কনটেন্টে যান

সনাক্তকরণ পদ্ধতি/আইডেন্টিফিকেশন

নতুন এবং পুরানো আইডিয়া

I can't understand why people are frightened of new ideas. I'm frightened of the old ones.

-- John Cage

কোভিড-১৯: শাপে বর

আমার স্ত্রী কাজ করেন প্রাইভেট সেক্টরে। প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করার সুবাদে কোভিড-১৯ সময়কালীন কাজে অফিস ভিপিএন ব্যবহার করে পৃথিবীব্যাপী সব ধরনের কমিউনিকেশন খুব একটা সমস্যা ছিল না তাদের। সমস্যা একটাই, যখন তাদেরকে রেগুলাটরি বডির সাথে যোগাযোগ করতে হয় - সেটা এখনো করতে হয় চিঠির মাধ্যমে, হার্ডকপি দিয়ে। পাশাপাশি, সেই সাইন দিয়ে যেটা জাল করা খুব একটা সমস্যা নয়। ফলে, হার্ডকপি সাইন করতে অফিসে যাওয়া এবং অফিস থেকে সরকারি অফিসের ডাক রুমে পৌঁছানো একটা দরকারি কাজ।

আমরা যেখানে ইলেক্ট্রনিক্যালি নিজেদের 'আইডেন্টিটি' প্রমাণ করে ডকুমেন্ট এবং টাকা-পয়সার পাঠিয়ে দিচ্ছি দেশ থেকে দেশান্তরে, সেখানে এই সামান্য সরকারি অনলাইন আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা 'এনফোর্সড' না থাকার ফলে আমরা পিছিয়ে পড়ে আছি এই দশকে। উইন্ডোজ এর সাধারন 'অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি' সার্ভিস এ ধরনের সলিউশন দিয়ে আসছে গত ২০ বছর ধরে। নীতি নির্ধারণী (আমি নিজেও একজন) মানুষজনকে ব্যাপারটা বললে একটা ব্যাপার উনারা বলে থাকেন প্রায়ই, অনলাইনে 'আমি যে আমি' অথবা 'আপনি যে আপনি' সেটার প্রমাণ দেবে কে?

প্রশ্ন 'ভ্যালিড' তবে অনলাইনে 'আমি যে আমি' সেটাকে প্রমাণ করার জন্য বেসিক লেভেলে যে মেকানিজমগুলো আছে সেগুলো দিয়েই বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে প্রাইভেট সেক্টর, সেখানে সরকারি এজেন্সিগুলোর সমস্যা কোথায়? কিছুদিন পর যখন ফেইসবুক সবার প্রোফাইল অথবা পেজ ঠিকমতো অথেন্টিকেট করে 'ব্লু রিবন' মানে 'ভেরিফাইড' করে দেবে তখনও কী আমরা প্রশ্ন করতে থাকবো? নাকি নিজেদের একটা অনলাইন আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের জন্য এক পাতার একটা নীতিমালা তৈরি করবো? আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, শুধু দরকার একটা 'কানেক্টেড' নীতিমালা।

একটা একীভূত ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’, ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সবাইকে একটা ভিত্তি দেয়া

Unique identification is a crucial element in the design of economic and social policies. This value is due to its multiple implications in human development, particularly in the areas of poverty reduction, education, health, and governance.

-- Thales Group

এটা ঠিক যে আমাদের জীবনে প্রচুর উদ্ভাবনা সার্ভিস চলে আসছে, তবে এর সাথে নতুন নতুন এই উদ্ভাবনাগুলো কিছু কিছু সময়ের জন্য আমাদের জীবনকে জটিল করে দিচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন অসামাঞ্জস্যগুলোকে কমানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার এদিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনা নিয়ে আসছেন যাতে জনগণকে ঠিকমতো সার্ভিস দেয়া যায়। বিশেষ করে জনগণের দোরগোড়ায় সার্ভিস পৌঁছাতে গেলে সবচেয়ে প্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে জনগণের একটি সঠিক পরিচয় নিবন্ধন সার্ভিস অর্থাৎ ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। জনগণ সঠিকভাবে সরকারি অথবা বেসরকারি সার্ভিসগুলো ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা এর পাশাপাশি তার নিরাপত্তা, তার নিজস্ব তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা সরকারের একটা বড় দায়িত্ব। এই সবকিছুই করা হচ্ছে যাতে সরকারি এবং বেসরকারি সার্ভিস প্রসেসগুলোকে একীভূত করে যতটা সহজ করা যায়। জনগনকে ঠিকমতো সনাক্ত করা না গেলে উনারা ঠিকমতো সার্ভিস পাচ্ছেন কিনা সেটা বের করা দুস্কর।

যেকোনো দেশের জন্য একটি ‘একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি অর্থাৎ ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সলিউশন’ নিয়ে কাজ করতে গেলে এই মুহূর্তে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ছাড়া সামনে কিছু টিকবে বলে মনে হয়না। যেহেতু, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ‘ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার’ পদ্ধতি আকারে চলে - সে কারণে বাংলাদেশ পাঁচটা ডাটাসেট থেকে তথ্য এক জায়গায় নিয়ে এসে একীভূত প্রক্রিয়ায় ফ্রন্ট-এন্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং পেছনে ব্লকচেইন ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই মুহূর্তে এ ধরনের একটা বিকেন্দ্রীকরণ ‘আইডেন্টিটি মানেজমেন্ট সলিউশন’ চলছে সুইজারল্যান্ডের জুগ শহরে। এর কাজ শুরু হয় ইনস্টিটিউট অফ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এর জায়গায় - যা লুসার্ন ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত, এর সাথে আরো কয়েকটা সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর কোম্পানি যুক্ত হয়েছে শুরুতে একটা ভোটিং প্ল্যাটফ্রম তৈরি করার জন্য। গত ২০১৭ সালে তারা একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করেছে নাগরিকদের ডিজিটাল আইডেন্টিটি রেজিস্টার করার জন্য - এই ইথেরিয়াম ব্লক চেইন দিয়ে। কাজ করে দেখা যাচ্ছে যে সেই সনাক্তকরণ পদ্ধতি অর্থাৎ আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রাখা যায় ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোনে। এখন এই পদ্ধতিতে ভোটিং ছাড়াও আরো অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি সার্ভিস নেবার কথা হচ্ছে। একটা প্ল্যাটফর্ম, তবে এর ব্যবহার হবে অনেক কাজে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে এর সম্পর্ক কী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ঠিকমতো কাজ করতে হলে শুরুতে দরকার ডাটা। সরকার যাকে সার্ভিস দিতে চাইছেন তার সনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং উনি কী ধরনের সার্ভিস এ পর্যন্ত নিয়েছেন অথবা কী কী সার্ভিস সামনে চাইতে পারেন সেটার একটা প্রেডিকশন ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে তুলবে। আজকে ‘অ্যাডটেক’ অর্থাৎ ‘অ্যাডভার্টাইজমেন্ট টেকনোলজি’ যেভাবে প্রতিটা মানুষকে ঠিকমতো সনাক্ত করেই যার যা প্রয়োজন সেটা জেনে তার জন্য প্রযোজ্য প্রোডাক্ট অফার করে।

সে হিসেবে আপনি জমি ক্রয় করার পর তার জন্য পরবর্তী নামজারী করার জন্য কী কী প্রয়োজন সেটার জন্য সরকার (হতে পারে আমাদের ভূমি অধিদপ্তর) আগে থেকেই যোগাযোগ করতে পারে। এই মহামারীর সময় সরকার দুস্থদের পাশে দাড়াতে চাচ্ছেন, তাদেরকে (প্রকৃত দুস্থ) ঠিকমতো সনাক্ত এবং কারা এই স্কিমের জন্য প্রযোজ্য হবেন সেটা বের করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমাদের একটা সুন্দর স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম দাড়িয়ে গেলে কার কখন কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দরকার সেটাও আগে থেকে প্রেডিক্ট করে জানাতে পারবে আমাদের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমাদের বাচ্চাদের পরীক্ষার পর কোথায় ভর্তি হতে পারে, সেটা আগে থেকেই ধারণা দিতে পারবে এই সিস্টেম। ভালো ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করে এই ট্র্যাকিং নিয়ে কথা বলছি সামনে।

সেটার জন্য শুরুতে প্রয়োজন একটি সঠিক পরিচয় নিবন্ধন সার্ভিস।

কেন এধরনের ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ দরকার?

ইনক্লুশন

Having an identity in society is a proxy for inclusion.

-- Joseph Atick, Executive Chairman of ID4Africa

আমাদের মতো দেশে যেখানে জনসংখ্যা ভারসাম্য অন্যান্য অনেক দেশ থেকে বেশি বলে সেখানে প্রতিটা সরকারি সার্ভিসের লেভেল ঠিকমতো মনিটর এবং জনগণের নিরাপত্তা দেবার জন্য এ ধরনের একটি আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সরকারের সুদূরপ্রসারি কাজের আউটকাম হিসেবে দাড়িয়েছে। এটা অটোমেশনের প্রথম ধাপ। আমাদের মতো এই বিশাল জনগণের দেশে এধরনের একটি সিস্টেম সবকিছুকে সহজ হিসেবে নিয়ে আসতে পারে।

এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মত ‘স্মার্ট সিটি’ কনসেপ্ট বাংলাদেশে চলে আসছে ফলে এখানে এমন একটা প্রযুক্তিগত ইন্ট্রিগেশন দরকার প্রতিটা সার্ভিসের সাথে সাথে যাতে ‘বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ যোগাযোগ করতে পারে ‘ফায়ার সার্ভিস’ অথবা পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার সাথে। সেখানেও ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট’ একটা বড় অংশ হিসেবে কাজ করবে সামনে।

সঠিক পরিচয়পত্র এবং আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম না থাকলে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং সরকার থেকে বিভিন্ন পরিষেবা পান না ঠিকমতো। সরকারি বিভিন্ন সার্ভিস এবং তাদের সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলোতে এই আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকার ফলে জনগণ তার সঠিক প্রাপ্যতা বুঝে নিতে পারেন।

একটি একক এবং ‘ইউনিফাইড সিস্টেম’

পাবলিক এবং প্রাইভেট ক্রেডিনশিয়াল

The scope of IdM strategies always encompasses public sector online services. Some countries favour a ―universal approach, i.e. encompassing public/private sector use of credentials to support the broader Internet economy. Others plan to extend the use of public sector digital credentials to the private sector – or digital credentials‘ framework. Most countries recognise the leadership role of the government for the generalisation of better digital identity management in the Internet economy. Government single sign-on services are only available or anticipated for public sector services, except in two countries where it also includes (or will include) private sector services.

-- National Strategies and Policies for Digital Identity Management in OECD Countries, OECD 177

শুরুতে এই ধরনের পরিচয়পত্র একটা ছবি এবং নাম সম্বলিত থাকলেও পরবর্তীতে এই জিনিসটির পেছনে একটা বড় সিস্টেম দাঁড়িয়ে যেতে পারে যেখানে প্রতিটা জনগণের বায়োমেট্রিক এবং আচরনগত ডাটা (স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তি ইত্যাদি) সংরক্ষণ করা হতে পারে। এই একই পরিচয়পত্র ধীরে ধীরে সরকারের অন্যান্য যে কোন সার্ভিসের ক্ষেত্রে একটি একক এবং ‘ইউনিফাইড সিস্টেম’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

শুরুতে এটা একটা ‘নিরীহ’ ভোটার আইডি কার্ড হিসেবে বিবেচ্য হলেও পরবর্তীতে এই একই পরিচয়পত্র - হেলথ কার্ড, বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক সার্ভিস নেবার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকের একাউন্ট খোলার কে.ওয়াই.সি (নো ইউর কাস্টমার), জন্ম নিবন্ধন মানে বার্থ রেজিস্ট্রেশন, সি আর ভি এস, অর্থাৎ সিভিল রেজিস্ট্রেশন এন্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স নিবন্ধন, ট্যাক্স এবং বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এ ধরনের অনেক সার্ভিসে একক নিবন্ধন সার্ভিস ইন্ট্রিগেশন করা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।

এর পাশাপাশি একটি দেশের ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ, পপুলেশন রেজিস্ট্রি, জন্ম নিবন্ধন একীভূত করার ক্ষেত্রে এই ধরনের একটি আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অসাধারণভাবে কাজ করে। আমাদের মতো দেশে যেখানে প্রতিটা অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্যাংকের এক্সেস কম হওয়ায় সেখানে এধরনের একটা ইউনিভার্সেল পরিচয় নিবন্ধন সিস্টেম শুরুতে অনলাইন ব্যাংকিং হিসেবে কাজ করতে পারে। সেখানে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমকে এর সাথে ইন্টিগ্রেটেড করে বেশ ভালো সুফল দেখা গেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে।

দুর্নীতি, বিভিন্ন সার্ভিসের ডেলিভারি খরচ কমিয়ে আনা

সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের পরিচয় নিবন্ধন পদ্ধতি দুর্নীতি কমিয়ে বিভিন্ন সার্ভিসের ডেলিভারি খরচ কমিয়ে আনে বলে ভবিষ্যতে এধরনের সার্ভিসগুলোকে আরো উন্নত করা যায়। এর পাশাপাশি সবাইকে একসাথে একই প্লাটফর্মে আনার জন্য যেই অন্তর্ভুক্তি জনগণ এবং সরকারের মধ্যে বিশ্বাস এবং বিভিন্ন সার্ভিসের অ্যাকসেসিবিলিটি পরিমাপ করা যায়। প্রতিটা জনগণের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গেলে এ ধরনের একীভূত পরিচয় নিবন্ধন পদ্ধতির বিকল্প নেই। এক দেশের জন্য একটা ইউনিভার্সাল নিবন্ধন পদ্ধতি সব ধরনের সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে একীভূতভাবে কাজ করতে পারে।

এই ধরনের ডাটা নিয়ে সরকার নির্দিষ্ট জায়গায় আরবান প্ল্যানিং, বিভিন্ন ধরনের নিম্নবিত্ত অথবা মধ্যবিত্তদের আবাসন পরিকল্পনা, কোথায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিক হতে পারে সেটার ধারণা পাওয়া যায় এই নিবন্ধন পদ্ধতির ব্যাকএন্ড থেকে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে - এ ধরনের অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ইনফ্রাস্ট্রাকচার লেভেলের প্ল্যানিং সম্ভব হয় এই ধরনের একীভূত ডাটা থেকে।

নীতি নির্ধারণীতে থাকা মানুষজনের জন্য ড্যাশবোর্ড

আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি - এই ধরনের ডাটা থেকে সমাজের বিভিন্ন স্বাস্থ্য এবং আর্থ সামাজিক ইন্ডিকেটর পাওয়া যায় যা সাহায্য করে কিভাবে একটা দেশ তার ইউনিভার্সাল সার্ভিস ইন্ট্রিগেশন, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রতিটা মানুষের জন্য ‘ইউনিভার্সাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’ অর্থাৎ সবার জন্য সমাজ কল্যাণ অথবা ভাতা, সবার জন্য ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং কী ধরনের স্বাস্থ্য কাভারেজ (সবার জন্য) আমাদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে সেটার ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি নীতি নির্ধারণীতে থাকা মানুষজন তাদের ড্যাশবোর্ডে সরকারি এবং বেসরকারি অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসগুলোকে কিভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় বিশেষ করে যারা সমাজের আর্থসামাজিক স্কেলে নিচে আছেন।

এর সুবিধা অনেক।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় - ব্যাংকের অথবা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে, ট্যাক্স জমা দিতে, পাসপোর্ট করতে, সিম তুলতে, জমি রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি করতে একটা ইউনিক নিবন্ধন পদ্ধতি যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার পেছনে কারণ একটাই। সরকারি বা বেসরকারি সার্ভিসগুলোকে কম সময়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার জন্য একটা একীভূত পদ্ধতি যাতে প্রতিটা মানুষকে ঠিকমতো সার্ভিসটা পেতে পারেন।

‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এবং ডিজিটাল সিগনেচার

এই দুটো সিস্টেমের মধ্যে এই কানেকশনটা না হলে এই একীভূত ব্যাপারটা ঠিকমতো কাজ করবে না। আমাদের নীতিমালা রয়েছে, প্রয়োগ নেই।

প্রস্তাবনা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে একটা একীভূত ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’

আমার দেখামতে ৫টা ডাটাসেটই পারে আমাদের দেশের জন্য একটা একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি শুরু করতে। সেটার জন্য দরকার ডাটা কো-রিলেশন, আর সেটা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

৫টা ডাটাসেট

ক. বাংলাদেশে সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস)

খ. জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাসেট, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ

গ. জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, স্থানীয় সরকার বিভাগ

ঘ. ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিআরটিএ

ঙ. পাসপোর্ট ডাটাসেট, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর

একটি ‘একীভূত সনাক্তকরণ পদ্ধতি’র মাধ্যমে একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি ইউনিক সনাক্তকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটা সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবসায়িক অথবা অন্যান্য কাগজের এবং ইলেকট্রনিক ‘ট্রানজাকশন’ করা সম্ভব। এই ইউনিক সনাক্তকরণ পদ্ধতির দিকে হাটতে হবে প্রশাসনকে। এই এক ইউনিক পদ্ধতির জন্য এই পাচটি ডাটাসেটের মধ্যে কো-রিলেশন তৈরি করে একক পদ্ধতি তৈরি করে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে, মেশিন লার্নিং যেভাবে কাজ করবে সেটার প্রায়োরিটি আমি বলে দিতে পারি। শুরুতে, জাতীয় পরিচয়পত্র, এবং সেখানে যদি কারো ডাটা না পাওয়া যায় তাহলে সেটা যাবে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রারে। এই ডাটাগুলো আস্তে আস্তে যুক্ত হয়ে যাবে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন এন্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ডাটাসেটে। এখানে ব্যানবেইসের ডাটা যোগ হচ্ছে ‘ইউনিক আইডি’তে যা পরে পাল্টে যাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাতে। এই কো-রিলেশন এর মধ্যে পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাটা যুক্ত হবে যখন প্রথম তিনটে ডাটাসেটে তাদের তথ্য মিল না পাওয়া যায়। এই পুরো কাজে ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার অর্থাৎ 'ব্লকচেইন' প্রযুক্তি ব্যবহার হবে।