কনটেন্টে যান

সামগ্রিক প্রস্তাবনা

আমাদের এই বিশাল ফ্রেমওয়ার্কের প্রস্তাবনাগুলোকে ভাগ করে ফেলব কয়েকটা স্ট্রাকচারে। প্রথম কয়েকটা ধাপের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোন সম্পর্ক নেই, তবে এই ধাপগুলো ছাড়া পরের ধাপে যাওয়া দুষ্কর হবে। আমাদের কথা 'এবিসি' অর্থাৎ এআই, বিগ ডাটা, ক্লাউড। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য ডাটার ব্যবহারকে দক্ষতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে ডাটা যেখানে রাখা হয় সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুলোকে ‘হাইব্রিড ক্লাউডে’ নেবার জন্য কিছু আলাপ হয়েছে এখানে। এর পাশাপাশি ডাটা গুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং কো-রিলেশন বোঝার জন্য ডাটাগুলোকে নিজ নিজ সংস্থার অফিসের পরিবর্তে জাতীয় ডাটা সেন্টারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করতে হবে। এতে সরকারের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

বেশ কয়েকটা মন্ত্রণালয় 'আইটি'কে চালাচ্ছে, সমন্বয়, এবং ‘একটা’ ‘ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মন্ত্রণালয়’ - দেশের 'চিফ ইনফরমেশন অফিসার'

অভিজ্ঞতায় দেখেছি - অনেকগুলো দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে দ্বায়িত্ব নেন একটা 'সুপার' লিড মন্ত্রনালয়। যাদের কাজের ধারা হবে ‘ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মন্ত্রণালয়’এর মতো। আপনি জমির নামজারী করবেন, ভূমি মন্ত্রনালয়ের কাজ - তবে যখন সেটা ডিজিটাল সার্ভিস ডেলিভারিতে যাবে, সেটার শেষ কাজটা নামিয়ে দেবে ‘ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার মন্ত্রণালয়’। অনেকটাই, আমাদের 'এক্সেস টু ইনফরমেশন' প্রজেক্টের মতো, তবে যাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজের সুবিধার্থে। সিঙ্গাপুরের সব মন্ত্রনালয়ের ‘ডিজিটাল’ অংশের কাজে আছে 'ইনফো-কম মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি' অর্থাৎ আইএমডিএ। সবার কাজ একীভূত করে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে দ্বায়িত্বে তারা। তারাই দেশের ‘ডিজিটাল ফ্রন্ট-এন্ড’।

বাংলাদেশকে পুরোপুরি ‘ট্রান্সফরম’ করতে প্রয়োজন একজন 'চিফ ইনফরমেশন অফিসার', ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো। তার ধারণা থাকবে দেশের 'এন্ড টু এন্ড' ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ব্যাপারে। উনি একাধারে সরকারি কর্মকর্তা এবং দেশের 'চিফ ইনফরমেশন অফিসার', প্রতিটা ডিজিটাল সার্ভিসের জন্য।

একটা একীভূত ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’, সঙ্গে ব্লক-চেইন 'ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার'

আমাদের পাঁচটা ডাটাসেট, ক. বাংলাদেশে সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস), খ. জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাসেট, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ, গ. জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঘ. ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিআরটিএ এবং ঙ. পাসপোর্ট ডাটাসেট, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নিয়ে একটা একীভূত ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তৈরি করা যায় ‘সিআরভিএস’কে ঘিরে।

আমি দেখেছি বেশ কয়েকটি দেশে ব্লক-চেইন ভিত্তিক ‘আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তৈরি করেছে। আমরাও এ ব্যাপারে অগ্রগামী থাকতে চাই। আমাদের পাঁচটি ডাটাসেটে ডাটা'র ইন্টেগ্রিটি খারাপ নয়, তবে এর নিরাপত্তা দেবার জন্য একটা ভালো গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম থেকে সাহায্য নেয়া যেতে পারে - যারা অনেক দেশেই এধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছেন। 'সিকিউরড' ভাবে। এব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ ধারনাটা দেখতে পারেন।

উদ্ভাবনা এবং চিন্তা করতে শেখা

Education is not the learning of the facts, but the training of the mind to think.

-- Albert Einstein

সার্ভিসের প্রসেস সহজীকরণ ধাপ, যুক্ত করতে হবে বিভিন্ন উদ্ভাবনা ল্যাবকে

বুদ্ধিমত্তার রাস্তায় হাঁটার শুরুতে আমাদের প্রশাসনের কাজগুলোকে নিয়ে আসতে হবে ‘রুল বেসড’ সিস্টেমে। এবং তার আগে কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে কাজের ধাপগুলো। সরকারের যে কোন ছাড়পত্র, পারমিট, লাইসেন্স অথবা সনদপত্র পাবার জন্য একটি সংস্থা থেকে আরেকটি সংস্থার ছাড়পত্রের ফটোকপি নেওয়া নিরুত্সাহিত করতে হবে। কারণ একজন সেবাপ্রাথী সরকারের কাছে আসবেন, সরকারের আন্তসংযোগ অর্থাৎ আন্ত:সংস্থা ছাড়পত্র গ্রহণের ব্যাপারগুলো থাকবে প্রশাসনের ভেতরেই। সেবা সহজীকরণ প্রক্রিয়ায় সরকারীভাবে বিভিন্ন ‘এক্সেলেরেটর’, ইনোভেশন ল্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন উদ্ভাবনা ল্যাবকে যুক্ত করা যেতে পারে একেকটা সংস্থার সরকারি সার্ভিসের সহজীকরণ প্রসেসে। এতে ‘প্রাইজমানি’ হিসেবে বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হলে ‘সংস্থাভিত্তিক’ বিভিন্ন সার্ভিসের সহজীকরণ চলে আসবে ছয় মাসের মাথায়। এই সহজীকরণের ফলে যত বেশি সরকারি ফী বাবদ আয় হবে, সেগুলো থেকে কিছু টাকা ফেরত দেয়া যেতে পারে - যারা সেই নতুন পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করবেন। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে যারা এই সেবা সহজিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ‘বেটা টেস্টিং’য়ে যুক্ত থাকবেন তারাও পেতে পারেন একই ধরনের প্রণোদনা।

সেবা সহজীকরণ প্রসেস ম্যাপ তৈরি - সংস্থাভিত্তিক

এমুহুর্তে একটা কার্যকর এবং নাগরিক বান্ধব সেবা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য বর্তমানে যেই ধাপগুলো নিয়ে সংস্থাগুলো কাজ করছে - সেটার ‘ফ্লো-চার্ট’ দিয়ে ভেতরের বিশ্লেষণ না করলে এনালগ পদ্ধতির সমস্যাগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কনভার্ট করলেও সমস্যাগুলো দূর হবে না। সেখানে যেই ‘ওয়ার্ক-ফ্লো’ নিয়ে কাজ করা দরকার, সেই প্রসেস ম্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা। সেখানে যোগ করতে হবে বাকি সংস্থাগুলোকে। সেবা সহজিকরণ প্রক্রিয়ায় পূর্বে কতগুলো ধাপ ছিল এবং বর্তমানে কতগুলো ধাপ ‘নিদেনপক্ষে’ প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে পুরো ব্যাপারটিকে ‘ডিজিটালি’ অর্থাৎ সফট্ওয়ারে মাইগ্রেট করলে কতগুলো ধাপ কমিয়ে আনা যাবে - সেটার একটা প্রমিত পদ্ধতি তৈরি করতে হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। এর পরে আসবে ‘রুল-বেসড’ সিস্টেম, সেখানে মানুষ আস্তে আস্তে বের হয়ে যাবে সিদ্ধান্তের ‘লুপ’ থেকে।

ইউনিক সনাক্তকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে সব আবেদনপত্র গ্রহনের বাধ্যবাধকতা (অনলাইন)

ক. সব ধরনের আবেদনের জন্য একটা ইউনিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহার, ব্লক-চেইনে 'মাইগ্রেশন' করার আগে এ মুহুর্তে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’কে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রকে বাধ্যতামূলক করার পরও ‘ব্যাকএন্ডে’ জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাসেট সংযোগ না থাকায় ব্যাপারটাকে ঠিকমতো কাজ করানো যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে, ভূমি অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাসেটে সংযোগ না থাকলে তথ্য যাচাইয়ের সময়ে ‘নামজারি’তে ভুল তথ্য যেতে পারে।

খ. ‘আন্ত:সংস্থা আন্তসংযোগ’ তৈরি করতে হবে সরকারি সকল প্রয়োজনীয় ডাটাসেটের ভেতরে। সরকারের বেশিরভাগ ডাটাই ‘পাবলিক’, সে হিসেবে প্রয়োজনীয় সব সংস্থার ডাটাসেটগুলোকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে সরকারি আরেকটা সংস্থার কাছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ছাড়া বাকি সব সংস্থার ‘আন্ত:সংস্থা আন্তসংযোগ’ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে, শুরুতে ফটোকপি নেয়া বন্ধ করতে হবে। তখন, সংস্থাগুলো নিজেদের প্রয়োজনে যুক্ত হবেন ‘ইলেকট্রনিক সার্ভিস বাসে’ যেখানে অন্য সংস্থাগুলো যুক্ত আছেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস’ প্রমিত করার কাজ করবে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার’ (বিএনডিএ)।

গ. আইনগত ভিত্তি তৈরি করতে হবে - সকল ইলেকট্রনিক যোগাযোগের জন্য। প্রশাসনকে আইন করতে হবে, যেখানে কাগজের পাশাপাশি সকল ইলেকট্রনিক যোগাযোগকে আইনগত ভিত্তি দেয়া সম্ভব হবে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র এই ইলেকট্রনিক যোগাযোগকে আইনগত ভিত্তি দেয়ার ফলে তাদের সব কাজ অনলাইনে শুরু হয়েছে সেই ২০০০ সাল থেকে। এর ফলে, পৃথিবী জুড়ে ‘ইলেক্ট্রনিক ডকুমেন্ট’ ভিত্তিক অনেকগুলো সার্ভিস কোম্পানি এসেছে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে।

ঘ. একজন সেবাগ্রহণকারী সংস্থা অথবা ব্যক্তি, সরকারি ‘ইউনিক সনাক্তকরণ’ পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদন করবেন একটা পোর্টালে, যেখানে অন্যান্য সংস্থার ছাড়পত্র হিসেবে তার পত্রের নম্বর যোগ করে দিলেই হবে। যেমন, সেবা গ্রহীতার কাছে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ অথবা ‘জন্ম নিবন্ধন’ অথবা ‘ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ হিসেবে শুধুমাত্র সংখ্যাগুলোকে আবেদনপত্রে যোগ দিলেই চলবে। এর পাশাপাশি কোথাও কোন অন্য সংস্থার লাইসেন্স, পারমিট অথবা ছাড়পত্রের প্রয়োজন পরলে সেখানে সেই পত্রের সংখ্যার নম্বরটা দিলেই চলবে। কোন স্ক্যানকৃত ডকুমেন্টকে আপলোড করার প্রয়োজন নেই। সেই ভেরিফিকেশন সিস্টেম আভ্যন্তরীণভাবে (সফটওয়্যারের ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসে’র মাধ্যমে) সেই পত্রের নম্বর অনুসারে ‘স্ব’ ‘স্ব’ সংস্থা অথবা বিভাগ থেকে ‘সত্যাখ্যান’ অর্থাৎ যাচাই করে নিয়ে আসবে।

ঙ. সেবা গ্রহীতাদের বিভিন্ন দপ্তরে স্বশরীরে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এমুহুর্তে সবকিছুই করা সম্ভব অনলাইনে। সেবাগ্রহীতা এবং সেবাদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যোগাযোগের প্রয়োজন পড়বেনা। জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপারে এ নিয়মের কিছু ব্যত্যয় ঘটতে পারে।

সংস্থাগুলোর মধ্যে ডাটা শেয়ারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার

ক. সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ডাটা শেয়ারিং করার আগে সবাই চেয়েছিলেন নিজস্ব ডাটা সেন্টার। আমার অভিজ্ঞতা বলে, সবার জন্য আলাদা করে ডাটা সেন্টার করলে প্রচুর অর্থের অপচয় এবং এই সার্ভারগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য যে ধরনের জনবল দরকার পড়ে সেটা সরকারের বেতনভাতা থেকে যোগান দেয়া সমস্যা হয়। সরকারি ডাটা সেন্টারগুলোতে যে কমন অর্থাৎ ‘বেসলাইন’ অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন পড়ে, সেই একই খরচে প্রায় ২০টা সংস্থার ডাটা এক জায়গা রাখলে সে ধরনের সাশ্রয়ী হবে।

খ. ডাটাসেন্টারের জন্য একীভূত ইনফ্রাস্ট্রাকচার; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনে সব ধরনের ডাটাসেটগুলোকে একই জায়গাতে আনার পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রয়োজনে ‘ডিজাস্টার রিকভারি সাইট’ অন্য কোথাও হতে পারে - তবে একটার সাথে আরেকটার ‘কোরিলেশন’ করার জন্য তাদেরকে কাছাকাছি আসতে হবে। আর এর জন্যই প্রয়োজন হাইব্রিড ক্লাউড।

গ. সরকারি সব ডাটা সার্ভিস আসবে প্রাইভেট সেক্টরের (সর্বনিম্ন ১০ বছরের চুক্তি) চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। সরকারের পক্ষে প্রতিবছর হার্ডওয়্যার পাল্টানো/"আরএমএ" ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয় বলে সেটা ১০ বছর অন্তর টেন্ডারের মাধ্যমে "অ্যাজ আ সার্ভিস" কিনবে সরকার। ডাটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা থাকতে পারে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে। তবে, সেটা আইনি প্রক্রিয়ায় ঠিকমতো লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার’ (বিএনডিএ), এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস, জাতীয় ডাটাহাব

এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস ছাড়া আমাদের সবকিছুই প্রায় অচল। সরকারি এবং বেসরকারি সব ডাটা আসতে হবে একই এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাস আর্কিটেকচারে। বাংলাদেশে দুটো জায়গায় এই আর্কিটেকচার আছে, তবে সেটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা জরুরি। সবাই এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস বাসে আসবে, তবে ডাটা শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর মধ্যে সহজ 'মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং' থাকতে পারে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে "বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার" দিয়ে সংযুক্ত থাকবেন, তবে ডাটা শেয়ারিং ক্ষেত্রে সংস্থা ভিত্তিক এক পৃষ্ঠার সহজ 'মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং' থাকতে পারে।

ডাটাসেন্টারের প্রাইভেটাইজেশন/প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ, ক্লাউড

ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ ডাটাসেন্টার বন্ধ করে দিচ্ছে, একীভূত করার সুবিধার্থে - ক্লাউডে। বাংলাদেশের সেরকম শুরুর দিকে বাংলাদেশের অনেকগুলো সংস্থা নিজস্ব ডাটাসেন্টার তৈরি করলেও পরবর্তীতে সেগুলোর আলাদাভাবে ডাটা নিরাপত্তা এবং ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার ধীরে ধীরে অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নিরুৎসাহিত করছে - আলাদা করে নিজস্ব ডাটাসেন্টার করার জন্য। এগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা অনেক খরচের।

খ. সরকারের ডাটা সেন্টার নীতিমালা অনুযায়ী সংস্থাগুলোর মূল ডাটাসেটগুলোকে আস্তে আস্তে জাতীয় ডাটা সেন্টারে সরিয়ে আনলে ডাটার নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষ লোকের হাতে পড়বে। সেদিক থেকে জাতীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আইনপ্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের ডাটা সেন্টারগুলো এক জায়গায় করা যেতে পারে। এখানে ৯/১১ এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মতো ধারনায় সব নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ডাটা নিজেদের মধ্যে ‘এক্সচেঞ্জ’ করার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সবকিছু ‘কো-লোকেশন’ তবে আলাদা ভার্চুয়াল নিরাপত্তা বলয়ে রাখা যেতে পারে।

গ. ওদের সরকারের 'ক্লাউড ফার্স্ট' নীতিমালা, কারা সার্ভিস দিচ্ছে? সেটা দেখলে ব্যপারটা পরিস্কার হবে। আমাদের সরকারের ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ব্যবস্থাপনায় যা খরচ হয়, সেখানে তার সিকিভাগ খরচ করলে সেই সার্ভিস যন্ত্র সহ পাওয়া সম্ভব। আমাদেরকে সার্ভিস নিতে হবে ডাটার ব্যবহারে। সেই ১০ বছরে কাজ কতো হার্ডওয়্যার লাগবে, কখন কোনটা আপগ্রেড করতে হবে সেটা করবে চুক্তিভিত্তিক কোম্পানি। ডাটা নিরাপত্তার ফ্রেমওয়ার্ক বানিয়ে দেবে তারা, ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারে কিছু সরকারি মানুষ।

ঘ. ‘জেইডিআই’ অর্থাৎ ‘জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ হচ্ছে পেন্টাগনের সাথে মাইক্রোসফট এর ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাউড অর্থাৎ মেঘ চুক্তি। এখানে মেঘ মানে ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস দেবে পেন্টাগনকে। চুক্তি অনুসারে, মাইক্রোসফট ১০ বছর ধরে পেন্টাগনকে তার আইটি অবকাঠামোকে আধুনিকীকরণের জন্য ক্লাউড-ভিত্তিক কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ পরিষেবা সরবরাহ করবে।

স্পেকট্রামকে নামিয়ে আনতে হবে সহনীয় মূল্যে

স্পেকট্রামের ন্যায্য দাম কিভাবে হতে পারে?

Spectrum prices should promote efficient use of spectrum. As a vital natural resource, the price of spectrum should be sufficient to ensure that it is valued and used wisely. Use of spectrum provides considerable benefits to the economy and benefits from spectrum should be maximized.

-- Guidelines for the review of spectrum pricing methodologies and the preparation of spectrum fee schedules, ITU

শহর এবং গ্রামে মোবাইল ইন্টারনেট এবং আমাদের অফিস, বাসার ব্যবহৃত সমস্ত যন্ত্রপাতির যোগসূত্রের প্রাণ হচ্ছে স্পেকট্রাম। প্রতিটি দেশের স্পেকট্রাম একটি জরুরী রিসোর্স যাকে ব্যবহার করে একটা দেশ পুরোপুরি ডিজিটাল সার্ভিস নির্ভর হয়ে উঠতে পারে। তবে, এই সমস্যার শুরু হয় যখন স্পেকট্রাম ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় না এর দামের ফারাকের জন্য। স্পেকট্রাম এর সুষম দাম না হলে সরকার যেভাবে তার ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়, সেভাবে এই স্পেকট্রাম যদি লাইসেন্সধারী অপারেটররা ঠিকমতো কিনতে না পারে তখন এই ব্যবহারযোগ্য সম্পদ থেকেও সেই স্পেকট্রামের সুফল পায় না জনগণ।

‘অপরচুনিটি কস্ট’ কী?

In microeconomic theory, opportunity cost, or alternative cost, is the loss of potential gain from other alternatives when one particular alternative is chosen over the others. In simple terms, opportunity cost is the loss of the benefit that could have been enjoyed had a given choice not been made.

-- Wikipedia

আর ঠিক এই কারনেই স্পেকট্রামের ন্যায্য দামের হিসাব বের করার জন্য পৃথিবীতে প্রচুর নিয়ন্ত্রক কমিশন মাইক্রোইকোনমিক তত্বের ভিত্তিতে ‘অপরচুনিটি কস্ট’ অর্থাৎ এই স্পেকট্রাম না থাকলে ব্যবহারকারীদের যত টাকা দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থাপনায় এই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হতো সেই ততো টাকার ফারাকের হিসেব নিয়েই স্পেকট্রামের দাম নির্ভর করে। সরকার স্পেকট্রামের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে এটাকে বিক্রি করা যাবে না সেটাই একটা বিপদজনক 'ক্যাচ ২২' পরিস্থিতি। এতে, জনগণ তার স্পেকট্রামের উপরে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ফলে, একটা জনগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত না থাকার ফলে জনগনের যে সামগ্রিক ক্ষতি সেটা স্পেকট্রামের দামের দামের অনেকগুণ বেশি। দাম বেশি পেলাম অথবা কম পেলাম সেই তর্কে না গিয়ে স্পেকট্রামের দাম ধার্য হওয়া উচিত ‘অপরচুনিটি কষ্ট’ ধারায়। যত তাড়াতাড়ি এই স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে, ততো তাড়াতাড়ি দেশ সামগ্রিক একটা ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে।

ডাটা 'সিকিউরিটি' সরকারিভাবে নিশ্চিত করা কষ্টকর

প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ ছাড়া ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমস্যা বটে। এধরনের অনেকগুলো মডেল কাজ করছে পৃথিবীব্যাপী। নতুন কিছু তৈরি করার নেই। এ ব্যাপারে আগেও কিছু ধারণা দিয়েছি। সেরা কোম্পানি সেবা বিক্রয় করবে ডাটা 'সিকিউরিটি' প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস হিসেবে। সরকার কিনবে সার্ভিস হিসেবে। সার্ভিসের ব্যতয় হলে সে ধরনের জরিমানার বিধান থাকবে।

ইলেকট্রিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোকে সিকিউর করতে হবে

গত কয়েক বছরে আমাদের ইলেকট্রিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অনেক উন্নত হয়েছে। এগুলোকে সিকিউর করতে হবে। যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো কোনো ঘটনা হয়। ইলেকট্রিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো বসে গেলে অনেক সমস্যা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য ইলেকট্রিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোকে 'ফেইল-সেফ' হতে হবে। সেটার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আক্রমন থেকে বাঁচার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।

সেরা এবং লাইসেন্সবিহীন ওপেনসোর্স প্রযুক্তির ব্যবহার (ছোট স্কেলে)

আমাদের মতো দেশে সরকারে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সধারী সফটওয়্যার এখন প্রযোজ্য নয়। প্রচুর দেশীয় কোম্পানির দাঁড়িয়ে গেছে যারা ওপেনসোর্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাৎসরিক ভিত্তিতে সার্ভিস দিতে পারেন। আমি নিজে বিশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার চালাচ্ছি ওপেনসোর্সকে মূল হিসেবে ধরে রেখে। লাইসেন্সধারী সফটওয়্যার এবং প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রতিবছর ‘অ্যানুয়াল মেইনটেনেন্স কন্ট্রাক্টে’র নামে যত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় তার সিকিভাগ খরচ করে দেশীয় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান দিয়ে একই স্কেলের সফটওয়্যার তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। আমার ৩০ বছরের সরকারি অভিজ্ঞতা তাই বলে।

সফটওয়্যারের লাইসেন্স যদি পুরো ইনভেস্টমেন্টের একটা বিশাল অংশে চলে যায় তাহলে সেই ইনভেস্টমেন্ট গলদ রয়েছে। আমার ভালো লাগছে এ কারণে, প্রশাসন বাংলাদেশি অনেকগুলো কোম্পানিকে দিয়ে গভর্মেন্ট ‘ইআরপি’ অর্থাৎ ‘জিআরপি’ তৈরি করেছে - যার সুফল পাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন।

আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টগুলো দেখেছি, বেশিরভাগ জায়গায় শুরুতে কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশন কিনলেও সেটা থেকে সরে আসছে সবাই। বিশ্বব্যাপী টেক ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে যেটা দেখেছি - তার সিকিভাগ করতে আমরা কিনি কমার্শিয়াল ডাটাবেস, অথবা এপ্লিকেশন যার অধিকাংশ চলে যায় এপ্লিকেশনের লাইসেন্স এবং বাত্সরিক মেইনটেনেন্স কন্ট্রাক্টে। একটা প্রজেক্ট মূল্যমান ৫০ কোটি টাকা হলে সেখানে এপ্লিকেশনের লাইসেন্স এবং বাত্সরিক মেইনটেনেন্স কন্ট্রাক্টে চলে যায় ১৫ কোটি টাকা, যা আসলে কয়েকটা কাগজের দাম।

আমি কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশন খারাপ বলছি না, বরং আমরা নিজেদেরকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাদের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ওপেনসোর্স প্রোডাক্ট দিয়ে দেশের বাইরে কাজ পেলেও দেশের বেশিরভাগ কাজ চলে যায় বাইরে। এতে শক্ত ভিত তৈরি হচ্ছে না ভেতরে। আমি নিজেই কয়েকটা বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছি যার মূলমন্ত্র ছিল ওপেনসোর্স। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ডাটাসেট জাতীয় পরিচয়পত্রের চমত্কার 'এপিআই' ব্যবহার করছে মোবাইল অপারেটর এবং অনেকে ওপেনসোর্স ফ্রেমওয়ার্কে। এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাসেটের বিশাল 'এপিআই' এক্সেস ওপেনসোর্সে চলতে পারলে বাকিদের সমস্যা কোথায়?

প্রশাসনে একীভূত 'এলড্যাপ ডিরেক্টরি' সার্ভিস

সরকারি অফিসে বিভিন্ন কাজের ধাপের উপর ব্যবহারকারীদের ‘রোল’ এবং ‘এক্সেস রাইট’ ঠিকমতো ব্যবহার করার জন্য একটি ‘একীভূত’ অর্থাৎ ‘দেশব্যাপী ডিরেক্টরি সার্ভিস’ প্রয়োজন। সেখানে মাইক্রোসফটের এর কমার্শিয়াল ‘অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি সার্ভিস’ খুব নামকরা হলেও এখানে ওপেনসোর্স বেশকিছু অল্টারনেটিভ সলিউশন আছে। পৃথিবীর প্রায় সব আইটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর গণ এ ধরনের ডিরেক্টরি সার্ভিস ব্যবহার করে থাকেন - তাদের গ্রাহকদের কোথায় কিভাবে কাজ করবেন তার ক্ষমতায়ন করতে। আমাদের দেশে যেহেতু স্বাক্ষর এর প্রচলন রয়েছে এখনও এবং আমরা একে অপরের স্বাক্ষরকে ঠিকমত চিনি না বলে ইলেকট্রনিক ডকুমেন্টের নিরাপত্তার জন্য সব প্রশাসনিক অফিসের মধ্যে ডিরেক্টরি সার্ভিস প্রচলন করা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুক্ত করতে হবে সরকারি সেবা সহজিকরণ প্রক্রিয়ার গবেষণা ও উন্নয়নে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০% ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ অর্থাৎ সরকারি সেবা সহজিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদেশি পরামর্শদাতা নিয়োগ না করে দেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় অর্থায়ন করা যেতে পারে। এই বিশেষ অর্থায়ন বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বরাদ্দ করা যেতে পারে। শহরভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন ট্রাফিক, দুর্নীতি দূরীকরণে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশীয় সমস্যার দিকে মনোযোগ দেবে।

প্রনোদনা দিতে হবে সরকারের উদ্ভাবনা 'ল্যাব', এক্সেলেটর, ইনকিউবেটর তৈরিতে

দেশের বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনা 'ল্যাব', এক্সেলেটর, ইনকিউবেটরগুলো কেন করেছে? হোয়াটসঅ্যাপের মতো দরকারি একটা এপ্লিকেশন তৈরি করতে পারলে সেই দেশ কোথায় পৌছুবে সেটা চিন্তা করে দেখুন।

দশটা স্কিল দরকার গ্লোবালাইজেশনের জন্য

কোন দশটা স্কিল আমাদের দরকার? আমি নিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় 'সোলার + হাডুপ', নাই-ফাই ক্লাস্টার ইমপ্লিমেন্ট করতে গিয়ে দেখেছি আমাদের বাজারে স্কিলের একটা বড় গ্যাপ রয়েছে - যা পাওয়া যাচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে। বাংলাদেশের ভেতরের অনেকগুলো ‘স্পর্শকাতর’ প্রজেক্ট চলে যাচ্ছে ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড, এবং আরো কয়েকটা দেশে। তাদের স্কিলসেট আমাদের কাছাকাছি হলেও ওরা ‘গ্লোবাল ট্রেন্ড’ ধরতে পেরেছে। ওরা জানে, বর্তমান ‘সফটওয়্যার ট্রেন্ড’ কোন দিকে যাচ্ছে এবং কিভাবে সেই সফটওয়্যারগুলোকে খুব সহজে (মাইক্রোসার্ভিস ভিত্তিক) ডেলিভারি দেওয়া যায়? কিভাবে একটা সফটওয়্যার নির্দিষ্ট কিছু হার্ডওয়ারের ওপর ভিত্তি না করেও চালানো যায়। সফটওয়্যার এখন অন্য লেভেলে পৌঁছে গেছে, আমাদেরকে সেটা ধরতে হবে।

শিক্ষায় ‘অ্যাবিলিটি গ্রুপিং’ দিয়ে ট্র্যাকিং, অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং সিস্টেম

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের বড় বড় দামী স্কুলের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলএমএস) আছে যা তাদের শিক্ষকদের শুধুমাত্র প্রশিক্ষণে আটকে রাখতে পারেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের দেশের সরকারি এবং অনেক বেসরকারি শিক্ষকগণ স্কুল কলেজের প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে আসল শিক্ষার কাজ ব্যাহত হয়। উনাদের আসল কাজ যেখানে শেখানো, সেখানে স্কুল ম্যানেজমেন্টকে ভালো 'লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম' দিয়ে দিলে শিক্ষকদের প্রতিদিনের প্রশাসনিক জটিলতায় যেতে হয় না। বরং, সেই 'এলএমএস' ব্যবস্থাপনা প্রশাসনিক কাজগুলোকে নিজে নিয়ে শিক্ষকদের শিক্ষার ভেতরেই রেখে দিতে পারে।

সরকারি অনেক স্কুল এধরনের 'লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম' না কিনতে পারলেও আমরা এটার 'হোস্টেড' মডেল কিনতে পারি খুব কম দামে। সরকারের এধরনের ইনভেস্টমেন্টে যাওয়া উচিত নয়, কারণে এখানে ডাটা সেন্টারের মতো হার্ডওয়্যারের মতো জিনিস যে কোন দেশের সরকার ভালো বোঝেন না। এ ধরনের ‘লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে’র সাথে হার্ডওয়ারের সম্পর্ক যতটুকু - তার থেকে সফটওয়্যার ‘অ্যানালাইটিকসে’র অংশ বেশি কাজ করবে এখানে। সে ধরনের অ্যানালাইটিক্স এবং কোন ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য কি ধরনের ইনপুট প্রয়োজন - সেটা জানাবে এই ‘লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ অর্থাৎ অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং সিস্টেমের ড্যাশবোর্ড।

সে কারণে, এই জিনিসটাকে হার্ডওয়ার ভিত্তিক একটা সলিউশন না ভেবে বরং ‘সফটওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস’ হিসেবে হোস্টেড মডেলে একটা কোম্পানির কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক (বছর ভিত্তিক হতে পারে) কেনা যেতে পারে। এখন যেভাবে স্কুলের বেতন আমরা বিভিন্ন মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং ব্যাংকের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে, এটাও সে ধরনের একটা মডেল। এর ফলে এ ধরণের সিস্টেমগুলোর জন্য প্রতিটি স্কুলে আলাদা আলাদা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা লোকবলের প্রয়োজন পড়বে না।

ভোকেশনাল শিক্ষা, সবাইকে 'স্কিলড' পেশাজীবী ধারনায় আনা

পড়াশোনার শুরুতে এই 'অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং সিস্টেম' বলে দেবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কারা কারা কারিগরি শিক্ষার জন্য উপযুক্ত হবে। ফলে, প্রাথমিক শিক্ষার মাঝামাঝি অথবা শেষ পর্যায়ে এসে সেই ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের পছন্দের কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ এবং তাদের জন্য শিক্ষার পথ পাল্টানো যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের সব ছাত্র-ছাত্রীদের একই ফ্রেমওয়ার্কের না ফেলে সঠিক চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতাঃ বজায় রাখা যাবে। সুবিধা হচ্ছে, সব ছাত্রছাত্রী তার শিক্ষাজীবনের পরে চাকরি না পাবার জন্য হতাশায় ভুগতে হবে না।

সেবা সহজীকরণ প্রসেস ম্যাপ থেকে 'রুল বেইজড' পদ্ধতিতে কনভার্সন

সরকারি অফিসের সেবা সহজিকরণ এর জন্য - আমরা সরেজমিনে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ডকুমেন্টেশন অনুযায়ী যে কয়েকটা কেস স্টাডি দেখেছি সেখানে একটা কাজের বর্তমান ধাপ সংখ্যা, এবং পরবর্তীতে উদ্ভাবনার পরে যেভাবে ধাপের সংখ্যা কমেছে - তা খুবই আশাব্যঞ্জক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সরকারি অফিসের সেবা গ্রহীতাদের জন্য আগের ধাপ থেকে বর্তমান ধাপ প্রায় এক পঞ্চমাংশ কমে গিয়েছে। এটা একটা বিশাল কাজ। এই ধরনের উদ্ভাবনা অন্যান্য সরকারি অফিসে নিয়ে যাওয়া হলে সেবাপ্রার্থীদের অনেক দুর্ভোগ কমবে। এর পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ডকুমেন্টেশনের আদান প্রদান শুরু হলে সরকারি অফিসে যাওয়া আসার ব্যাপারটা কমে আসবে।

এর আগেও বলেছি - প্রশাসন ৬ মাসের মধ্যে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোকে সেবাগ্রহীতাদের সংস্থার অফিসে না এসে পূর্ণ সার্ভিস ডেলিভারির জন্য সেই সংস্থাকে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত করলে সামনের ১ বছরে সব সার্ভিস সম্পুর্ন অনলাইন করা সম্ভব। সমস্যা প্রযুক্তিতে নয়, সমস্যা আমাদের মানসিকতায়, ইন্টেলেকচুয়াল গ্যাপ। তবে, আমার অভিজ্ঞতা বলে, সেটা সম্পুর্ন নির্ভর করছে সংস্থাপ্রধানের ওপরে।

ভর্তুকিকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিতে প্রয়োজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি ব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগণকে সরাসরি যুক্ত করলে প্রশাসন জনগণের আরও কাছাকাছি চলে আসবে। এতে জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে যতই দূরত্ব থাকুক না কেন, সবকিছুই কমে আসবে - ডাটার ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে। তখন, সবাই সেচ্ছায় তাদের ডাটা আপডেট করবেন নিজের প্রয়োজনে। ভর্তুকি ব্যবস্থায় প্রাথমিক অবস্থায় জনগণকে একটি একীভূত সনাক্তকরণ ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, যা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র ডাটাসেটের সাথে কাজ করা যেতে পারে।

তবে, বিদ্যুৎ, কৃষি সামগ্রী, স্কুলের বই খাতা - সবকিছুই প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব বিশেষ করে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায়। এই ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবস্থাপনার মতো সমমানের অথবা একই সিস্টেমের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম। এখানে ডাটাহাবের মতো প্রয়োজনীয় সংযোগ তৈরি হয়ে আছে দেশের বিভিন্ন ডাটাসেটের মধ্যে। এখন প্রয়োজন - সংস্থাগুলোর মধ্যে সহজ ‘ডাটা শেয়ারিং’ চুক্তি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সবাইকে সমাজে ফিরিয়ে আনতে, মানবিক রাষ্ট্র

রাষ্ট্রের বয়সের সাথে সাথে পাল্টাতে থাকবে প্রশাসনের মানবিক আচরণ। ইউরোপের ইতিহাস পড়লে বোঝা যায় - কিভাবে ইউরোপ এখন এত মানবিক চিন্তা করে? অথচ, তাদের রক্তারক্তির ইতিহাস বেশি আগের নয়। মানুষ ভুল করে এবং সেই ভুলের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হয় প্রচলিত আইন অনুসারে। তবে, এর পাশাপাশি - মানুষ কেন ভুল করছে অথবা কোন সমস্যার প্রেক্ষিতে একজন মানুষ একটা বেআইনি কাজ করেছে সেটা দেখার সময় এসেছে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুগে কোন পরিবেশে কি ধরনের অপরাধ হচ্ছে, এবং সেই অপরাধের মূল সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান করছে অনেক উন্নত দেশ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আমাদের বিচারব্যবস্থার সংস্কার (আসছে ২য় সংস্করণে) এবং বর্তমানে যারা বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে সময় কাটাচ্ছেন, সেটার সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে এখন। মানুষের জীবন একটাই, তাকে পুনর্বাসন অর্থাৎ সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। ডাটাই দেখাবে আমাদের সেই পথ। যারা নিজের অজান্তে অপরাধের দিকে পা বাড়িয়েছেন অথবা সামনে না জেনে অপরাধ করে বিপদে পড়তে যাচ্ছেন, তাদেরকে ডাটার সাহায্যে খোঁজ খবর নিয়ে আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করলে ভবিষ্যতে অপরাধী হবার সম্ভাবনা থেকে বের করে আনা সম্ভব।