কনটেন্টে যান

অ্যালান টুরিং টেস্ট

যন্ত্র কী চিন্তা করতে পারে?

I propose to consider the question, ‘Can machines think?’

-- A. M. Turing

যন্ত্র কী বুদ্ধিমান আচরণ করতে পারে?

সাইন্টিস্টদের মধ্যে প্রথম ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ অর্থাৎ মেশিন চিন্তা করতে পারে কিনা - ব্যাপারটা নিয়ে তোলপাড় শুরু করেছিলেন যে কয়েকজন - তাদের মধ্যে অ্যালান টুরিং অন্যতম। 'ইমিটেশন গেম’ মুভিটা দেখলেই বোঝা যাবে এই গল্পের পেছনে কি হয়েছিল আসলে। এই ব্রিটিশ সাইন্টিস্ট যখন কম্পিউটারের মতো একটা (বড় বড় রোটেটিং হুইল নিয়ে) জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৩০ সালের দিকে, তখন উনি হয়তোবা চিন্তা করছিলেন - কম্পিউটার কি কখনো বুদ্ধিমান হতে পারবে?

এর পরের ধাপ দেখলাম ১৯৫০ সালের দিকে। উনি একটা জার্নাল1 পাবলিশ করলেন, কিছুটা সংশয় নিয়ে - যার মূল প্রশ্ন হচ্ছে মেশিন আসলে চিন্তা করতে পারে কিনা? পেপারটার নাম হচ্ছে ‘কমপিউটিং মেশিনারি এন্ড ইন্টেলিজেন্স’। গুগল করে দেখতে পারেন। ওই ব্যাপারে একটা আউটলাইন তুলে ধরেন তিনি, কম্পিউটারকে কিভাবে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে। মজার কথা হচ্ছে পেপারটার প্রথম প্যারার নামই হচ্ছে ‘দ্য ইমিটেশন গেম’। তিনি আসলে কয়েকটা গেমের ধারণা দেন প্রশ্ন দিয়ে।

ফিরে আসি অ্যালান টুরিং এর প্রশ্নে। খুবই সহজ প্রশ্ন উনার। কম্পিউটার কি মানুষের মতো কথা বলতে পারে? পরের দিকে এই প্রশ্নটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা ‘মেজারমেন্ট টুল’ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় যাকে আজ আমরা বলছি ‘টুরিং টেস্ট’। আপনি যদি কম্পিউটার কিবোর্ড দিয়ে পর্দার পেছনে থাকা একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং সত্যিকারে মানুষের সাথে লিখে লিখে প্রশ্নের উত্তর পান, আর সেখানে একটা সময় পরে আপনি যদি সেই কম্পিউটারটাকে পাশের মানুষের সাথে আলাদা করতে না পারেন তাহলে সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামটাকে ‘বুদ্ধিমান’ বলা যাবে।

টুরিং ব্যাখ্যা করছিলেন যদি প্রশ্নকারী (যিনি মানুষ) তার লিখিত প্রশ্নের সব উত্তরের মধ্যে সেই কম্পিউটারকে সত্যিকারে মানুষ থেকে আলাদা করতে না পারলে সেই প্রোগ্রামটাকে ‘বুদ্ধিমান’ বলা যেতে পারে। উনার পয়েন্ট হচ্ছে যদি কোন কম্পিউটার প্রোগ্রাম এই টেস্ট পাস করে থাকে তাহলে সেটা মানুষের আচরণকে কিছুটা রপ্ত করতে পেরেছে। একজন মানুষ পরীক্ষককে যদি একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম নিজেকে মানুষের মত করে বোঝাতে পারে তাহলে তো তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।

বর্তমান চিন্তা ধারণা, যন্ত্রের চিন্তা নিয়ে

আমি কিন্তু ১৯৫০ সালের পেপার থেকে বলছি। অবশ্যই আমাদের যুগে সেই টুরিং টেস্টের লিমিটেশন আছে। তবে প্রাথমিক একটা পেপার হিসেবে সবাই এটাকে ব্যবহার করে থাকে। আচ্ছা, ‘এলাইজা’ প্রোগ্রামটার কথা মনে আছে? অথবা এখনকার হাজারও চ্যাটবট? এটা তো অবশ্যই বলা যেতে পারে যে, টুরিং টেস্টে যেই লিমিটেশনগুলো আছে, সেগুলো কিছু ভালো পন্থা ব্যবহার করলে একজন প্রশ্নদাতাকে কনফিউজ করা যেতে পারে। যেমন, আমি একটা প্রশ্ন করলাম, আপনার চ্যাটবট বেশ কিছু আধ্যাত্মিক মানে ‘সাইকোলজিকাল’ উত্তর দিলো যেখানে একজন প্রশ্নকর্তা তাকে খুব ভালো আধ্যাত্মিক গোত্রের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।

আমরা ইন্টারনেটে এখন প্রচুর চ্যাটবট দেখছি যাদের চিন্তাভাবনা অনেকাংশেই মানুষের থেকে উপরে। তবে সেগুলো কোটি কোটি মানুষের আলাপ-আলোচনাকে বিচার করেই তৈরি করা হয়েছে যা আসলেই একদম মানুষের মত উত্তর দিতে পারে। এগুলো অনেকটাই স্ট্যাটিসটিক্যাল এনালাইসিস থেকে প্রেডিকশন করে নেওয়া। নিউরাল নেটওয়ার্ক মানে ডিপ লার্নিং এর খেলা। আর সেকারণে এখনকার রিসার্চাররা এ ধরনের ‘আধ্যাত্মিক ধরনের’ চ্যাটবটকে ঠিকমতো ধরার জন্য আরো নতুন নতুন পন্থা রিফাইন করে এনেছেন।


  1. পেপারটা দেখতে পারেন এখানে, https://academic.oup.com/mind/article/LIX/236/433/986238। আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।