কনটেন্টে যান

সরকার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা - শুরুর প্রস্তাবনা

দেশীয় উদার নীতিমালা

If the government regulates against use of drones or stem cells or artificial intelligence, all that means is that the work and the research leave the borders of that country and go someplace else.

— Peter Diamandis

শুরুটা হবে কোথায়?

একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনি - আমাদের ডাটা কোথায়? ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন হবার আগে রাষ্ট্র এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিয়ত প্রচুর জনগণের ডাটা নিয়ে কাজ করে যা সাধারণত কাগজপত্রে পড়ে আছে বহুদিন ধরে। বিভিন্ন ফর্ম হিসেবে। ফাইল নোটে। নোটশিট হিসেবে। আলমারিতে। ফলে এই জনগণের ডাটাকে প্রসেস করতে হয় টেবিল থেকে টেবিলে ম্যানুয়ালি যার আউটপুট আসে অনেক সময় ক্ষেপণ করে। ১৯৯৯ সালে আমার ‘সিএন্ডএফ’ মানে ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্সি কিছু মাইক্রোসফটের সিডি/ডকুমেন্ট ছাড়াচ্ছিল, সেটাকে সাইন করাতে হয়েছিলো ২২টা টেবিলে। শেষ রক্ষা হয়নি শেষে। 'ইভ্যালুয়েশন' (স্যাম্পল) সিডির জন্য যে কর এসেছিলো সেটা দিয়ে ছাড়ানো হয়নি জিনিসগুলোকে। পরিবর্তন দরকার সেই প্রসেসের। সেই মানসিকতার। আমরা ভুলে যাই, ১৬ কোটি মানুষের আকাংখার প্রতিফলন একটা দেশ।

জনগণের জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট ডেলিভারি, জমি কেনাবেচা থেকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন এই সবকিছুর কাগজপত্র কাগুজে ফাইল জমা রাখা থেকে শুরু করে এর এনালগ ফাইলিং প্রসেস পদে পদে মানুষের বিশাল মনোকষ্টের কারণ হিসেবে দাড়ায়। পরে এই রেকর্ডগুলোকে আবার ‘রিট্রাইভ’ মানে বের করতে যে সময় এবং আলাদা পয়সা খরচ করতে হয় সেখানে ‘সরকারি সার্ভিস ডেলিভারি’ এবং ‘দক্ষতা’ এই দুটো জিনিস বিপরীত মেরুর অর্থ হিসেবে দাঁড়ায়। এই সমস্যা থেকে বের হবার জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে আমাদের দেশে। এখন দরকার, সেটা করার ম্যান্ডেট।1

বিজনেস প্রসেস, রুলস অফ বিজনেসের সামগ্রিক ধারণা

সমস্যার ভেতরে ঢোকা

Governments should make a genuine effort to understand what people need at different stages of their lives, and what their interactions with government actually look like. This can’t be done from the safe space of a government department. It can only be achieved by going out, speaking to people, and experiencing life from their perspective.

-- Finding a more human government, Centre for Public Impact, BCG Foundation

কোন জিনিসগুলো শুরু করা যায় এমুহুর্তে? সরকারি অফিসে এনালগ রেকর্ড প্রসেসিং সমস্যা নয়। সমস্যা একটা প্রসেস তৈরি করা যেটা সামনে ডিজিটাল সার্ভিসকে সাপোর্ট করবে। এই এনালগ অবস্থায়। সেটা মাইগ্রেশন স্ট্রাটেজি। যেকোন সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান আছে, তবে, সেটা দেখতে হবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। যেমন, এখন ১২ টেবিলে সিগনেচার লাগলে ডিজিটাল সার্ভিসে মাইগ্রেশনের সময় সেটা কমে আসবে ৩ সিগনেচারে। সিগনেচারের জন্য সিগনেচার, নাকি কাজ ডেলিভারি আমাদের অগ্রাধিকার? তবে আমি বলতে পারি - এই ৩ সিগনেচারে সুরক্ষা বেশি হবে। এনালগ কাজে ডিজিটাল প্রসেসের যেই অন্তরীণ সময় সেটা ডিজাইন করা জরুরি। সামনে ডিজিটাল সিগনেচার বাধ্যতামূলক করা হলে বাকি জিনিস এমনিতেই উঠে যাবে। আমাদের নীতিমালা আছে, সেটার 'প্রয়োগ' নেই।

অনেক অফিসে ডিজিটাল সার্ভিস কাজ করেনি কারণ তাদের বিজনেস প্রসেস ছিলো সনাতন এনালগ। নীতি নির্ধারণীতে বসে থাকা মানুষজনের পুরো বিজনেস প্রসেসটাকে ডিজিটালাইজড করার জন্য সামগ্রিক যে ধারণা থাকা দরকার ছিল সেটার অভাবে চালু করা নতুন ডিজিটাল সার্ভিস শেষ পর্যন্ত কাজ করেনি। এবং এই ব্যর্থ হবার পুরো দোষটা গিয়ে পড়েছে ‘ডিজিটাল সার্ভিস’ এর উপর - সেটা ঠিকমতো কাজ করে না বলে। এখন অনেক মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে তবে ডিজিটাল রুলস অফ বিজনেস' আপডেট হওয়া প্রয়োজন।

দেরিতে হলেও এখন চালু হয়েছে গভর্নমেন্ট এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং, জিআরপি। প্রতিটা সরকারি অফিসে এই অ্যাপ্লিকেশন থেকে সরকারি সম্পদের খুঁটিনাটি হিসেব, বাজেট, অডিটিং এবং প্রতিটা প্রজেক্টের খরচের হিসেবের 'অপটিমাইজেশন' আসবে এক জায়গায়। নীতিনির্ধারকদের ড্যাসবোর্ডে। ম্যান্ডেট করতে হবে ই-নথি - ডিজিটাল সিগনেচার সহ, দেশব্যাপী। সরকার থেকে বিজনেস কমিউনিকেশনেও। এর উপকার 'মাল্টিপ্লাই' হবে যখন এর উপর বসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মানুষের সাহায্যে। জন্ম থেকে অবসর গ্রহনের শেষ পর্যন্ত। উন্নতদেশগুলোর সরকারি পোর্টালগুলো দেখলে সেটার একটা ভালো ধারণা আসবে।

'রেকর্ড কীপিং' কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দিয়ে কমপ্লেক্স সমস্যাতে ফোকাস দরকার রাষ্ট্রের

তবে বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এই ব্যাপারগুলোকে পাল্টে দিয়েছে অনেক আগেই। সেটা আমি দেখেছি অনেক দেশে। তাদের কাজের সুবিধার্থে। এই প্রযুক্তিগুলোর সাথে সরকারি সার্ভিস ডেলিভারি আরো অনেক দ্রুত গতিতে এবং আরো পরিশুদ্ধ করে ডাটাসেটাকে প্রসেস করা এত ভালভাবেই সম্ভব যে এই বেসিক কাজগুলো এই প্রযুক্তির ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকার আরো কমপ্লেক্স অর্থাৎ যেগুলো লম্বা সময় ধরে করতে হবে যেমন শিক্ষার আধুনিকরণ, সেটার উন্নত সংস্করণ এবং অনেক সামাজিক সমস্যা নিয়ে। প্রযুক্তির কাজ প্রযুক্তির উপর ছেড়ে দিয়ে মানবিক কাজগুলোর দিকে সরকার মনোনিবেশ করতে পারে আরও বেশি সময় ধরে। আমার অভিজ্ঞতা বলে সরকারি পর্যায়ে ‘রেকর্ড কীপিং’ যেখানে জনগণের তথ্য ঠিকমতো রাখা এবং সেটাকে রিয়েল টাইমে প্রসেস করে যাতে জনগণ সেই সুবিধা পেতে পারে কয়েকদিনেই। এই কাজ করতে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের সামনে আর কিছু নেই। আমরা সময় হারাচ্ছি প্রতিনিয়ত:।

সাধারণ ডকুমেন্ট ইস্যু, রিনিওয়াল, বিল পেমেন্ট সম্ভব এখনই

শুরুতে সরকারি সার্ভিস দেবার জন্য কিছু প্রসেস যেগুলো এখনও আমরা ম্যানুয়ালি করে থাকি যেমন বিদ্যুৎ, ফোন বিল জেনারেশন - বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সার্ভিসগুলোর পেমেন্ট প্রসেসিং, জনগনের ব্যাংক অথবা মোবাইল একাউন্টের সাথে ট্যাগ করে দেয়া, জনগণের প্রতিদিনের হাজারো প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিতে পারা (এসএমএস/ভয়েস কলে) সম্ভব কিছু সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন করলেই। এর পাশাপাশি সরকারি কোন সমস্যা কে দেখবে বিশেষ করে জনগনের অভিযোগগুলো ঠিকমতো ‘রাউটিং’ করে আসল সংস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব কিছুই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজ।

সরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট যেগুলোর ‘ইস্যু’ থেকে শুরু করে তার ‘রিনিউয়াল’ এবং যে সাধারণ জিনিসগুলোতে অফিস প্রধানের অথোরাইজেশন প্রয়োজন পড়ে না, সেগুলো খুব সহজেই করে ফেলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সামান্য গাড়ির ফিটনেস থেকে শুরু করে গাড়ির ট্যাক্স সার্টিফিকেট, টিন/বিন (ট্যাক্স) সার্টিফিকেট এসব কিছুই করা সম্ভব যদি এগুলোকে ঠিকমতো ‘প্রসেস জেনারেট’ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর ছেড়ে দেওয়া যায়। এতে মানুষের হস্তক্ষেপ না থাকায় কম জালিয়াতি অথবা দুর্নীতি ঘটবে দিন শেষে।

সরকারি নীতিমালার সাথে জনগণের মনোভাবের সম্পর্ক, নিরাপত্তা এবং ‘আরবান’ প্ল্যানিং

ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বিভিন্ন ধরনের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবহার করছে যাতে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর মতামত সেই নীতিমালায় বেশি মাত্রায় চলে না আসে। এটা একটা ‘ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট’ যাতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। সরকারগুলোর ভেতরের অনেক সংস্থা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে আসছে এক জায়গায়। একটা ইউনিফায়েড ড্যাসবোর্ডে। সরকারের ভেতরে। জনগনের মানসিক অবস্থা, বিশেষ করে 'সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস' সহ। সোশ্যাল মিডিয়ার মত বড় বড় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট (নিউজ সাইট) এর পাশাপাশি নিউজ মিডিয়া বিশেষ করে ইলেকট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সাথে জনগনের ‘ইন্টারঅ্যাকশন’গুলো একটা জায়গায় নিয়ে আসলে সরকারি নীতিমালার সাথে জনগণের মনোভাবের একটা স্পষ্ট সম্পর্ক বের করা যায়। প্রতিটা 'কেসের ইনস্ট্যান্স' ধরে। এটা থেকে ভালো ইনপুট পায় সরকারগুলো।

শহরের হৃদয়

Urban planning is a multi-faceted discipline in which planners collect data points from targeted areas to determine if a store, hospital or other types of buildings are likely needed in that area. It also involves determining if the needed infrastructure to support the building is there or needs to be added. The data provides context to planners and includes things such as geographic factors, socioeconomic statistics and human mobility.

-- Where Artificial Intelligence Meets Urban Planning, University of Central Florida

বর্তমানে যেহেতু প্রতিটা মানুষের হাতে একটা ‘ডিজিটাল সেন্সর’ অর্থাৎ মোবাইল ডিভাইস আছে - সে কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ‘অ্যানোনিমাইজ’ মানে কাউকে ট্র্যাকিং না করেই পুরো দেশের রাস্তাঘাটের ‘ট্রানজিট’ ট্রাফিক এনালাইসিস, কোথায় ট্রাফিক সিগন্যাল আটকে রাখছে মানুষকে বেশি, কোন রাস্তা বন্ধ থাকছে কখন, রাস্তার 'রি-রাউটিং' তথ্য, ওই রাস্তার লাইন ধরে ক্রাইম প্যাটার্ন, প্রতিটি ট্রাফিক লাইটের সিগনালের টাইমিং এবং প্রতিটা রাস্তা/বাড়িঘরের অবস্থানের নিরিখে স্থানীয়ভাবে 'নিরাপত্তা' বলয় এবং ‘আরবান’ প্ল্যানিং (রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, জলাশয়, টার্নপাইক ইত্যাদি) করা যায় খুব সহজেই। এধরনের প্রচুর পাবলিক ডাটা পাওয়া যায় উন্নতদেশগুলোর স্থানীয় সরকারগুলোর সাইটে। একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় ভেতরে ভেতরে।

সামনে আসছে বিশালাকার বেসরকারিকরণ, দক্ষতার কারণে

দক্ষতা এবং সেবা

Evidence from low- and middle-income countries suggests private provision is more efficient than public provision. ... Greater private sector efficiency is attributed to the ability to set lower pay and to recruitment autonomy, as well as the market-like competitive conditions in which they operate.

-- Is the Private Sector more Efficient? - UNDP

আমি সরকারি কর্মকর্তা হলেও প্রাইভেট সেক্টর শিখিয়েছে অনেক কিছু। হাতে ধরে। আমার বন্ধুদের অনেকেই এখন উদ্যোক্তা। প্রাইভেট সেক্টরের অপটিমাইজেশন নিয়ে আলাপ করেছি বহুবার। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট অরবিটে বসানোর জন্য প্রাইভেট অপারেটর ‘স্পেস-এক্স’এর পেছনে গল্পটা জানলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে বেশি। এই মহামারীর সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রাইভেট সেক্টর কিভাবে তাদের ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে আস্তে আস্তে মুনাফা বাড়াচ্ছে সেটা নিয়ে আমি আরেকটা চ্যাপ্টারে বলেছি। উদ্ভাবনার অভাবেই অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে এই মহামারীর মধ্যে পড়ে। সরকারগুলো খরচ কমাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এই সময়টাতে।

বিশেষ করে, এই সময়ে যেখানে কাজের অপটিমাইজেশন করতে গিয়ে সাধারণ এবং সনাতন সফটওয়্যারগুলো ডেলিভারি করতে পারছে না ঠিকমতো - সেখানে অনেক উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে এমন কিছু দেখাচ্ছে যেটা আগে অনেকে চিন্তাই করতে পারেনি। একটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে কিভাবে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, জুম, নেটফ্লিক্স, ইউটিউব বা অন্যান্য কোম্পানিগুলো এখনো প্রচুর আয় করে চলেছে যেখানে সরকারগুলো বুঝতে পারছে না কিভাবে তাদের নাকের ডগা দিয়ে এত মুনাফা চলে যাচ্ছে তাদের কাছে?

একটাই ‘সিক্রেট সস’, প্রতিটা ব্যবহারকারীকে ঠিকভাবে শনাক্ত করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী দরকারি প্রডাক্ট অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর মাধ্যমে পৌছে দিয়ে সেই পণ্যের কোম্পানিগুলো থেকে টাকা বের করে নিচ্ছে এই উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলো। আবারও বলছি, তারা প্রতিটা মানুষকে ঠিকমতো সনাক্ত করেই সার্ভিস দিচ্ছে। কীওয়ার্ড, ব্যবহারকারীদের সনাক্তকরণ। এবং তাদের পছন্দ অপছন্দ সবকিছুই জানে তারা। এর পেছনে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মজার কথা হচ্ছে এই ‘সিক্রেট সস’ ব্যবহার করে শিক্ষা এবং সরকারি অনেক সার্ভিস ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব মডেলটাকে কিছুটা ‘টুইকিং’ করে।

সেই ‘সিক্রেট সস’ থেকে সরকারগুলো তাদের প্রতিটা জনগণের সরকারি সার্ভিস ডেলিভারিতে কি কি দেওয়া দরকার বা এই মুহূর্তে কি কি জিনিস জনগণ চাচ্ছে বা সামনে কোন কোন জিনিস জনগণ চাইতে পারে সে ধরনের সার্ভিস প্রেডিকশন করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ধারণা নিতে পারছে না অনেক দেশের সরকারই। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত এ ধরনের উদ্ভাবনী ধারণা নিয়েও সরকারগুলো তাদের জনগণের বিভিন্ন চাহিদা সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারছে না। সামনে তাদের জনগণ তাদের কাছ থেকে কি কি সার্ভিস চাইতে পারে সেটা প্রেডিকশন শুরু করেনি অনেক সরকার।

সরকারের কাজে ‘অপটিমাইজেশন’, - কাজের পরিধি ছোট করে দিয়ে আসা

ছোট তবে দক্ষ সরকার

The federal government will also introduce a Contestability Framework, which will assess whether government functions should be open to competition and will likely see far more functions provided by non-government organisations.

-- What skills does a ‘smaller’ government need? The Conversation

পুরো পৃথিবীর বর্তমান ট্রেন্ড হচ্ছে কিভাবে সরকারকে ছোট করে নিয়ে আসা যায়। এতে সরকারের কাজগুলো অনেকটাই ‘অপটিমাইজ’ করে খরচ কমিয়ে আনা যায়। যেহেতু, সরকারগুলোতে সঠিক জনবলের অভাবে দক্ষতার মান বেসরকারি কোম্পানিগুলো থেকে বেশ কম, সে কারণে পৃথিবীব্যাপী ব্যবসায়িক ধারণাগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বেসরকারি সেক্টরে। সরকার নিজস্ব বিমান ক্যারিয়ার, রেলওয়ে অথবা টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোকে নিজে থেকে চালাতে গেলে সেখানে লাভের সম্ভাবনা কম দেখা দেয়। সরকারের দক্ষতা হচ্ছে নীতিমালা তৈরিতে। এবং সেই নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কোম্পানিগুলো যাতে জনগণের স্বার্থহানি না ঘটায় সেটার জন্য প্রতিটা সেক্টরের জন্য আলাদা করে নিয়ন্ত্রক কমিশন তো থাকছেই।

সরকারি দক্ষতা আসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে

একটা উদাহরণ দেয়া যাক। আমাদের বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালে। সেটা জানে সরকার কাজী অফিস থেকে। বিয়ের পর থেকে আমাদের বাড়তি চাহিদার ব্যাপারগুলো প্রেডিক্ট করবে সরকার। যেমন, আমাদের এখন দরকার আগের থেকে একটু বড় বাড়ি। সরকারি বাসস্থান এজেন্সী যোগাযোগ করবেন আমাদের সাথে, আমাদের আয় ধরে। কিছুটা 'পুশ-সেল' এর মতো, তবে মানবিক ভাবে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সার্ভিসগুলো দেবার জন্য যোগাযোগ করবে নির্দিস্ট এজেন্সী। আমার ধারণা, এগুলো বেসরকারিকরণ হয়ে যাবে এর মধ্যে। দক্ষতার কারণে।

আমি আশা করছি না মানুষ কল করবে, বরং সিস্টেম থেকে জিনিসগুলো এক্টিভেট করবে আমার ব্যাংক একাউন্ট ধরে, আমাকে জানিয়ে। আমাদের বাচ্চা হবার আগে যোগাযোগ করবে হাসপাতাল, ইউনিভার্সাল হেলথকেয়ার স্কিমের আওতায়। বাচ্চা হবার পর কবে এবং কোন স্কুলে যাবে সেটা ঠিক করে দেবে স্থানীয় দপ্তর। সরকারি এই যোগাযোগ হচ্ছে ব্যাকএন্ডের ডাটা এবং প্রেডিকশন থেকে, ডাটার 'প্রাইভেসী' বজায় রেখে। যেভাবে আজকে কাজ করছে গুগল, ফেইসবুক, নেটফ্লিক্স, আমাজন। আমার চাওয়ার আগেই বলে দিচ্ছে আমার পছন্দ। হয়তোবা ছোট স্কেলে। তবে, তারা ভয় দেখাতে চাইছে না আমাদের, কতোটুকু বেশি জানে আমাদেরকে। সেটা আরেক গল্প।

সিস্টেম লস, বাহুল্য খরচ, কম খরচে বাজেট প্রনয়ন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সরকারগুলো কি করছে দেশে দেশে? আমার রিসার্চ বলে বিশেষ করে একটা দেশের বাজেট প্রণয়ন এবং তার খরচ কোথায় বেড়ে যাচ্ছে তা আগে থেকে কমিয়ে আনা, বিশেষ করে খরচের ফোরকাস্টিং এবং তা কেন খরচ বাড়ছে তার ধারণা আগে থেকে পাওয়া এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা বড় ধাপ। বলতে হয় একটা বিশাল ধাপ যে প্রতিবছর প্রজেক্টের খরচ বাড়ার আগেই সেটাকে ঠিক জায়গায় নামিয়ে আনছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ধরুন, দেশব্যাপী জ্বালানি প্রোডাকশন এর সাথে জ্বালানির ডিস্ট্রিবিউশন - বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ডিস্ট্রিবিউশনে কোথায় কোথায় সিস্টেম লস হচ্ছে, সেগুলোকে কমিয়ে আনতে ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমি নিজে দেখেছি বেশকিছু দেশের ড্যাশবোর্ডে। সরকারি প্রজেক্ট এ কোথায় কোথায় জালিয়াতি হচ্ছে এবং তার সাথে বাহুল্য খরচ সেটাও বের করতে পারছে এই জিনিস। ব্যাপারটা সেরকম কঠিন নয়।

ডাটা ছাড়া ভুল সিদ্ধান্ত

যেকোনো দেশের সরকারের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তগুলোতে শুধুমাত্র টাকার শ্রাদ্ধ হয়না বরং এর পেছনে অনেকগুলো বছর হারিয়ে যায়। জনগণ যে প্রজেক্ট থেকে ১০ বছর আগেই যে সুবিধা পেত সেটা পেছাতে থাকে। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শুধুমাত্র টাকার ক্ষতির পাশাপাশি একটা জেনারেশন সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সুবিধা ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ধরুন, একটা শহরের পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেম।

অনেক সময় আমাদের নীতিমালাগুলোতে ঠিকমতো ‘অ্যাকশন পয়েন্ট’ না থাকার কারণে সেগুলো কতগুলো নিস্পৃহ পাতায় পর্যবসিত হয়। সে দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন করে ‘এভিডেন্স বেইজড’ নীতিমালা করাতে এর জন্য ‘ইউজ কেইস’ অর্থাৎ সম্পর্কিত ঘটনামালা প্রতিটা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাটা থেকে ধারণা নিয়েই একটা অটোমেটেড ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে আসলে প্রতিটা কাজের খরচ এবং একাউন্টিবিলিটি সব হিসেবের মধ্যে চলে আসে। এটা চলছে অনেকগুলো দেশে। মানুষের পক্ষে এব্যাপারগুলো মাথায় নেয়া সম্ভব নয়।

কমপ্লেক্স জিনিস ছেড়ে দেয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মতো কিছু এক্সপার্ট সিস্টেমে

উন্নত দেশগুলো বহু বছর ধরে তাদের কমপ্লেক্স প্রজেটগুলোকে বেশকিছু অটোমেটেড সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করালেও এখন সেটা ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মত কিছু এক্সপার্ট সিস্টেম এর হাতে যা একজন মানুষের ধারণার স্কোপ এর বাহিরে। এটা মেনে নিতে হবে। বিশাল বিশাল কমপ্লেক্স সিস্টেম চালানো যাবে না মানুষকে দিয়ে। এর পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে যেভাবে ইনভেস্টমেন্টের ফলাফল পাচ্ছে সেটা এই মহামারী সময়ও তাদেরকে কোনভাবেই বিপদে ফেলছে না। এর পেছনে আছে তাদের অসাধারণ উদ্ভাবনা এবং কিভাবে দুঃসময়ে তাদের কাজগুলোকে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে খরচ কমিয়ে প্রোডাকশন বাড়ানো যায়।

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ, ডাটা এবং ইনসাইট

একসাথে কাজ নামিয়ে দেয়া

Infrastructure is difficult for the public sector to get right,” notes the World Bank. “Public-private partnerships can help; they can provide more efficient procurement, focus on consumer satisfaction and life cycle maintenance, and provide new sources of investment.

-- How Do You Build Effective Public-Private Partnerships? Yale Insights

এখানে কী দরকার? পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ। এই নিয়ে সামনে একটা বড় চ্যাপ্টার লিখেছি। কারণ, সরকারের কাছে আছে জনগণের সব ডাটা এবং প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর কাছে আছে দক্ষতা এবং অপটিমাইজেশনের ভালো ধারণা। তাহলে কেন সরকার এবং উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলো একসাথে উত্তরণ করতে পারছে না? সমস্যাটা কোথায়? আমার ধারণা বিশ্বাস। আমাদের মতো দেশগুলোতে সরকার এবং বেসরকারি কোম্পানি গুলোর মধ্যে আস্থার অভাব থাকায় এই পার্টনারশিপ ঠিকমতো কাজ করেনি আগে।

তবে এই অবস্থান থেকে সরে আসছে আমাদের মতো সরকারগুলো। এখন সরকারের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার প্রজেক্ট ‘জিআরপি’ অর্থাৎ ‘গভর্মেন্ট এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং’ বানাচ্ছে ১২টা কোম্পানি সরকারের সাথে। এদিকে আমার রিসার্চ বলে বেশ কয়েকটা দেশ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির পাইপলাইনকে এমনভাবে ‘স্ট্রিমলাইন’ করে নিয়েছেন যার মাধ্যমে কম খরচে সার্ভিসগুলোকে নিয়ে যেতে পারছেন জনগণের দোরগোড়ায়। বাকিরা যারা এখনো এই ধারণাতে ‘অ্যাডাপ্ট’ করতে পারেননি, এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের পাইপলাইনটাকে এখনো ঠিকমতো যুক্ত করতে পারেননি তাদের কাজের ধারায়, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো থেকে পিছিয়ে আছেন।

মহামারী, শাপে বর

নতুন প্রজ্ঞা

The CORD-19 data set is inadvertently proving to be a super-interesting pragmatic test for AI-based literature analysis.

-- Anthony Goldbloom, Kaggle

এটা ঠিক যে সরকারি কর্মকর্তারা কাজে ভুল অথবা সিদ্ধান্ত ভুল হবার ভয়ে অনেক সময় এ ধরনের বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট ধারণা নিতে ভয় পান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপ, যেখানে বাহুল্য খরচ হবার ভয়ে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র মতো নতুন ধরনের উদ্ভাবনা সরকারে যোগ করার ইচ্ছে কম থাকে। তবে বর্তমানে এই মহামারীর সময় এই প্রযুক্তির ব্যাপারটা শাপে বর হয়ে এসেছে। প্রতিটা সরকার এখন তাদের ‘লিমিটেড’ বাজেট সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর সময় সরকারের বাজেট যাতে সমাজের দুস্থ মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায় সে কারণে অনেক দেশ ব্যাপারটি ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর।

এদিকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে মহামারীর সময় আমরা প্রচুর ডাটা ব্যবহার করেছি যা মহামারী ঠেকানোর ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। শুরুতে ব্যাপারটা সেভাবে বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করা এবং তাদের সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদেরকে সেভাবে আলাদা করে ফেলা এই পুরো ব্যাপারটাই অনেক দেশেই ঘটেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। আমরাও চেষ্টা করেছি শুরুর দিকে। সেই এয়ারপোর্ট থেকে।

দেশগুলো তৈরি করেছে নতুন নীতিমালা, মহামারীকে ঘিরে

আমার কাজের শতভাগ যেহেতু প্রযুক্তিকে ঘিরে সে কারণে এই মহামারীর সময় অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং মানুষের অসহায় সময়গুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার না করে উপায় ছিলনা। অনেক দেশ এই সুযোগে প্রযুক্তির কিছু নীতিনির্ধারণী গাইডলাইন তৈরি করে ফেলেছে জনগণকে সুবিধার জন্য। আমাদের মতো দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট সুবিধা ব্যবহার করে অনেকটুকুই সুবিধা পাওয়া গেছে। তবে এই সুযোগে বেশ কয়েকটা দেশ তাদের নীতিমালাতে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যা মহামারীর আগে করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

এ ব্যাপারে তারা জনগণের পুরো ম্যান্ডেট নিয়ে ইলেকট্রনিক সিগনেচার থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য অনলাইন ট্রানজেকশন ধরনের আইন পাস করিয়ে নিয়েছে। এই করোনাভাইরাস এর সময় দুঃস্থ মানুষদের ঠিকমতো সনাক্তকরণ এবং তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো একটা সমস্যা ছিল বটে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মত আরো কিছু টুল ব্যবহার করে অনেকটাই সম্ভব করা গেছে আসল দুঃস্থ মানুষদের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে। এরপরে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার এবং তার পাশাপাশি কিছু ডিজিটাল প্রসেস ডেভলপ করে এক ধরনের ট্রানসফর্মেশন নিয়ে আসা গেছে যা এই মহামারী না হলে করা যেত না।

স্বাস্থ্যখাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাফল্য, অনেক দেশেই ব্যবহার শুরু হয়েছে

যন্ত্রের মানবিকতা

AI is getting increasingly sophisticated at doing what humans do, but more efficiently, more quickly and at a lower cost. The potential for both AI and robotics in healthcare is vast. Just like in our every-day lives, AI and robotics are increasingly a part of our healthcare eco-system.

-- No longer science fiction, AI and robotics are transforming healthcare, PwC network

স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ করে - আমাদের এই মহামারীর সময় ভেন্টিলেটর এবং বেশকিছু যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জনসম্পদ না থাকাতে হাসপাতালগুলোতে ঠিকমতো সেবা দেয়া যায়নি। সেদিক থেকে চিন্তা করে যুক্তরাজ্য ধীরে ধীরে তাদের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় সেগুলোকে একটা প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসছে যাতে সেখানে জনবলের অভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যায়। এর পাশাপাশি জাপান সরকারও বিনিয়োগ করছে কিভাবে দশটা ‘স্মার্ট’ হাসপাতাল বানানো যায় যেখানে তাদের যথেষ্ট পরিমাণ স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত পেশাদার জনবল নেই। এধরনের হাসপাতালগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, বিশেষ করে বিভিন্ন মেডিকেল টেস্টগুলোর ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট তৈরির পাশাপাশি ঠিক সেবা দেয়া যায়।

আচরণগত বিজ্ঞান অর্থাৎ বিহেভিয়ারাল সাইন্স দিয়ে ভালো মতবাদ প্রচার

করতে পারা

Knowing what must be done does away with fear.

--Rosa Parks

অর্থনীতিতে ‘নাজ তত্ত্ব’ অর্থাৎ ‘সামান্য ধাক্কা’ দিয়ে একটা ভালো কাজ করার ধারণা নিয়ে আসতে পারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেটার ব্যাপারে ভালো ধারণা থাকলে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবার সময় একজন জনগণকে সাহায্য করতে পারে যাতে তারই সুবিধা হয়। এটা এক ধরনের অর্থনীতি, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক আচরণ বিশ্লেষণ করে ‘মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়’ তার কিছু ধারণা নিয়ে কাজ করে এখানে। সরকার যখন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তাদের খাবারের সাথে ক্যালরির পরিমাণ বলে দেওয়ার জন্য নীতিমালা করে তখন জনগণ ক্যালরির মাপগুলো দেখে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার সরাসরি বাধ্য না করলেও তথ্য দিয়ে তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সাহায্য করলেন।

আমি অবশ্যই আয়কর দিতে চাইবো যখন আমার অফিসের বাকি সবাই আয়কর দেয়। প্রশাসন যদি আমাকে একটা মেসেজ/চিঠি দেয়: “আপনার এলাকার ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই আয়কর পরিশোধ করেছেন”। তাহলে আপনি নিজেও আয়কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবেন। আমাদের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর জন্য ‘মিউনিসিপালটি’ নতুন সবজি এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য তীর চিহ্ন বাধ্যতামূলক করে দেয়, তাহলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢোকার সময়ে সেই তীর চিহ্ন দেখে সবজি কেনার একটা আগ্রহ তৈরি হতে পারে। অনলাইন আয়করে ৩ শতাংশ ছাড় দিলে সবাই অনলাইনে আয়কর দেওয়ার জন্য উৎসাহী হবে। অনেক দেশের প্রশাসন এখন 'নাজ' ইউনিট তৈরি করেছে জনগনের সমস্যাগুলো বুঝে আগেভাগে সমাধান দেবার জন্য।

মানুষের মনস্তাত্ত্বিক আচরণ বিশ্লেষণ করে অনেক কিছু করা সম্ভব। সবাইকে ভালো কিছু করার জন্য। বেসরকারী সেক্টরে এগুলো চলে আসছে অনেকদিন থেকে। অনেক সময় রেষ্টুরেন্টগুলো ইচ্ছে করেই একটা আইটেমের সর্বোচ্চ দাম দিয়ে রাখে যাতে আমরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইটেমটা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করি। সেই রেস্টুরেন্টও জানে - আমরা সর্বোচ্চ মূল্যের আইটেমটা কিনবো না বরং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইটেমটা কিনে আমরা খুশি থাকব ‘জিতেছি’ ভেবে।

‘নাজ তত্ত্ব’, ডাটা, এবং বেসরকারী খাতের পেনশন নীতি

যুক্তরাজ্যের সরকারের পেনশন নীতির ব্যাপারে একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।

বেসরকারী খাতের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে কম পেনশন স্কিম নেবার কারণে ২০১২ সালে নিয়োগকারীদের একটি "স্বয়ংক্রিয় তালিকাভুক্তি" স্কিম স্থাপনে বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। এর অর্থ হচ্ছে বেসরকারী খাতের কর্মী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোম্পানির পেনশন স্কিমে চলে যাবেন। কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ না করলে তার বেতন থেকে একটা শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। "স্বয়ংক্রিয় তালিকাভুক্তি"কে আমরা আগে থেকেই 'অপ্ট-ইন' এর মতো, আপনি বললে, তারা আর কাটবে না।

সরকার এই ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করেছেন 'বিহেভিয়ারাল সাইন্স' দিয়ে। সাধারণত: কেউ চান না তার বেতন থেকে কিছু টাকা কেটে রাখা হবে - ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই প্রজন্মের মানুষ বর্তমান নিয়েই বিশ্বাসী। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে দেখা যাবে ভেবে এগুলো করি আমরা। এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ নতুন করে 'সিদ্ধান্ত নেবার' ঝামেলায় যেতে চান না। যখন পুরো ব্যাপারটাকে 'ডিফল্ট' অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনরোলমেন্ট হয়ে থাকল, তখন মানুষ খুব একটা আপত্তি করেননি। কারণ সে চাইলেই বন্ধ করতে পারবে যেকোন সময়ে। ফলে, সরকার সত্যিকার অর্থে ভালোর জন্য যা করতে চেয়েছিল, সেই সঞ্চয়ী স্কিম এমনিতেই হতে থাকলো।

সরকার এই গণমুখী সিদ্ধান্তটা কিভাবে নিতে পারলেন? আগের ডাটা থেকে। আমি নিজে যেহেতু প্রচুর ডাটা দেখেছি, সেকারণে ডাটা থেকে সামনে কী কী কাজ আসতে পারে সেটার বেশ ভালো ধারণা চলে আসে। ডাটাকে বুঝতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনায়।

বিহেভিয়ারাল ইনসাইট দিয়ে সড়ক দুর্ঘনায় কমিয়ে আনা

যুক্তরাজ্যে আচরণগত বিজ্ঞান অর্থাৎ বিহেভিয়ারাল সাইন্স টিম একটা অ্যালগরিদম তৈরি করেছে যা প্রেডিক্ট করতে পারে কোন ড্রাইভারগুলো ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাবে। আধুনিক ধারণা আসে যখন তারা একটা সম্পর্ক বের করতে পারে যেসব ড্রাইভারগুলো নিজ নিজ এলাকায় অনেক গতিতে গাড়ি চালায়। তারা ডাটার এই কো-রিলেশন দেখাতে সমর্থ হয় - কিভাবে এই নিজ এলাকায় ছোট ছোট দ্রুতগতিতে চালানোর ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আর তাই, এই টিম আস্তে আস্তে যেসব ড্রাইভার এ মুহূর্তে ছোট ছোট দুর্ঘটনায় রাস্তায় সবার জন্য বিপদ ডেকে আনছে - সেসব 'ছোট ছোট দ্রুতগতি'র এই ড্রাইভারগুলোকে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনা ঘটানোর আগেই আলাদা করে ফেলছে। তাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছে, কিভাবে তারা সামনে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাদের এই কাজ এখন প্রায় ২০% এর মতো বড় দুর্ঘটনাগুলোকে কমিয়ে এনেছে।


  1. ‘বোস্টন কন্সালটিং গ্রুপ’ থেকে কিছু ধারনা নিয়েছি এই লেখাতে। বাংলাদেশের জন্য যতটুকু ‘লোকালাইজেশন’ দরকার সেটা যোগ করা হয়েছে এখানে। ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিংয়ের দিক থেকে তারা সেরাদের কয়েকজন।