কনটেন্টে যান

একটা উদাহরণ, আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র

একীভূত অনলাইন লাইসেন্সিং মডিউল

ধারণা করছি বাংলাদেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটা একীভূত অনলাইন লাইসেন্সিং মডিউল তৈরি করা খুব একটা সমস্যা হবার কথা না। সেগুলো করার আগে আমাদেরকে বিদ্যমান এবং সামনের লাইসেন্সিং সেবাগুলোকে কিভাবে সহজ করা যায় সেটার প্রসেস ম্যাপ নিয়ে কাজ করতে হবে। সেটার শুরুর ধাপ হচ্ছে সেবা সহজীকরণ প্রসেস ম্যাপ। সেবা সহজীকরণ নিয়ে আমরা একটা উদাহরণ দেখি - আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের জন্য আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র প্রদানের প্রক্রিয়াকে সহজীকরণ প্রসঙ্গে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশের বাহির থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালের আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী যেকোন আমদানিকারকের জন্য আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এখানে যেটা দেখা গেছে বিভিন্ন প্রকার উৎপাদনকারী, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যারা এখানে বাহিরের দেশের পণ্য বিক্রি করছেন সেখানে আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে আমদানিকারকগণ ব্যাংকে ঋণপত্র খুলে আমদানি প্রক্রিয়া করে থাকেন। এখানে ৬ ধরনের ক্যাটাগরি থাকলেও বাৎসরিক মোট আমদানির মূল্যসীমা, প্রাথমিক নিবন্ধন ফি এবং বার্ষিক নবায়ন ফি সাথে নবায়ন বই ফি বাবদ ছক মোতাবেক টাকা সরকারি ট্রেজারিতে চালান হিসেবে দিলে প্রতিটা সনদপত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া একই।

মূল শর্ত আসলে একটা চেকবক্স

সেবা প্রাপ্তির জন্য এই প্রক্রিয়াকে সহজীকরণ করার জন্য সবচেয়ে প্রথম যে জিনিসটি নিয়ে কাজ করতে হবে - সেটা হচ্ছে এই সেবা প্রাপ্তির জন্য যে শর্তাবলী বিদ্যমান সেগুলো মেনে আবেদন করা। ব্যাপারটা অনেকটাই বিভিন্ন সফটওয়্যারের ‘এগ্রিমেন্ট’ পড়ে ‘আমি মানছি’ অর্থাৎ ‘আই অ্যাগ্রি’ বাটনটাকে ‘প্রেস’ করার মতোই অনেকটা। অন্যান্য যেকোন সরকারি শর্তাবলীর মতো এখানে শর্তাবলী খুবই সহজ। এখানে দুটি মূল শর্ত। নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং শর্তযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্তাদি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। যেমন, কীটনাশক আমদানি করতে গেলে তার জন্য বর্ণিত আলাদা শর্তাবলী মানতে হবে।

১৫ ধাপ থেকে ১০ ধাপ

এই সেবাটি পাবার জন্য আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের অধীনস্থ আঞ্চলিক দপ্তরে নির্ধারিত আবেদনপত্র ফরম ব্যবহার করে দশটি কাগজ জমা দিতে হবে। এই কাগজগুলোকে নিয়ে আলাপ করছি সামনে। এই কাগজগুলোর মধ্যে নির্ধারিত নিবন্ধন ফি জমা দেবার জন্য ট্রেজারি চালানের মূল কপি সহ আবেদন করতে হবে। বাকি নয়টা কাগজ এবং শুধুমাত্র ট্রেজারি চালান এর ডকুমেন্টকে অনলাইনে কর্মকর্তা কর্তৃক যাচাই করে সংস্থার নথিতে উপস্থাপন করার পরে সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের অনুমতির ভিত্তিতে এই বাণিজ্যিক আমদানি নিবন্ধন প্রত্যায়ন পত্র জারি করা হয়ে থাকে। বিদ্যমান ১৫ ধাপের মধ্যে অনেকগুলো ভাগ নথিকে শুধুমাত্র স্বাক্ষর এবং অগ্রায়ন এবং নিম্নগামীকরণ ব্যাপারটা রয়েছে। এখানে শ্রেণিবিন্যাস অর্থাৎ ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগ বেশি। এতো 'হাইয়ারার্কি' দরকার নেই সামনে। যাচাইয়ের ধাপ কম। তবে প্রস্তাবিত ধাপ হচ্ছে ১০টা। এখন ১০ ধাপেই চলছে।

আগের ১৫ ধাপ
এখন ১০ ধাপ

প্রসেস ম্যাপগুলো নেয়া হয়েছে মন্ত্রিসভা পরিষদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেবা সহজিকরণ দৃষ্টান্ত থেকে। আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র (IRC)

সেবার ধারণা এবং কাগজপত্র

যে কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে তার বিবরণ:

কাগজপত্র রুল-সেট তৈরির ধারণা কি হতে পারে?
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন এই একটি অনলাইন ফর্মে সব কাগজের তথ্য থাকবে সংখ্যায় একটাই ফর্ম
২. ট্রেড লাইসেন্সের মূল/সত্যায়িত কপি ট্রেড লাইসেন্সের একটা ইউনিক সংখ্যার মাধ্যমে সেই সংস্থা থেকে যাচাই হবে সংখ্যা
৩. চেম্বার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড আ্যাসোসিয়েশনের বৈধ সদস্যতা সনদের মূল/সত্যায়িত কপি ট্রেড আ্যাসোসিয়েশনের বৈধ সদস্যতা আসবে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' উত্তরের মাধ্যমে, এপিআই দিয়ে হ্যাঁ/না যাচাই
8. ব্যাংক সচ্ছলতার সনদপত্রের মূল/সত্যায়িত কপি ব্যাংক/বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' আউটপুট হ্যাঁ/না যাচাই
৫. টিআইএন এর মূল/সত্যায়িত কপি রাজস্ব বোর্ড থেকে 'টিআইএন' সংখ্যা দিয়ে যাচাই সংখ্যা
৬. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি-১ কপি ছবি চলে আসবে জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট সংস্থা থেকে ছবি আপলোড নয়
৭. আবেদনকারীর জাতীয়তার সনদ/জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের মূল/সত্যায়িত কপি জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে হ্যাঁ অথবা না যাচাই হ্যাঁ/না যাচাই
৮. অংশীদারী মালিকানার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড অংশীদারী দলিলের মূল/সত্যায়িত কপি রেজিস্টার্ড অংশীদারী দলিল প্রদানকারী সংস্থা থেকে হ্যা অথবা না যাচাই হ্যাঁ/না যাচাই
৯. লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব আ্যাসোসিয়েশন ও সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশনের মূল/সত্যায়িত কপি মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব আ্যাসোসিয়েশন ও সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশনের জন্য 'আরজেএসসি' থেকে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' যাচাই হ্যাঁ/না যাচাই
১০. নির্ধারিত ফি জমা দেবার ট্রেজারি চালানের মূল কপি ট্রেজারি চালানের নম্বর এবং টাকার পরিমান সংখ্যা

এখানে আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে সেবা গ্রহীতা অনলাইনে ক্রম ১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন করবেন যেখানে ক্রম ২ থেকে ১০ পর্যন্ত সফটওয়্যার ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস’ (এপিআই) দিয়ে সবগুলো কাগজপত্র যাচাই হবে সিস্টেম থেকে। যাচাই না হলে আবেদনপত্র সম্পুর্ন হবে না। অর্থাৎ, ইনপুট দেবেন সেবাগ্রহীতা, অথবা উনি সাহায্যকারীর সহায়তা নেবেন। এখানে একজন সেবাগ্রহীতা, উনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট এবং টিআইএন এর সংখ্যাগুলো বসাবেন আবেদনপত্রে। এর পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্সের সাংকেতিক অথবা সনাক্তকরণ সংখ্যাটি ঢুকিয়ে দেবেন অনলাইন আবেদনপত্রে।

যাচাই হবে “হ্যাঁ” অথবা “না” এবং সংখ্যা দিয়ে

একটু চিন্তা করুন, সেবা-গ্রহীতার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর আবেদনপত্রে যোগ করে দিলেই সেবা-প্রদানকারী সংস্থার সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে তার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে সফট্ওয়ারে একটা “হ্যাঁ” অথবা “না” আউটপুট আসবে যা থেকে সেবা গ্রহীতা ব্যাংকের সচ্ছলতা বোঝা যাবে। একেকটা সেবার জন্য একেক ধরনের পরিমানের ব্যাংকে টাকা থাকলেই সেটা ‘হ্যাঁ’ বলবে সিস্টেমে। লিমিটেড কোম্পানি এর ক্ষেত্রে ‘মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন’ অথবা অন্যান্য যত ধরনের সনদপত্র প্রয়োজন সবগুলো যাচাই করা যাবে তার জন্য বরাদ্দকৃত সাংকেতিক চিহ্ন অথবা সংখ্যার মাধ্যমে।

পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ এবং ব্যবসায়িক সংস্থাকে ইউনিকভাবে শনাক্ত করার জন্য এই সংখ্যার ব্যবহার। এখানে ‘চেম্বার’ অথবা ব্যবসায় প্রতিনিধিত্বকারী ‘ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনে’র বৈধ সদস্যতা চলে আসবে সেই ট্রেড এসোসিয়েশনের সফটওয়্যার থেকে - একটা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ আউটপুট দিয়ে। আপনি এখন যেভাবে সিমকার্ড কেনেন হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে। আমরা এখানে যেটা বলতে চাচ্ছি - কোন ধরনের কাগজের স্ক্যান কপি আপলোড করার প্রয়োজন নেই কারণ সেই সব তথ্য নির্দিষ্ট সংস্থা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয়ে আসবে তার জন্য বরাদ্দকৃত সংখ্যার মাধ্যমে। আমাদের প্রয়োজন সেবা-গ্রহীতাকে ঠিকমতো চিহ্নিত করা এবং সে কারণেই এত কাগজপত্রের চাহিদা।

কাগজ মানেই জাল হবার সম্ভাবনা বেশি

যখনই কাগজপত্রের মাধ্যমে একটি জিনিস যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে তখন সেখানে জাল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়। আমরা কি জানি সেই কর্মকর্তার সিগনেচার এটাই? সেজন্য সেবা-গ্রহীতা এই কাগজপত্রের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কাগজের জায়গায় উনি সংখ্যা দিয়ে ইনপুট দেবেন। বাকিটা সিস্টেম থেকে যাচাই হয়ে আসবে। এর পাশাপাশি সেবা প্রাপ্তির জন্য যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলোর জন্য একটি চেকবক্স ভিত্তিক অঙ্গীকারনামা নেয়া যেতে পারে যেখানে শর্তগুলো লেখা থাকবে। উনি এটা মেনেছেন বলে একটা চেকমার্ক বক্স ‘টিক’ করে দিলে সেই শর্তগুলো মানার বাধ্যবাধকতা চলে আসবে। এরপরে সেবাগ্রহীতা সেই শর্তগুলোর কোন ধারা ভঙ্গ করলে তার ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

ডাটা শেয়ারিং চুক্তিনামা

এখানে যে ব্যাপারটা বলা হচ্ছে একজন সেবাগ্রহীতাকে ঠিকভাবে যাচাই এবং তার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের অনুমোদনের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সংযোগ থাকলেই চলবে। গত চার বছর ধরে এই কাজ করেছি আমি। ডাটা শেয়ারিং এর চুক্তিনামা এবং কে কোথায় এক্সেস পাবে সেটাকে নির্ধারণ করা। এখানে একজন অফিস প্রধানের অনুমোদন সবশেষে নেয়া যেতে পারে, তবে সেটা না হলেও একজন সেবাগ্রহীতাকে ঠিকভাবে ‘বাণিজ্যিক আমদানি নিবন্ধন প্রত্যায়ন’ পত্র দেয়া যেতে পারে। এটা নির্ভর করছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপরে। ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এ ব্যাপারগুলোই ঘটবে।

বিশ্বব্যাংকের ‘ডুইং বিজনেস’ ইনডেক্সে আসতে হবে উপরে

নিয়ন্ত্রণ

BIDA and Bangladesh Economic Zones Authority (BEZA) have been trying to improve and also took steps but this was not welcomed warmly by concerned ministries as they do not want to lose their control on these issues. This mindset has to change.

-- (PRI) Executive Director, Why can't Bangladesh attract private investment? Dhaka Tribune

এ জিনিসগুলো আমি দেখেছি বেশ কয়েকটা দেশে যারা বিশ্বব্যাংকের ‘ডুইং বিজনেস’ ইনডেক্সে খুব ভালো করছে। আমাদের দরকার একজন সেবাগ্রহীতাকে ঠিকমতো যাচাই করে সেই সংস্থার শর্তাবলী মেনে বাণিজ্যিক আমদানি করবেন, সেখানে মানুষের দ্বারা যাচাই এবং সংস্থাপ্রধানের অনুমোদনের জন্য মানুষের সরাসরি কোনো সংযোগের প্রয়োজন নেই। এভাবেই আস্তে আস্তে বের হয়ে যাবে মানুষ লুপ থেকে। যেভাবে মানুষ চলে গেছে বর্ডার কন্ট্রোলের ই-গেট থেকে। যখন কোনো সেবা-গ্রহীতা শর্তাবলী ভঙ্গ করবেন তখন তার ব্যাপারে সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে, এই মুহূর্তে সংস্থাপ্রধানের অনুমোদন আমাদের বিদ্যমান প্রসেসে আছে বলে এ ধরনের নিবন্ধনপত্র জারি করার পূর্ব মুহূর্তে একটি সভায় সবার সাথে বসে আলোচনা করে প্রত্যায়ন পত্র জারি করা যেতে পারে।