়ে। পড়াশোনার আদ্যোপান্ত ট্র্যাকিং নিয়ে। তবে উনাদের কাজ শুধুমাত্র ক্লাসে সীমাবদ্ধ ছিল না।

দেখা গেছে - ক্লাসের পাশাপাশি অন্যান্য প্রেপ টাইমে চলে আসছেন আমাদের বিভিন্ন শিক্ষক বিভিন্ন ছুতোয়। যদি কেউ কিছু না বোঝে সকালের ক্লাসে, ওই সুযোগে একটা ছোট মিনি ক্লাস নিয়ে ফেলতেন ১০-১৫ মিনিটে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার ছিল, যেহেতু ক্লাসের পড়া ভালো লাগতো না (এখনো ভালো লাগে না), তখন ক্লাসের পরে একদম পাঠ্যবই না ধরলেও সব পরীক্ষাগুলো পাড়ি দিতাম সমস্যা ছাড়াই। আমাদের পাস মার্ক ৪০ হলেও কোন পরীক্ষার মার্ক ওই রেঞ্জে থাকলে আমাদের মাথা খারাপ করে দিতেন শিক্ষকগণ। আমার জন্য ক্লাসের পর বাকি সময়টাতে লাইব্রেরির গল্পের বই ছিল নিত্য সঙ্গী। তবুও শুধুমাত্র ক্লাসের পড়া দিয়ে পরীক্ষা পাড়ি দেয়া যায় সেটা বুঝি এখন। সবাইকে আলাদা করে কিছুটা পার্সোনালাইজড নজরদারির মতো জিনিসটাই সম্ভব করেছে ব্যাপারটাকে।

আগামী প্রজন্মের জন্য

Education is simply the soul of a society as it passes from one generation to another.

– G.K. Chesterton

‘অ্যাডাপটিভ লার্নিং’, অভিযোজিত শিক্ষা ব্যবস্থা - সবাই আলাদা

এর পরের গল্পটা অনেকটাই কানেক্টেড। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষা নিয়ে বিশেষ করে অনলাইন ‘অ্যাডাপটিভ লার্নিং’ অর্থাৎ অভিযোজিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যদি একটা বড় ধরনের কাজ করে থাকে সেটা হচ্ছে খান একাডেমি। নন-প্রফিট হলেও সেটার পেছনে আছে বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট। পড়ালেখাকে সবার কাছে নেবার জন্য তাদের কাজ শুধুমাত্র প্রসংশনীয় নয়, অনেক রিসার্চ আছে এর পেছনে। সেই সালমান খানের বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম বেশ কিছু বছর ধরে। খান একাডেমি শুধুমাত্র অনলাইন লার্নিং নয় এর পাশাপাশি পৃথিবীব্যাপী লার্নিং কিভাবে সবার জন্য আলাদা করে কাস্টমাইজ করতে হয় সেজন্য বেশ কিছু রিসার্চ দেখছিলাম তাদের পক্ষ থেকে। এই গল্পগুলোর কিছু অংশ আপনাদেরকে না বললেই নয়। তবে ব্যাপারগুলো কিছুটা ভালোভাবেই কানেক্টেড।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারে আমার খুব একটা টান না থাকলেও বাহিরের হাজারো বই পড়ার আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। আর হবেই বা না কেন - যদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই আমার কাজগুলোকে নিজস্ব ছোট ছোট প্রশিক্ষণ মডিউল দিয়ে হয়ে গেলে সার্টিফিকেট দরকার কেন? বুড়ো বয়সে এসে মনে হলো একটা টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নিলে কেমন হয়? বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মানে ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ভর্তি হলাম একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুরুতেই পেলাম অসাধারণ কয়েকজন শিক্ষককে। উনারা সাহায্য করলেন পেছনের শিক্ষাগুলোকে কানেক্ট করতে।

ডাইনামিক শেখার ধারণা

Adaptive learning systems are designed to dynamically adjust to the level or type of course content based on an individual student's abilities or skill attainment, in ways that accelerate a learner's performance with both automated and instructor interventions.

-- Adaptive Learning Systems: Surviving the Storm, EDUCAUSE

তবে তাদের আন্ডারগ্র্যাড ‘প্রি-রিকুইজিট’ হিসেবে ফোরিয়ের, লাপ্লাস থিওরি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিকস (রেডিও কমুনিকেশনের জন্য একটা অসাধারণ মাইলস্টোন), কমিউনিকেশন থিওরি এবং টেলি-ট্রাফিকের মতো বেসিক জিনিসগুলোকে ধরতে নতুন করে অ্যালজেবরা এবং ক্যালকুলাস এর মত অনেক জিনিসের নলেজ গ্যাপগুলোকে ধরতে দ্বারস্থ হতে হয়েছিল এই লার্নিং প্ল্যাটফর্ম থেকে। কোচিংও করছিলাম এর পাশাপাশি। তখন বুঝেছিলাম এত বছরের বিভিন্ন সব বিষয়ের সব ধারণার ফারাক এর অ্যাক্যুমুলেশন এতই বেশি যে সেটা কাভার করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তবে তখন সাহায্য পেয়েছি ক্লাসমেটদের।

কেন আমাদের 'অংকের' জিন নেই?

তখন মনে হতো - কেন তৈরি হলো এত বছরের এত গ্যাপ, প্রায় প্রতিটা বিষয়ে? কেন আমরা বিশেষ বিশেষ বিষয়ে ভয় পেতাম? আবারো বলি - কেন আমরা ইনহেরেন্টলি বিশেষ করে অংক, জ্যামিতি, পদার্থ বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং এর মত গ্লোবাল স্কিলে পিছিয়ে? কেন আমরা মনে করি ‘অংক’ আমাদের জিনে নেই? কেন এই সমস্যাগুলো বড় হতে থাকে দিনের পর দিন - যাতে আমরা আস্তে আস্তে এই জিনিসগুলো শেখার ব্যাপারে আগ্রহ ছেড়ে দেই?